সঙ্কট: ফুটপাতের এই কড়া চা এড়িয়ে চলারই নিদান দিচ্ছেন বিশেষজ্ঞেরা। নিজস্ব চিত্র
চায়ের কাপে তুফান তোলা আমবাঙালি এ বার সাবধান! ফুটপাতের বারবার ফোটানো কড়া চা এড়িয়ে চলার পরামর্শ দিচ্ছেন বিশেষজ্ঞেরা। নইলে লিভারের সঙ্কট। সম্প্রতি এই নিয়ে তোলপাড় বিধাননগরে খাস পুরভবনের ক্যান্টিনেই। স্বাস্থ্য দফতরের কর্তাদের নিদান, তাজা চা দিতে পারলে দেবেন! নইলে বার বার ফোটানো চা দিতে হবে না! ক্যান্টিনে কেমন চা দিতে হবে, তা বুঝিয়ে কার্যত সতর্কতা বিধিই জারি করা হয়েছে।
সেই কবে আচার্য প্রফুল্লচন্দ্র রায় বলেছিলেন বটে, চা পান না বিষ পান! কিন্তু কালে-কালে ওই চা হজম করেই তো বাঙালি নীলকণ্ঠ। চিকিৎসকদের কথা শুনে সুতরাং হতবাক কোনও কোনও চা-বিক্রেতা। অফিসপাড়ার চা-রসিকেরাও আকাশ থেকে পড়ছেন! ‘‘লায়েক হওয়ারও আগে থেকে আড্ডার অনুপানে ফুটপাতের চা খেয়ে অভ্যেস! কত কাপ তার ইয়ত্তা নেই! সেই চায়েও দোষ, তা আবার হয় না কী!’’
হয় বৈ কী! ‘‘চা যেন কখনওই ফোটে না এক বারের বেশি!’’— জোর গলায় হাঁকছেন বিধাননগর পুরনিগমের মেয়র পারিষদ প্রণয় রায়। সেখানে স্বাস্থ্য সংক্রান্ত একটি সচেতনতা শিবিরেই সম্প্রতি ফুড সেফটি অফিসার বার বার ফোটানো চায়ের অপকারিতা ব্যাখ্যা করেছেন। মেডিক্যাল কলেজের মেডিসিন-এর চিকিৎসক-শিক্ষক রাজা ভট্টাচার্যও বলছেন, ‘‘চায়ের মধ্যে ক্যাফেইন এবং ট্যানিক অ্যাসিড থাকে। চা পাতা বারবার ফোটানো হলে সেগুলির মাত্রা বাড়ে। হজমের গোলমাল, বমিভাব, মাথাব্যথা তাতে। ক্যাফেইনে হৃৎস্পন্দনের মাত্রাও বেড়ে যায়। তাতে আখেরে ক্লান্তি বাড়ে। রাতের ঘুম মাটি।’’ একমত এসএসকেএম হাসপাতালের গ্যাস্ট্রোএন্টেরোলজিস্ট অভিজিৎ চৌধুরীও। তিনি বলছেন, ‘‘একাধিক বার ফোটানো চা নিঃসন্দেহে অস্বাস্থ্যকর। চায়ের মধ্যে কিছু উপকারী উপাদান থাকে। বারবার ফোটানো হলে সেগুলি নষ্ট তো হয় বটেই, উল্টে শরীরেরও ক্ষতি।’’
কলকাতার ফুটপাতে রাবণের চিতার মতো অবশ্য দিনভর সসপ্যানে ফুটছে চা পাতা। কখনও দুধ বা জল ঢালা হচ্ছে দরকার মতো। কিন্তু চা-পাতার তলানিটা পড়ে থাকাই রীতি। এখন শহরে বেশ কয়েকটি খানদানি চা বুটিকের উদ্ভব হয়েছে। চা-পাতার জাতবিচার থেকে কোন লিকার কত ক্ষণ ভিজবে, এমনকি চায়ের কাপের তাপমাত্রা নিয়েও তাঁদের অনন্ত খুঁতখুঁতেপনা। ইকো পার্কের একটি চা-বুটিক কর্ত্রী মিতালি মিত্রের মতে, ‘‘বার বার ফোটালে চায়ের স্বাদেরও দফা রফা।’’ ফুটপাতের চায়ের চরিত্র তবু যে কে সেই!
কলেজ স্ট্রিটের একটি চায়ের দোকানে রোজকার রসিকতা, ‘আজ ক’ফুট চা?’ কেউ কেউ হাল্কা চুমুক দিয়েই ধরে ফেলবেন ক’বার ফোটানো চায়ের পাতা মিশে আছে ভাঁড় বা গেলাসের গরম তরলে। শহরের নামী ধাবায় চায়ে গরম মশলা থেকে জাফরান অবধি পড়ার কথা শোনা যায়, কিন্তু দিনের ব্যস্ত সময়ে বার বার চা-পাতা ফোটানোর সংস্কৃতি বহাল তবিয়তে। বার বার ফোটানো ‘গরম জলে’র স্বাদ নিয়ে দৈবাৎ কেউ অনুযোগ করেন। শুনে খিদিরপুরের এক চা বিক্রেতার মুখ তিতকুটে, ‘‘তাড়াতাড়ি পেতে গেলে এমনই হবে!’’ তবে বিধাননগর পুরনিগমের চা নিয়ে সচেতনতা স্বাগত জানাচ্ছেন চা-বিশেষজ্ঞেরা। তাঁদের দাবি, পুর ক্যান্টিনের পথ ধরেই শহর জুড়ে চায়ের সংস্কার শুরু হোক এ বার।