‘সেন্টার ফর স্টাডিজ ইন সোশ্যাল সায়েন্সেস’-এ অধ্যাপক দীপেশ চক্রবর্তী। নিজস্ব চিত্র।
সুন্দরবন অঞ্চলের বহু মহিলাকে যে বন্ধ্যাত্বকরণের অস্ত্রোপচার করাতে হচ্ছে, তার সঙ্গে জলবায়ু পরিবর্তনের যোগ রয়েছে। এ কথা কত জন জানেন? আর জানলেও কি তা নিয়ে ভাবেন?
জোশীমঠ, নৈনিতালের যে হাল, তা কি মিলিয়ে দেয় না ইতিহাসবোধ আর বিজ্ঞান ভাবনাকে?
বৃহস্পতিবার এমনই কিছু প্রশ্ন তুলে দিল ইতিহাসবিদ দীপেশ চক্রবর্তীর বক্তৃতা। বিজ্ঞানচর্চার সঙ্গে সাধারণত দূরত্ব বজায় রেখেই চলে সমাজবিজ্ঞান, কলাবিদ্যা। তেমনটাই দিব্যি চলছিল। কিন্তু কালচক্র যেমন ঘুরছে, তেমনই ফিরে আসছে বিদ্যাচর্চার কিছু সূত্র। যে সুতোয় দর্শন, ইতিহাস, অঙ্ক, ভূতত্ত্ববিদ্যা— সব বাঁধা পড়েছে। বৃহস্পতিবার সে সূত্রের কথাই যেন তুলে ধরলেন দীপেশ।
উপলক্ষ কলকাতার ‘সেন্টার ফর স্টাডিজ ইন সোশ্যাল সায়েন্সেস’-এর ৫০ বছর পূর্তি। সুবর্ণ জয়ন্তী বক্তৃতার বিষয় ছিল ‘দ্য প্ল্যানেটারি ফিউচার্স অব দ্য হিউম্যান সায়েন্সেস’। বক্তা আমেরিকার শিকাগো বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক দীপেশবাবু। সেখানেই উঠে এল ইতিহাসবোধের নব আঙ্গিকের প্রসঙ্গ। তিনি জানালেন, মানবসমাজ নিয়ে যে ইতিহাসচর্চা এত বছর ধরে হয়ে এসেছে, তার বাইরে বেরিয়ে আরও গভীর ভাবে ভাবার সময় এসেছে। সে কাজেই নিজেকে নিযুক্ত করেছেন ইতিহাসবিদ। তাঁর বক্তব্য, গ্রহজাগতিক পরিমণ্ডলের যে ইতিহাস আছে, তা উপেক্ষা করলে অনেক কিছু বাদ পড়ে যায়। কারণ, মানুষ এ জগতে বসবাস শুরু করার অনেক আগে থেকে জীবজগৎ রয়েছে। তার ইতিহাসও রয়েছে। যা হয়তো বিজ্ঞানের বিভিন্ন শাখায় চর্চা করা হয়। কিন্তু সেই ইতিহাসের সঙ্গে যোগ রয়েছে জনসাধারণের জীবন ও সমাজের। জলবায়ুর যে পরিবর্তন আসছে বিভিন্ন অঞ্চলে, তার উপর নির্ভর করে জীবজগতের রোজনামচা। সুন্দরবনের বহু নারী যেমন একটি বিশেষ ছত্রাকের সংক্রমণে ভুগছেন। যার কারণে তাঁদের অনেককেই বন্ধ্যাত্বকরণের অস্ত্রোপচার করাতে হচ্ছে। তেমনই আরও অনেক অসুখের কারণ লুকিয়ে আছে সেই গ্রহজাগতিক ইতিহাসে। দীপেশবাবু বলেন, ‘‘সেই ইতিহাসকেও বোঝার চেষ্টা করছি।’’
ইতিহাসবিদের বক্তব্য, গ্রহজাগতিক পরিমণ্ডলের যে ইতিহাস আছে, তা উপেক্ষা করলে অনেক কিছু বাদ পড়ে যায়। নিজস্ব চিত্র।
‘সেন্টার ফর স্টাডিজ ইন সোশ্যাল সায়েন্সেস’ গত অর্ধ শতক ধরে সমাজবিজ্ঞান সংক্রান্ত নানা গবেষণার কাজে নিযুক্ত হয়েছে। বিশেষ দিনে সেখানেই যেন গবেষণায় নতুন অধ্যায় যোগ করার বার্তা দিল ইতিহাসবিদের বক্তৃতা। বৃহস্পতিবারের অনুষ্ঠানে সেন্টারের বর্তমান অধিকর্তা রোসিনকা চৌধুরীর সঙ্গে উপস্থিত ছিলেন প্রাক্তন অধিকর্তা অমিয় বাগচী, সুগত মারজিৎ ও তপতী গুহঠাকুরতা। দর্শকাসনে অধ্যাপক গায়ত্রী চক্রবর্তী স্পিভাকের সঙ্গে উপস্থিত ছিলেন শহরের বহু অধ্যাপক। সকলের উপস্থিতিতেই দীপেশবাবু বর্তমানের কিছু গুরুত্বপূর্ণ প্রসঙ্গ তোলেন গ্রহজাগতিক ইতিহাসচর্চার ভাবনা নিয়ে। সেখানেই একে একে উঠে আসে সুন্দরবনের নারীদের স্বাস্থ্য, জোশীমঠের ভবিষ্যৎ, সাধারণ নগরজীবনের রোজনামচার খুঁটিনাটিও। ইতিহাসবিদের কথা মনে করায়, জীবনবিজ্ঞান, ভূতত্ত্ববিদ্যার সঙ্গে যোগ রয়েছে সবের। জলবায়ুর পরিস্থিতি ভাবনার পরিসরের বাইরে রাখলে চলবে না। কারণ, বাস্তবে ব্রহ্মাণ্ডের সবটাই একে অপরের সঙ্গে কোনও না কোনও ভাবে যুক্ত। সমাজবিজ্ঞানের চর্চার পরিধির বাইরে নয়।