এভারেস্ট অভিযাত্রীদের মধ্যে অনেকেই নাকি সংক্রমিত। ছবি: সংগৃহীত
চরম আবহাওয়াতেও মুক্তি নেই করোনার হাত থেকে। দলে দলে অভিযাত্রী কোভিড আক্রান্ত হচ্ছেন এভারেস্ট বেস ক্যাম্পে। এবং সংক্রমণ নিয়েই সেখান থেকে নেমে আসছেন। যদিও নেপাল সরকারের তরফে এই দাবি পুরোপুরি অস্বীকার করা হয়েছে।
গত এপ্রিল মাসে পৃথিবীর সর্বোচ্চ শৃঙ্গের বেস ক্যাম্পে অসুস্থ হয়ে পড়েন জংবু শেরপা নামের এক গাইড। কাশি-জ্বর তো ছিলই, তার সঙ্গে দেখা দেয় অন্য উপসর্গও। ১৭, ৫৯০ ফুট উচ্চতায় তাঁর শারীরিক পরিস্থিতি দ্রুত খারাপ হতে থাকে। তড়িঘড়ি তাঁকে হেলিকপ্টারে করে নীচে নামিয়ে আনা হয়। হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। দেখা যায়, তিনি কোভিড আক্রান্ত। তিনি ১ সপ্তাহ হাসপাতালে কাটান। তার পরে ৬ দিন বাড়িতে। এর পরেই আবার তাঁকে পাঠিয়ে দেওয়া হয় বেস ক্যাম্পে।
অতিমারির কারণে তাঁর মতো দক্ষ গাইডদের অনেকেই এখন কাজ করতে পারছেন না। ফলে পুরোপুরি সুস্থ হয়ে ওঠার আগেই তাঁকে পাঠিয়ে দেওয়া হয় পাহাড়ে। আবারও চরম আবহাওয়ার মধ্যে তিনি গিয়ে পৌঁছন। এবং অনেকের ধারণা, সম্পূর্ণ সুস্থ না হওয়ায় তিনি সঙ্গে করে নিয়ে যান করোনার জীবাণুও। এর পরেই ওই ১৭, ৫৯০ ফুট উচ্চতায় একের পর এক অভিযাত্রী সংক্রমিত হতে শুরু করেন। তাঁবুর মতো ছোট জায়গায় গাদাগাদি করে থাকার ফলে সংক্রমণ ছড়িয়েছে আরও দ্রুত।
যদিও নেপাল সরকার এই তথ্য অস্বীকার করেছে। তাদের মতে, এভারেস্ট বেস ক্যাম্পে কোনও কোভিড সংক্রমণের চিহ্ন নেই। কয়েক জন নিউমোনিয়ায় আক্রান্ত হয়েছেন। পাহাড়ের শুকনো বাতাসে এটা এমন কিছু নতুন নয়।
আমেরিকার সংবাদমাধ্যম নিউ ইয়র্ক টাইমস অভিযাত্রীদের নেটমাধ্যম খুঁজে এমন ৫৯ জনকে চিহ্নিত করতে পেরেছে, যাঁরা বেস ক্যাম্পেই সংক্রমিত হন। সন্দেহ, আক্রান্তের সংখ্যাটা এর চেয়ে অনেক বেশি। সংবাদমাধ্যমের তরফে শেরপাদের সঙ্গে কথা বলা হয়। নাম গোপন রেখে তাঁরা প্রত্যেকেই জানিয়েছেন, বেস ক্যাম্পে প্রতিটি অভিযাত্রী দলের ৩-৪ জন করে কোভিডে আক্রান্ত।
ইতিমধ্যেই বেশ কয়েকটি পর্বতারোহন সংস্থা এভারেস্টে তাদের অভিযান বাতিল করেছে। তার পরেও অবশ্য নেপাল সরকার সংক্রমণের কথা মানতে চায়নি।
ওয়াকিবহাল মহলের ধারণা, এভারেস্ট অভিযানের মরশুম থেকে নেপাল সরকার বিপুল অর্থ রোজগার করে। দরিদ্র দেশ হওয়ার কারণে, গোটা বছরের জন্য এই সুযোগ হারাতে চায় না তারা। তাই বেস ক্যাম্পে সংক্রমণ ছড়িয়ে পড়ার কথা তারা মানতে নারাজ।
সরকারি ভাবে না মানলেও এভারেস্ট বেস ক্যাম্প থেকে নেমে আসা অভিযাত্রীদের মধ্যে দলে দলে মানুষ কাঠমাণ্ডুর হাসপাতালে কোভিড সংক্রমণ নিয়ে ভর্তি হচ্ছেন। সংক্রমণ নিয়ে চরম আবহাওয়ায় কাটানোর ফলে তাঁদের অনেকের অবস্থাই বেশ খারাপ। ফলে বেসরকারি ভাবে হলেও বেস ক্যাম্পে সংক্রমণের বিষয়টি এখন পরিষ্কার।