সেই বৈদিক যুগ থেকেই হলুদের ব্যবহার হয়ে আসছে রূপচর্চায়। এমনকি বিভিন্ন অসুখ রুখতেও হলুদের জুড়ি মেলা ভার। তবে অ্যান্টিসেপটিক ও অ্যান্টিইনফ্ল্যামেটরি প্রপার্টি থাকায় হলুদ রূপচর্চায় অব্যর্থ।
গুণ অনেক
• হলুদ অ্যান্টিইনফ্ল্যামেটরি হওয়ায় ত্বকের ক্ষত সারায়। অন্য দিকে ওপেন পোরসও বন্ধ করে। এর অ্যান্টিসেপটিক কোয়ালিটি ত্বকে ব্রণ বা তার দাগ সারায় তাড়াতাড়ি।
• বলিরেখা পড়তে বাধা দেয়। হলুদ ত্বকে প্রয়োজনীয় অ্যান্টিঅক্সিড্যান্টের জোগান দেয়। ফলে যে কোনও ক্ষতির হাত থেকে ত্বকের কোষকে রক্ষা করে। বলিরেখা, ডার্ক স্পট পড়তে দেয় না।
• ব্রণ, অ্যাকনের সমস্যাতেও হলুদ খুব উপকারী। হলুদ অ্যান্টিব্যাকটেরিয়াল হওয়ায় ব্রণ খুব তাড়াতাড়ি শুকিয়ে যায়। ব্রণ কমাতে পাতিলেবুর রস, শসার রসের সঙ্গে হলুদ বাটা মিশিয়ে ব্রণর উপরে ১০-১৫ মিনিট রেখে দিন। এতে ব্রণ শুকিয়ে যায় তাড়াতাড়ি। আবার ব্রণ সারার পরে তার দাগ তুলতে এই প্যাকের সঙ্গে নারকেল তেল বা তিল তেল মিশিয়ে নিন।
• কড়া রোদ ত্বকের জন্য একেবারেই ভাল নয়। এর থেকেই সানবার্ন, পিগমেন্টেশনের মতো নানা সমস্যা দেখা দিতে পারে। রোদের ক্ষতিকর প্রভাব কমাতেও হলুদের জুড়ি মেলা ভার। তাই রোজ রোদে বেরোতে হলে নিয়মিত হলুদ মাখতে পারেন। তার জন্য বেসনের সঙ্গে দুধ ও কাঁচা হলুদ বাটা মিশিয়ে মুখে ভাল করে লাগিয়ে নিন।
• চোখের তলায় বা চারপাশে কালি পড়লে রোজ ঘুমোতে যাওয়ার আগে চোখের চারপাশে হলুদ বেটে সেই রস লাগিয়ে শুতে যান। ঘুম থেকে উঠে ধুয়ে ফেলুন।
• ফেশিয়াল হেয়ার বা আন্ডারআর্মসের হেয়ার গ্রোথ কমাতেও অনেকেই টারমারিক অয়েল ব্যবহার করে থাকেন। এই তেলের বিকল্প হিসেবে হলুদ দিয়ে প্যাকও বানিয়ে নিতে পারেন। তার জন্য ১/৪ কাপ দুধ, আধ কাপ ময়দা, ২ টেবিল চামচ হলুদ বাটা ও ১ টেবিল চামচ সি সল্ট মিশিয়ে নিন। এ বার মুখের যেখানে রোমের রেখা, সেখানে এই প্যাক লাগিয়ে রাখুন। প্যাক শোকানোর জন্য মিনিট কুড়ি অপেক্ষা করুন। ঈষদুষ্ণ জলে আস্তে আস্তে ঘষে প্যাক তুলে ফেলুন। এতে ফেশিয়াল হেয়ারের গ্রোথ কমে যায়।
• তবে শুধু ত্বকে ব্যবহার না করে চুলে ও মাথার স্ক্যাল্পেও হলুদ লাগাতে পারেন নিয়মিত। হলুদে অ্যান্টিসেপটিক এবং অ্যান্টিইনফ্ল্যামেটরি গুণ থাকায় মাথার স্ক্যাল্পের খসখসে ভাব, চুলকানি কমিয়ে স্ক্যাল্পের স্বাস্থ্য বজায় রাখে। ফলে চুলের গ্রোথও ভাল হয়। তবে চুলে ব্যবহার করার জন্য তেলের সঙ্গে মিশিয়ে নিতে হবে হলুদ বাটার রস। নারকেল বা অলিভ অয়েলের মধ্যে অল্প হলুদ বাটার রস মিশিয়ে স্ক্যাল্পে লাগিয়ে অপেক্ষা করুন। মিনিট পনেরো পরে শ্যাম্পু করে ধুয়ে নিন।
কী ভাবে ব্যবহার করবেন?
• ত্বকের মৃতকোষ তুলে ত্বক খুব ভাল এক্সফোলিয়েট করে হলুদ। তাই হলুদ বাটার সঙ্গে অল্প গোলাপজল ও বেসন মিশিয়ে ত্বকে লাগিয়ে নিন। মিনিট কুড়ি পরে ঈষদুষ্ণ জল দিয়ে সার্কুলার মোশনে ঘষে তুলে নিন।
• হলুদ দিয়ে ফেস মাস্কও বানাতে পারেন। এর জন্য দুধ, গোলাপজল, মধু ও হলুদ বাটা দিয়ে একটা প্যাক বানান। এটি স্নান করার আগে মিনিট কুড়ি মুখে মেখে অপেক্ষা করুন। শুকিয়ে গেলে তুলে ফেলুন।
• হলুদ শুকিয়ে গুঁড়ো করে রাখতে পারেন। কোনও ময়শ্চারাইজ়ার বা গ্লিসারিনের সঙ্গে মিশিয়ে ত্বকে লাগিয়ে রাখতে পারেন।
• হলুদ নিয়মিত মুখে লাগাতে পারেন। এতে উপকার পাবেন বেশি।
• শুধু ত্বকে না লাগিয়ে কাঁচা হলুদ খেতেও পারেন। ভিতর থেকে ত্বকে পুষ্টি জোগাবে। রোজ সকালে গুড়ের সঙ্গে কাঁচা হলুদ খেতে পারেন।
• টারমারিক টি-ও শরীরের জন্য খুব ভাল। ৪ কাপ জলে ১ চা চামচ কাঁচা হলুদ দিয়ে ভাল করে ফুটিয়ে নিন। এর মধ্যে অল্প পাতিলেবুর রস ও ১ চা চামচ মধু মিশিয়ে নিন। টারমারিক টি-ও বেশ উপকারী।
যে ভাবেই হলুদ ব্যবহার করুন, এর উপকার অনেক।
মডেল: নয়নিকা সরকার; ছবি: জয়দীপ মণ্ডল; মেকআপ: উজ্জ্বল দত্ত; লোকেশন: দ্য ললিত গ্রেট ইস্টার্ন হোটেল, কলকাতা