মহারাষ্ট্রের বারামতির ৬৮ বছরের লতার গল্প এখন কারও অজানা নয়। সংসার চালাতে, স্বামীর চিকিৎসার খরচ জোগাতে ম্যারাথনে দৌড়ন প্রৌঢ়া। পুরনো শাড়ি হাঁটুর উপরে মালকোঁচা দিয়ে খালি পায়ে দৌড়ে চলেছেন তিনি। ফিটনেসে এতটুকু ঘাটতি নেই। ম্যারাথনে দৌড়নোর সুবাদেই নিজের ফিটনেস ধরে রেখেছেন ৬৮ বছরের এই বৃদ্ধা।
লতার মতো আপনিও কিন্তু নিজেকে সচল রাখতে পারেন। দৌড়তে না চাইলে হাঁটা, সাঁতার... অন্যান্য শারীরচর্চাও বেছে নিতে পারেন রোজকার জীবনে। অবসর নেওয়ার পরে হাতে সময়ও থাকে অনেক। তার থেকে কিছুটা সময় শারীরচর্চায় ব্যয় করলে, সময়ও কাটবে। আবার শরীরও সুস্থ থাকবে।
নিয়ম মেনে কিছু ব্যায়াম বা যোগব্যায়াম করলেই ফিট থাকা যায়। নিজেকে জড়িয়ে রাখুন নানা ব্যস্ততার মধ্যে। ব্যায়াম করলে এক দিকে শরীর ভাল থাকে, তেমনই মনও কিন্তু সজীব হয়ে ওঠে। অন্যান্য কাজেও অনেক এনার্জি পাবেন।
অনেকেই মনে করেন, সকাল-বিকেল নিয়ম করে হাঁটা বা জগিংয়ের মধ্যে একঘেয়েমি রয়েছে। ফিটনেস বিশেষজ্ঞ চিন্ময় রায় অবশ্য বলছিলেন, ‘‘অবসরের পর মন একেবারেই ভেঙে পড়ে। কিছুই করতে ইচ্ছে করে না তখন। কিন্তু প্রথম দিকেই যদি আমরা এই মানসিক চাপটা কাটিয়ে উঠতে পারি, তবে জীবনটাও সুন্দর করে বাঁচা যায়। তার জন্য ব্যায়াম জরুরি। যদি একেঘেয়ে ব্যায়াম করতে ভাল না লাগে, তবে অন্য রকম কিছু ব্যায়াম বেছে নিতেই পারেন।’’ উদাহরণস্বরূপ চিন্ময় বলছিলেন, ‘‘কোনও গ্রুপে যোগ দেওয়া যেতে পারে। আমি দেখেছি, রবীন্দ্র সরোবরের একদল বৃদ্ধ একসঙ্গে যোগব্যায়াম করেন, হাঁটেন, জগিং করেন। একজন ট্রেনারও আসেন মাঝেমধ্যে। কেউ কেউ আবার লাফিং ক্লাবেও যোগ দেন। এতে শারীরচর্চা যেমন হয়, তেমনই আবার আড্ডাও দেওয়া যায়। নতুন বন্ধু তৈরি হয়। সব মিলিয়ে মন ভাল থাকে।’’
এর বাইরেও চিন্ময় বয়স্কদের জিমে যাওয়ার পরামর্শ দিয়েছেন। তাঁর মতে, ‘‘বয়সকালে হাড় একেবারে দুর্বল হয়ে পড়ে। দ্রুত হাড়ের ক্ষয় হতে শুরু করে। যে কারণে হাড়ের শক্তি বাড়ানোর জন্য নিয়ম মেনে কিছু ব্যায়াম করা যেতেই পারে। জিমে গিয়ে প্রশিক্ষকের পরামর্শ মেনে ব্যায়াম করলে বয়সজনিত অনেক রোগ আটকানো সম্ভব। প্রয়োজনে চিকিৎসকের পরামর্শ মেনেও ব্যায়াম করতে পারেন।’’
হাড়ের জোর বাড়াতে কিছু বিশেষ ব্যায়ামের কথা বলেন চিন্ময়
• সিটেট লেগ এক্সটেনশন: এতে হাঁটুর জোর বাড়ে।
• সিঙ্গল লেগ ব্রিজ: এক পায়ের উপরেই করা যায়। এতে থাইয়ের হ্যামস্ট্রিং পেশির জোর বাড়ে।
• রেজ়িস্ট্যান্স ব্যান্ড: এই ব্যান্ড পরে ‘সাইড ওয়াক’ করলে পায়ের জোর বাড়ে। হিপের পেশির জোরও বাড়ে।
• এক পায়ে দাঁড়ানো: বয়সকালে শরীরের ভারসাম্য কমে আসে। এই ব্যায়ামে শরীরের ভারসাম্য বাড়ে।
• প্ল্যাঙ্ক, সাইড প্ল্যাঙ্ক, বার্ড ডগ: কোমরের জোর বাড়াতে এই ব্যায়ামও বেশ কার্যকর।
সাঁতার
নিয়মিত সাঁতার কাটতে পারেন। সাঁতার পুরো শরীরের ফিটনেস বাড়াতে সাহায্য করে। সবচেয়ে বড় কথা ব্যায়াম, যোগব্যায়াম বা সাঁতারের মাধ্যমে আপনার শরীরের মেদ বাড়ে না। বয়সকালে ওজন নিয়ন্ত্রণে রাখাটাও জরুরি।
খেলাধুলা
অনেকেই খেলাধুলা করতে পছন্দ করেন। খেলাধুলার মাধ্যমে ফিটনেস বাড়ে। তবে বয়স হলে কী ধরনের খেলা আপনার জন্য ঠিক, তা বেছে নিতে হবে। ফুটবল, রাগবি, যে খেলা মূলত ‘বডি কনট্যাক্ট গেম’, তাতে চোট লাগার সম্ভাবনা বেশি। তবে ক্রিকেট, টেবল টেনিস, ব্যাডমিন্টন, এই ধরনের খেলা অনেক বেশি ঝুঁকিহীন। চোট লাগার সম্ভাবনা কম।
হাঁটা
ভোর এবং বিকেলবেলা নিয়মিত হাঁটুন। শরীর ঝরঝরে থাকবে। মনও ভাল থাকবে। কর্মক্ষমতা বাড়বে।
দৌড়
দৌড়নোটাও কিন্তু ফিটনেস বাড়াতে বড় ভূমিকা নেয়। খুব জোরে না দৌড়লেও রোজ একটু একটু করে দৌড় শুরু করতে পারেন। একটানা বেশিক্ষণ না দৌড়ে মাঝে বিরতি নিয়ে নিন।
খাবারে নজর
শুধু ব্যায়াম করলেই ফিটনেস বাড়ে না। নজর দিতে হবে খাবারেও। বয়স বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে আমাদের শরীরে অনেক ধরনের রোগ বাসা বাঁধে। ডায়াবিটিস, উচ্চ রক্তচাপ, কোলেস্টেরল, হৃদযন্ত্র ও ফুসফুসের সমস্যা ইত্যাদি। ব্যায়ামের সঙ্গে তাই খাবারের উপরে নিয়ন্ত্রণও বাধ্যতামূলক। তেল-মশলাযুক্ত খাবার কমাতে হবে। বাইরের দোকান বা রেস্তরাঁর খাবার না খাওয়াই ভাল। তবে এক-আধদিন নিয়ম ভাঙতেই পারেন। একটা বয়সের পর রেড মিট, অতিরিক্ত তেলযুক্ত মাছ, ডিমের কুসুম বর্জন করুন। বরং ছোট মাছ, বেশি করে আনাজপাতি, ফল খান।
ব্যায়ামের পাশাপাশি খাবারেও নজর দিন। তাতে ফিট থাকবেন, পাবেন সুস্থ জীবন।
তথ্য সহায়তা: ফিটনেস এক্সপার্ট চিন্ময় রায়