প্রতীকী ছবি।
করোনাভীতি আমাদের আগের চেয়ে অনেক বেশি স্বাস্থ্য-সচেতন করেছে। ইমিউনিটির গুরুত্ব মানুষ বুঝেছেন। কিন্তু ইমিউনিটিকে কেন্দ্র করে কিছু ভ্রান্ত ধারণা এবং অভ্যেসও আমাদের মধ্যে ঢুকে পড়েছে। ‘ইমিউনিটি বেশি হলে কোভিড হবে না,’ এমন কথা শোনা যায়। তাই ইমিউনিটি বাড়ানোর দাওয়াই হিসেবে অনেকেই চিকিৎসকের পরামর্শ ছাড়া দোকান থেকে ভিটামিন কিনে খেয়েছেন। করোনার প্রকোপ এখন কমের দিকে, কিন্তু ভিটামিন খেয়ে ইমিউনিটি বাড়ানোর ঝোঁক কমেনি। এর সবচেয়ে বড় সমস্যা হল, সাধারণ মানুষ জানেন না, তাঁর শরীরে কোন ভিটামিন কতটা প্রয়োজন। সেই কারণে অতিরিক্ত ভিটামিন সেবন অন্য সমস্যা তৈরি করছে, যা হয়তো তিনি এখন বুঝতে পারছেন না। তাই চিকিৎসকের পরামর্শ ছাড়া অযথা ভিটামিন নয়। চাইলে টেস্ট করিয়ে দেখে নিন, শরীরে ভিটামিনের মাত্রা।
জেনারেল ফিজ়িশিয়ান সুবীরকুমার মণ্ডলের মতে, ‘‘বিচার বিবেচনা না করে কোনও কিছুই খাওয়া উচিত নয়। একটা ভিটামিনের মধ্যে অনেক ধরনের কম্পোনেন্ট থাকে। একটি উপাদান হয়তো আপনার শরীরের জন্য কাজে এল। কিন্তু বাকি উপাদানের অতিরিক্ত প্রবেশ সমস্যা তৈরি করতে পারে। চিকিৎসকের পরামর্শ নিন। তিনি রোগ বুঝে ওষুধ এবং সেটি কত দিন খাওয়া যাবে, তা বলে দেবেন।’’
করোনার প্রকোপ শুরুর সময় থেকে ধরলে প্রায় এক বছর হতে চলল। এ সময়ে যথেচ্ছ ভিটামিন সি, ডি এবং বাজারচলতি ইমিউনিটি বুস্টার ট্যাবলেট খেয়েছেন অনেকেই। কিন্তু একটা কথা আমরা ভুলে যাচ্ছি, কোনও ভিটামিনই একনাগাড়ে তিন মাসের বেশি খাওয়া উচিত নয়। কারও শরীরে ভিটামিনের ঘাটতি তৈরি হলে একটা কোর্স করার পরে পরীক্ষা করে দেখে নিতে হয় ঘাটতি কতটা পূরণ হয়েছে।
ভিটামিনের রকমফের
ভিটামিন দু’ধরনের— ফ্যাট সলিউবল এবং ওয়াটার সলিউবল ভিটামিন। দ্বিতীয় ভিটামিনটি অতিরিক্ত খেলে তেমন সমস্যা হয় না। কারণ অতিরিক্ত ভিটামিন প্রস্রাবের সঙ্গে বেরিয়ে যায়। সমস্যা তৈরি করে ফ্যাট সলিউবল ভিটামিন। আমাদের শরীর থেকে ফ্যাট বেরোনোর কোনও প্রক্রিয়া নেই। তাই অতিরিক্ত ফ্যাট সলিউবল ভিটামিন শরীরের বিভিন্ন অংশে জমে গিয়ে অন্যান্য রোগ ডেকে আনে।
অতিরিক্তের কুফল
শুধু করোনাপর্বে নয়, অনেক মহিলারই সন্তানধারণ বা মেনোপজ়ের পরে শরীরে ক্যালসিয়ামের প্রয়োজন হয়, এই ধারণা থেকে অনেকে ভিটামিন ডি ও ক্যালসিয়াম খেয়ে থাকেন। চিকিৎসক সুবীরকুমার মণ্ডলের কথায়, ‘‘মেনোপজ়ের পরে যেহেতু মহিলাদের মধ্যে অস্টিয়োপোরোসিসের সম্ভাবনা থাকে, তাই প্রেসক্রিপশন ছাড়া তাঁরা ভিটামিন ডি, ক্যালসিয়াম খান। শরীরে ক্যালসিয়াম অ্যাবজ়র্ব করার কাজ করে ভিটামিন ডি। অতিরিক্ত ক্যালসিয়াম রক্তে মিশতে না পেরে জমা হয়ে যায়। ক্যালসিফিকেশনের কাজটা না হলে, হিতে বিপরীত হতে পারে। অতিরিক্ত ভিটামিন ডি শরীরের জন্য টক্সিক।’’ তিনি জোর দিলেন বিএমডি (বোন মিনারেল ডেনসিটি) টেস্টের উপরে। রক্তে ক্যালসিয়াম থাকলেই যে সেটা হাড়ে পৌঁছবে, তা নয়। এই পরীক্ষায় ধরা পড়বে হাড়ে ক্যালসিয়ামের মাত্রা। তিন-চার বছর অন্তর এই টেস্ট একবার করিয়ে নিলে ভাল।
ভিটামিন সি-এরও কুফল আছে। এতে প্রচুর পরিমাণে পটাশিয়াম থাকে, যা কিডনির সমস্যা ডেকে আনতে পারে বলে জানালেন
ডা. মণ্ডল।
ভ্রান্ত ধারণা
ইমিউনিটি বাড়ানোর জন্য আদা, কাঁচা হলুদ খেয়ে থাকেন অনেকে। আমাদের শরীরের জন্য ৫ গ্রাম আদা এবং ৩ গ্রাম হলুদের বেশি প্রয়োজন নেই, যা রোজকার রান্না থেকেই পেয়ে থাকি। আলাদা করে আদা-হলুদ না খাওয়ার পরামর্শ দিচ্ছেন চিকিৎসকেরা। অতিরিক্ত আদা বুক জ্বালা, অ্যাসিডের কারণ হতে পারে। হলুদে প্রচুর পরিমাণে অ্যান্টিঅক্সিড্যান্টস থাকে। কিন্তু হলুদের মধ্যে এমন উপাদান আছে, যা শরীরকে আয়রন অ্যাবজ়র্ব করতে বাধা দেয়। অনেকে সকালে গরম জলে পাতিলেবুর রস আর মধু মিশিয়ে খান। ডা. মণ্ডল বলছেন, ‘‘মধু গরম দলে দ্রাব্য নয়। ওই ভাবে খেলে কোনও উপকার হয় না।’’
তাই চিকিৎসকের পরামর্শ নিয়ে শরীরের চাহিদা বুঝে ভিটামিন খেতে হবে। সাপ্লিমেন্টস না নিয়ে রোজকার খাবারের মধ্য দিয়ে ভিটামিনের চাহিদা মেটানোই সবচেয়ে ভাল উপায়।