তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্রের মতো বড় ক্ষেত্রে ‘বর্জ্য উত্তাপ’ নির্গমন আটকাতে ওই স্ফটিক ব্যবহার করা যেতে পারে বলে মনে করা হচ্ছে। ফাইল ছবি
একের ‘অক্ষমতা’-ও অন্যের কাজের সহায়ক হতে পারে বলে মনে করছেন পদার্থবিজ্ঞানের কিছু গবেষক। তাঁরা জানাচ্ছেন, যে-বস্তু তাপ পরিবহণ প্রায় করেই না, তাকে ব্যবহার করে তাপশক্তি, বিশেষত ‘বর্জ্য তাপ’-কে নানা কাজে লাগানো যেতে পারে। তাপ পরিবহণে অক্ষম বস্তু যদি বর্জ্য তাপ থেকে বিদ্যুৎ উৎপাদনের সহায়ক হয়, তা হলে তো সোনায় সোহাগা!
এ ক্ষেত্রে বস্তুটি স্ফটিক। রাসায়নিক বিন্যাস অনুযায়ী স্ফটিকের তাপ পরিবহণ ক্ষমতা খুব বেশি হওয়ার কথা, কিন্তু সব ক্ষেত্রে তা সত্যি নয়। সম্প্রতি ওই গবেষকেরা প্রমাণ করে দিয়েছেন, ‘হ্যালাইড পেরোভস্কাইট’ নামক স্ফটিকের তাপ পরিবহণ ক্ষমতা খুবই কম। কাচ যেমন তাপ প্রায় পরিবহণ করতেই পারে না, এই স্ফটিকের ক্ষমতা সেই রকম।
হ্যালাইড পেরোভস্কাইটের এই ‘অক্ষমতা’র ফলে মোবাইল ফোন, ফ্রিজ, ল্যাপটপ, এমনকি তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্রের মতো বড় ক্ষেত্রে ‘বর্জ্য উত্তাপ’ নির্গমন আটকাতে ওই স্ফটিক ব্যবহার করা যেতে পারে বলে মনে করা হচ্ছে। শুধু তা-ই নয়, ওই বর্জ্য উত্তাপের সাহায্যে বিদ্যুৎও উৎপাদন করা যেতে পারে। ভাটনগর সম্মানপ্রাপ্ত বিজ্ঞানী কণিষ্ক বিশ্বাসের তত্ত্বাবধানে বেঙ্গালুরুর ‘জওহরলাল নেহরু সেন্টার ফর অ্যাডভান্সড সায়েন্টিফিক রিসার্চ’ বা জেএনসিএএসআর-এর গবেষকেরা এটা প্রমাণ করেছেন বলে তাঁদের গবেষণাপত্রে দাবি করা হয়েছে। সেই গবেষণাপত্র সম্প্রতি প্রকাশিত হয়েছে নেচার কমিউনিকেশনস জার্নালে।
ওই গবেষণাপত্রের ‘ফার্স্ট অথর’ বা প্রথম লেখক পরিবেশ আচার্য। মেদিনীপুরের মহিষাদলের ছেলে পরিবেশ প্রথমে যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয় এবং পরে খড়গপুর আইআইটিতে রসায়ন নিয়ে পড়াশোনা করেছেন। এখন কণিষ্কের অধীনে পিএইচ ডি করছেন তিনি।
গবেষকেরা দেখিয়েছেন, তাপ পরিবহণে ওই স্ফটিকের দক্ষতা কাচের মতো যৎসামান্য। অথচ স্ফটিকের রাসায়নিক সজ্জা এমনই যে, তার তাপ-সুপরিবাহী হওয়ার কথা। কিন্তু আদতে তা নয়। কণিষ্কের ব্যাখ্যা, ‘‘হ্যালাইড পেরোভস্কাইট স্ফটিকের রাসায়নিক বিন্যাস এক ঝলকে এতটাই সুসজ্জিত লাগে যে, একে মিলিটারি লেয়ারের মতো মনে হয়। মার্চ পাস্ট করার সময় মিলিটারি জওয়ানেরা যেমন ঢেউয়ের মতো চলে যান, ততটাই সুসজ্জিত ভাবে এই স্ফটিকে তাপ পরিবাহিত হওয়ার কথা। কিন্তু সবিস্তার গবেষণায় দেখা গিয়েছে, আপাতদৃষ্টিতে সুসজ্জিত মনে হলেও আসলে এই স্ফটিকের বিন্যাসের মধ্যে রয়েছে বিচ্যুতি।’’ তার ফলে পরিবাহিত হওয়ার সময় তাপ ধাক্কা খাচ্ছে, যথাযথ ভাবে পরিবাহিত হতে পারছে না বলে ওই গবেষকদের পর্যবেক্ষণ। দেখা গিয়েছে, কঠিন পদার্থের মধ্যে যে-‘ফোনোন’ তাপ পরিবহণ করে, হ্যালাইড পেরোভস্কাইট স্ফটিকে তা খুব দুর্বল।
কণিষ্ক জানাচ্ছেন, বৈদ্যুতিক যন্ত্রপাতি, গাড়িতে যে-বিদ্যুৎ অথবা জ্বালানি ব্যবহার করা হয়, তার ৭০ শতাংশই বর্জ্য হিসাবে বেরিয়ে যায়। এই ধরনের বর্জ্য তাপকে ধরে রেখে অন্য কাজে লাগাতে সাহায্য করবে এই স্ফটিক। ব্যবহৃত জিনিসের সঙ্গে এই স্ফটিককে যুক্ত করলে বর্জ্য উত্তাপ অনর্থক বেরিয়ে যেতে পারবে না। তাকে কাজে লাগানো যাবে।