শর্করা দূরে সরিয়ে রাখতে গিয়ে ভাতের পরিমাণ, চিনি, আলু বা কন্দজাতীয় খাবার যেমন কমে যায়, তেমনই কিছু ফলও বাদ পড়ে যায় খাদ্যতালিকা থেকে, ব্লাড সুগারের কারণে। দুপুর বা রাতের খাবারে মাছ, মাংস, ডাল, আনাজে পেট ভরলেও সমস্যা হয় সকাল ও বিকেলের জলখাবার নিয়ে। রোজ একই ব্রেকফাস্ট কার আর ভাল লাগে। তবে ডায়াবিটিস হলেই আগে কী কী বাদ দেবেন ভাববেন না। বরং ভাবুন, কী কী খেতে পারবেন। সেই তালিকা আগে তৈরি করে নিন। তার পরে তা দিয়েই তৈরি করে নিতে পারেন রকমারি টিফিন।
প্রাতরাশে কী খাবেন?
রোগীর সুগার কতটা বেশি, ইনসুলিন নেন কি না, বয়স কত, অন্য কোনও অসুখ আছে কি না... এই সব কিছু দেখে তবে রোগীর ডায়েট তৈরি করা হয়। তবে ডায়াবেটিক রোগীরা সাধারণত কিছু ধরনের খাবার খেতেই পারেন। যেমন পুষ্টিবিদ সুবর্ণা রায়চৌধুরী বললেন, ‘‘সুজি, ডালিয়া, ওটস জাতীয় খাবার খেতে পারবেন। ডালিয়া দিয়ে খিচুড়ি, ডালিয়ার রুটি খাওয়া যায়। ওটস পরিজ, ওটসের প্যানকেক, সুজির দোসা বা উপমা খেতে পারেন। তবে অনেকে কর্নফ্লেকস খান, সেটি কিন্তু খাবেন না। কর্নফ্লেকসের গ্লাইসেমিক ইনডেক্স হাই। তার চেয়ে বরং দুটো হাতে গড়া রুটি কিংবা ব্রাউন ব্রেড খেতে পারেন। রাগি বা বাজরার রুটি খেতে পারেন। এতে ফাইবারও পাবেন বেশি।’’
ডিমের সাদা অংশ দিয়ে অমলেটও তৈরি করা যায়। তার মধ্যে একটু পালং শাক কুচিয়ে দিয়ে দিন, স্বাদ বাড়বে। সঙ্গে একটি ব্রাউন ব্রেড টোস্ট আর শসার কয়েকটি টুকরো। এতে পেটও ভরবে। সপ্তাহে তিন দিন গোটা ডিমও খেতে পারেন বলে জানালেন সুবর্ণা। ছাতু খেতে পারেন সকালের দিকে। ডায়াটিশিয়ান কোয়েল পালচৌধুরী বললেন, ‘‘সকালে একটু ছাতু খেতে পারেন। পেট ভরবে। স্প্রাউট স্যালাড খাওয়া যায়। ছোলা ভিজে কাপড়ে মুড়ে রেখে দিন। অঙ্কুরোদ্গম হলে পরের দিন খান। এটিও খুব ভাল। তবে ডায়াবেটিক রোগীরা দিনে দু’ঘণ্টা অন্তর অল্প-অল্প করে খেলেই
ভাল। এতে গ্লুকোজ়ের মাত্রা নিয়ন্ত্রণ করা সহজ হয়।’’
স্ন্যাকস
বিকেলে বা সন্ধের সময়েও অল্প খিদে পায়। সে সময়ে ভারী খাবার খাবেন না। একটু ছানা খেতে পারেন বা পেঁয়াজ, শসা, নুন, লেবু, চাট মশলা দিয়ে ছোলা মাখা খেতে পারেন। মুড়ি খেতে পারেন একমুঠো। চিঁড়ে বা পোহা খাবেন না। তার জায়গায় হালকা ভেজিটেবল সুপ খেতে পারেন। অল্প চিকেন কুচি, পেঁয়াজ, রসুন দিয়েও সুপ তৈরি করে নিতে পারেন। মুগের ডাল বা বেসনের ছিল্লা তৈরি করে খাওয়া যায়। ধোকলা খেতে পারেন। তবে ধোকলার সঙ্গে মিষ্টি চাটনি খাবেন না। বিকেলে নুন, লেবু, কাঁচা পেঁয়াজ ছাতু মেখে খেতে পারেন। কিন্তু ছাতু ভারী, তাই হজম হতে দেরি হয়।
কী ধরনের ফল খাওয়া যায়?
সুবর্ণা রায়চৌধুরী বললেন, ‘‘এখন ফলের ব্যাপারে অতটা বিধিনিষেধ করা হয় না। কোনও ফলই একেবারে খাবেন না, তা নয়। বরং পরিমাণ নিয়ন্ত্রণ করা হয়। আমের মরসুমে একটু আমও খাবেন। ধরুন, সপ্তাহে দু’দিন এক ফালি করে আম খেলেন। তবে অবশ্যই কার ব্লাডসুগার কতটা, তার উপরে নির্ভর করবে এই পরিমাণ। ব্যক্তিবিশেষে মাপ বদলে যাবে। আপেল, পেয়ারা খেতে পারেন। মুসাম্বি, কমলালেবু, কালোজাম, জামরুল জাতীয় ফল খেতে পারেন। তবে যা-ই খাবেন, চিকিৎসক ও ডায়াটিশিয়ানের পরামর্শ নিয়ে খেতে হবে।’’
এর সঙ্গে দরকার ব্যায়াম। রোজ হাঁটাচলা করে শরীর সচল রাখতে হবে। হাঁটুর সমস্যা বা অন্য কোনও কারণে বেশি হাঁটা সম্ভব না হলে ডায়েটের দিকে নজর দিন। রোজ নির্দিষ্ট সময়ে খান। ডিনারও ন’টার মধ্যে শেষ করে ফেলতে পারলে ভাল। ডিনার সেরে একটু হাঁটাচলা করে ঘুমোতে যান।