প্রতীকী ছবি। ছবি: সংগৃহিত
করোনার দ্বিতীয় ঢেউ লক্ষ লক্ষ ভারতীয়দের যেমন ক্ষতি করেছে, তেমনই দেশের স্বাস্থ্যব্যবস্থা নাড়িয়ে দিয়েছে। কোভিড-রোগীদের সংখ্যা ধীরে ধীরে কম হওয়ায় অনেক জায়গায় লকডাউন পরিস্থিতি কিছুটা হলেও শিথিল করা হয়েছে। কিন্তু কোভিডের অনেক নতুন উপসর্গ নিয়ে এখনও যথেষ্ট চিন্তায় রয়েছেন চিকিৎসকেরা। এগুলো সবই করোনাভাইরাসের ডেল্টার প্রজাতির সঙ্গে যুক্ত।
ডেল্টার নামকরণ
সম্প্রতি বি.১.৬১৭.২ প্রজাতির নাম ‘ডেল্টা’ ঘোষণা করেছে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা। ভারতীয় প্রজাতি বা ‘ডাব্ল মিউট্যান্ট’ প্রজাতি নামে যা আগে প্রচলিত ছিল, সেই প্রজাতির নামকরণ করা হয় বিভ্রান্তি এড়াতে। তেমনই ব্রিটেনের কেন্ট প্রজাতির নাম হয় আলফা, দক্ষিণ আফ্রিকার প্রজাতির বিটা এবং ব্রাজিলের গামা।
দ্বিতীয় ঢেউ
যদিও বৈজ্ঞানিক কোনও প্রমাণ নেই, তবে চিকিৎসকেরা মনে করছেন, দ্বিতীয় ঢেউয়ের বাড়াবাড়ির পিছনে দায়ী এই ডেল্টা প্রজাতিই। পাশাপাশি কোভিড-বিধি ঠিক করে না মানা এবং একসঙ্গে সব জায়গায় আনলক প্রক্রিয়া শুরু করে দেওয়াও সংক্রমণ বাড়ার অন্যতম কারণ। তবে ডেল্টা প্রজাতির ফলে অনেক নতুন উপসর্গ দেখা গিয়েছে এ বছর। যার অনেকগুলোই যথেষ্ট মারাত্মক। যার ফলে বহু মানুষকে হাসপাতালে ভর্তিও করতে হয়েছে। এমনকি, আইসিইউ’তেও থাকতে হয়েছে।
কেন ডেল্টা মারাত্মক
এই নতুন প্রজাতি অনেক বেশি সংক্রামক। খুব দ্রুত স্পাইক প্রোটিনের আকার বদলে ফেলে মানুষের শরীরের বিভিন্ন কোষ আক্রমণ করতে পারে। এবং ততটাই তাড়াতাড়ি মানুষের শরীরের কোষগুলোর বাঁধন দুর্বল করে দিয়ে দেহের বিভিন্ন অঙ্গে ছড়িয়ে পড়ে।
নতুন উপসর্গ
ডেল্টা বা বি.১.৬১৭.২ প্রজাতির ভাইরাসের খোঁজ মিলেছে মোট ৬০টি দেশে। এর ভয়ে বিভিন্ন দেশেই নতুন করে ব্যবস্থা নেওয়া শুরু হয়। ব্রিটেন থেকে অস্ট্রেলিয়া, আমেরিকা— সবর্ত্র যাতায়াত বন্ধ হয়ে যায়। নতুন অনেক উপসর্গ দেখা গিয়েছে দ্বিতীয় ঢেউয়ে। তার মধ্যে কিছু সমস্যা নিয়ে বেশি চিন্তিত চিকিৎসকেরা।
১। পেটের সমস্যা: ডায়েরিয়া, পেটে ব্যথা, বমির প্রবণতা, খাওয়ার ইচ্ছে চলে যআওয়া, বদহজমের মতো কিছু পেটের সমস্যা দীর্ঘদিন ভোগাচ্ছে কোভিড-রোগীদের। কোভিড সেরে যাওয়ার পরও এর রেশ থেকে যাচ্ছে বহুদিন।
২। রক্তে জমাট বাঁধা: বহু মানুষের রক্তে জমাট বেঁধে যাওয়ার উদাহরণ পাওয়া গিয়েছে এবার। ব্লাড থিনার ব্যবহার করতে হয়েছে অনেক ক্ষেত্রে। বেশ কিছু ক্ষেত্রে রক্তে জমাট বেঁধে টিস্যুতে সংক্রমণ হয়ে গ্যাংরিন হয়ে যাচ্ছে।
৩। ফুসফুসের ক্ষতি: হঠাৎ করে রক্তে অক্সিজেনের মাত্রা কমে যাচ্ছে। ফুসফুসে মারাত্মক ক্ষতি হয়ে গিয়ে হাসপাতালে ভর্তি হতে হচ্ছে। অক্সিজেনের জন্য হন্য হয়ে দৌড়চ্ছেন প্রিয়জনেরা। এই ছবি সকলের কাছেই খুব চেনা হয়ে উঠেছে দ্বিতীয় ঢেউয়ে। ফুসফুসের ক্ষতি থেকে নানা রকম হৃদরোগও দেখা দিয়েছে অনেকের মধ্যে।
৪। ত্বকের সমস্যা: নখ কালো হয়ে যাওয়া, নান রকম র্যাশ বেরনো, ইনফেকশন, চুল পড়ার মতো নানা ধরনের ত্বকের সমস্যা এবারের উপসর্গে উঠে এসেছে। বাচ্চাদের মধ্যে বিশেষ করে কোভিডের কারণে র্যাশ বেরনোর অভিযোগ খুব বেশি শোনা গিয়েছে।
৫। শ্রবণশক্তি কমে যাওয়া: অনেকেরই অভিযোগ, কোভিডের পর ঠিক করে কানে শুনতে পাচ্ছেন না তাঁরা। বিশেষজ্ঞদের মতে, এই উপসর্গ আদপে ডেল্টা প্রজাতিরই কীর্তি।
চিকিৎসকেদের বক্তব্য, এখনও আরও গবেষণা প্রয়োজন এ বিষয়ে। তবেই বোঝা যাবে নতুন সব সমস্যার মূলে এই ভাইরাসই করেছে কিনা।
গ্রাফিক: শৌভিক দেবনাথ