ব্যায়ামে আসক্তিতে বাড়তে পারে সমস্যা। ছবি—শাটারস্টক।
প্রবল শীত–গ্রীষ্ম–বর্ষায় একদিনও ব্যায়ামে ছেদ পড়ে না তাঁদের। লেটনাইট, শরীর খারাপ, বাড়ির সমস্যা—কোনও কিছুই তাঁদের কয়েক ঘণ্টার জিম ভিজিট থেকে দূরে রাখতে পারে না। অথচ এই বাতিকের ফলে তাঁদের স্বাস্থ্য ও সম্পর্ক খারাপ হয়। কাজে ব্যাঘাত ঘটে। এঁরাই হলেন ‘এক্সারসাইজ অ্যাডিক্ট’। প্রায় ১০ শতাংশ অ্যাথলিটের এই সমস্যা থাকে। থাকে কিছু কম বয়সী ছেলে–মেয়ে, মধ্যবয়সী মহিলা ও শো–বিজনেসের সঙ্গে যুক্ত মানুষজনেরও।
‘‘এঁদের অনেকেরই শরীর নিয়ে বাতিকের সঙ্গে থাকে কিছু মানসিক সমস্যা, যথাসময়ে চিকিৎসা না হলে যা থেকে বড় বিপদ হতে পারে। কাজেই কারও মধ্যে এর প্রবণতা বা রিস্ক ফ্যাক্টর থাকলে সমস্যা বাড়ার আগেই চিকিৎসা করান,’’ এমনটাই বললেন মনোচিকিৎসক শিলাদিত্য মুখোপাধ্যায়।
আসক্তির রিস্ক ফ্যাক্টর
• সব কাজ নিঁখুতভাবে করার তাগিদ
• সব সময় উঁচু লক্ষ্যমাত্রা স্থির করে চলা
• বডি ইমেজ ডিসর্ডার নামে মানসিক সমস্যা
• মোটা হওয়ার মারাত্মক ভয়
• হীনমন্যতা
• বুলিমিয়া বা অ্যানোরেক্সিয়া নার্ভোসা নামের ইটিং ডিসর্ডার।
এ সবের মধ্যে দু’একটাও যদি কারও থাকে এবং সঙ্গে থাকে অতিরিক্ত ব্যায়ামের অভ্যাস, তা হলে আসক্তির লক্ষণ দেখা দিচ্ছে কি না, সে দিকে খেয়াল রাখুন।
আসক্তির লক্ষণ
• দুর্যোগ, অনিদ্রা, শরীর খারাপ, চোট— যাই হোক না কেন, জিমে যাওয়া বন্ধ হয় না।
• দিনে একাধিক বার জিম করেন। কয়েক ঘণ্টা ধরে, শরীরে না কুলোলেও। কী ভাবে সময় বার করে কিছুটা শরীরচর্চা করে ফেলা যায়, সেই চিন্তা মাথায় ঘোরে সব সময়।
• অতিরিক্ত ব্যায়ামের ফলে কাজকর্ম বা সম্পর্ক বজায় রাখার মতো সময় থাকে না।
• খাবারের স্বাদ নয়, পুষ্টি গুণই কেবল বিচার করেন, যাতে ব্যায়ামের ধকল নেওয়া যায়।
• ব্যায়াম করে যে আনন্দ পান, তা আর কিছুতে পান না। না করতে পারলে টেনশন, দুশ্চিন্তা বাড়ে, খিদে–ঘুম কমে যায়, মাথাব্যথা হয়, দোষী মনে হয় নিজেকে।
এই লক্ষণগুলির মধ্যে এক বা একাধিক থাকার সঙ্গে যদি ওজন কমে, অপুষ্টি বা পিরিয়ডের গোলমাল হয়, ক্লান্ত–বিরক্ত লাগে, দিন–রাত খিট খিট করেন, চোট লাগে মাঝেমাঝে, ঘনিষ্ঠদের সঙ্গে দূরত্ব তৈরি হয়, বুঝতে হবে বেশি ব্যায়ামের কুফল শুরু হয়েছে।
অতিরিক্ত ব্যায়ামে বাড়তে পাড়ে ক্লান্তি।
বেশি ব্যায়ামের কুফল
• অতিরিক্ত ব্যায়ামে ক্ষরিত হয় কর্টিসোল। বাড়ে ক্লান্তি–বিরক্তি, কমে প্রতিরোধ ক্ষমতা।
• পাল্লা দিয়ে খাবার না খেলে ওজন কমে। অপুষ্টি–পিরিয়ডের গোলমাল শুরু হয়।
• প্রচুর ব্যায়ামের সঙ্গে প্রোটিন বেশি খেলে কিডনি খারাপ হতে পারে।
• বেশি দৌড়োদৌড়ি করলে পায়ের আঙুলে বা পায়ের পাতার উপরের হাড়ে স্ট্রেস ফ্র্যাকচার হতে পারে। গোড়ালি–হাঁটু–কোমর ব্যথা হতে পারে। শুরু হতে পারে আর্থ্রাইটিস।
• পেশির ভিতরের সূক্ষ্ম তন্তু ছিঁড়ে প্রবল ব্যথা হতে পারে। টেন্ডনে চোট লাগতে পারে। চোট লাগতে পারে কার্টিলেজ, লিগামেন্টে।
• কোমরের পেশি কমজোর হলে লেগ রাইজিং বা সিটআপ জাতীয় সাধারণ ব্যায়ামেও কোমর ব্যথা বেড়ে শয্যাশায়ী হতে পারেন। মাঝ বয়সের পর থেকে তো বিশেষ করে।
• হাঁপানি বা সিওপিডি–র রোগী হঠাৎ ব্যায়াম শুরু করলে বাড়তে পারে রোগের প্রকোপ।
• প্রচুর ব্যায়াম, স্ট্রেস ও কম ঘুমের হাত ধরে হৃদ্রোগের সম্ভাবনা থাকে।
আসক্তি কাটাতে
• মনোচিকিৎসকের পরামর্শ নিন। কাউন্সেলিং ও কিছুক্ষেত্রে কগনিটিভ বিহেভিয়ার থেরাপি করালে ভাল কাজ হয়।
• একদিন ব্যায়াম না করা গেলে পর দিন দ্বিগুণ করবেন না।
• ট্রেনারের পরামর্শমতো টার্গেট ও ব্যায়ামের রুটিন ঠিক করে তাতেই লেগে থাকুন। তার পাশাপাশি ভাল লাগার কিছু জায়গা খুঁজে নিন। হবি। যাতে সময় পেলে শুধু ব্যায়ামের মাধ্যমে আনন্দ খুঁজতে না হয়।
• সপ্তাহে এক দিন ছুটি নিন।
আরও পড়ুন : মা হচ্ছেন, ‘বেবি বাম্প’-এ কেমন করে হয়ে উঠবেন ফ্যাশনিস্তা?
আরও পড়ুন : উপকারের সঙ্গেই কি ক্ষতি করছে জীবাণুনাশক স্প্রে?