নিয়ম মানায় কড়া না হলে কোভিড ছড়ানোর ঝুঁকি বাড়বেই।
আনলকডাউনের শুরুতে গণপরিবহন থেকে শুরু করে চায়ের দোকান, সব জায়গাতেই ভিড় বাড়ছে। মানুষে মানুষে দূরত্ব বজায় রাখা যাচ্ছে না। কোভিড-১৯ সংক্রমণ বেড়ে যাওয়ার ঝুঁকি কতটা?
সুকুমার মুখোপাধ্যায়: আশঙ্কা করছি আগামী কিছু দিনের মধ্যে সংক্রমণের হার খুব বাড়বে। আনলক শুরু হতে কেউই আর সে ভাবে কোনও নিয়ম মানছেন না। নাম কা ওয়াস্তে মাস্ক গলায় ঝুলিয়ে রাখলে কোভিড-১৯-এর মতো মারাত্মক ছোঁয়াচে অসুখ এড়িয়ে চলা খুব মুশকিল।
অমিতাভ নন্দী: সংক্রমণ বেড়ে যাওয়ার ঝুঁকি খুবই বেশি। বিজ্ঞান তো আর বদলে যায়নি। প্রথম থেকেই বিজ্ঞান আমাদের জানিয়ে আসছে সংক্রমণ আটকানোর একটাই উপায়, মানুষে মানুষে দূরত্ব বজায় রাখা। যাতে ড্রপলেটের মাধ্যমে সংক্রমণ ছড়িয়ে না পড়ে। আর হাতে সাবান দেওয়া, মুখে, নাকে চোখে হাত না দেওয়া এই সব নিয়মই মানতে হবে। কিন্তু গণপরিবহনে ইচ্ছে থাকলেও তা মানার উপায় নেই।
আনলকডাউন-১ হতে কি বিপদ বাড়ল?
সুকুমার মুখোপাধ্যায়: বিপদ বেড়েছে ভিন রাজ্য থেকে মানুষ রাজ্যে আসার সময় থেকেই। এর আগে আমাদের রাজ্যের বেশ কিছু জায়গাতে কোভিড-১৯-এর কোনও সংক্রমণই ছিল না। কিন্তু সম্প্রতি প্রত্যেকটি জেলায় রোগ সংক্রমণ শুরু হয়েছে। তার সঙ্গে লকডাউন শিথিল হতে সবাই একসঙ্গে গা ঘেঁষাঘেঁষি করে চলাফেরা করায় উপসর্গ নেই এমন মানুষের থেকে অন্যদের মধ্যে রোগের সংক্রমণ ছড়িয়ে পড়ছে।
অমিতাভ নন্দী: দেখুন ড্রপলেটের মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়া রোগের বিস্তার ঠেকানোর একটাই উপায় একে অন্যের থেকে দূরে থাকা। কিন্তু আনলক-১-এ সেই ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে বলে আমার মনে হচ্ছে না। কিন্তু সেটাকেই জোরদার করতে হবে।
আরও পড়ুন: ফের অবস্থান বদলে হাইড্রক্সিক্লোরোকুইন ব্যবহারে মান্যতা দিল ‘হু’
কাজে ফিরলেও নিয়ম মেনে চলুন।
তা হলে রোগের বিস্তার ঠেকাতে আমাদের করণীয় কী?
সুকুমার মুখোপাধ্যায়: বিস্তার ঠেকানোর জন্যে নিজেদের সতর্ক হতে হবে। সঠিক ভাবে ত্রিস্তরীয় মাস্ক পরা, দরকার হলে ফেস শিল্ড ব্যবহার করা, হাতে-মুখে সাবান ব্যবহার করা এ সবের পাশাপাশি সব থেকে বেশি প্রয়োজন মানুষে-মানুষে দূরত্ব বজায় রাখা।
অমিতাভ নন্দী: কীই বা করবেন! আপনি যদি বাস বা অটোয় চড়েন ইচ্ছে থাকলেও দূরত্ব বজায় রাখতে পারবেন না। অবস্থাটা এমন পর্যায়ে পৌছেছে যে মানুষে মানুষে একটা অবিশ্বাসের বাতাবরণ তৈরি হয়েছে। ধরুন আপনি বাধ্য হয়ে বাসে বা অটোয় চড়ে কাজের জায়গায় যাচ্ছেন। পাশের মানুষটি উপসর্গহীন কোভিড-১৯ এর রোগী হতেই পারেন, এবং আপনিও। একে-অপরকে সন্দেহের চোখে দেখছেন। পুরো ব্যাপারটাই অত্যন্ত হতাশাজনক। কিন্তু উপায়ও নেই। নিজের সাবধানতা নিজেকেই নিতে হবে। মাস্ক, গ্লাভস, প্রয়োজনে টুপি সব কিছু পরে, অন্যের থেকে দূরে থেকে রোগ থেকে দূরে থাকতে হবে।
তার মানে পাবলিক ট্র্যান্সপোর্টে গেলে কোভিড–১৯ ছড়িয়ে পড়ার ঝুঁকি খুব বেশি ?
অমিতাভ নন্দী: আগামী দিনে রোগের বিস্তারের ঝুঁকি অনেক বেড়ে যাচ্ছে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে। অন্য নিয়ম ও দূরত্বের বিধি না মানলে মাস্ক, ফেস শিল্ড পরলেও ঝুঁকি থেকে যাচ্ছে। আসলে শত্রুকেও সম্মান করতে হয়। তার শক্তি সম্পর্কে সঠিক ভাবে জেনে নিয়ে নিয়ম মেনে তাকে প্রতিরোধ করতে হবে। আমাদের সমাজে এখন দু’ধরণের মানুষ। একদল মানুষ কোভিড-১৯ সম্পর্কে জেনে-বুঝে তাকে যথেষ্ট মর্যাদা দিয়ে যাবতীয় নিয়ম মেনে চলার চেষ্টা করেন।
আর এক ধরণের মানুষ আছেন তাঁদের হয়তো পুঁথিগত শিক্ষা আছে, কিন্তু মানসিক ভাবে অত্যন্ত উদ্ধত আর সব কিছু তাচ্ছিল্য করা স্বভাব, আর অশিক্ষিত লোকজন তো আছেনই। বিশ্ব জুড়ে অতিমারি সৃষ্টিকারী কোভিড-১৯ নিয়ে এঁরা কোনও সচেতন হচ্ছেন না। একবারও ভেবে দেখছেন না এই ভয়ানক শত্রুর থেকে কতটা ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ার ঝুঁকি আছে।
আরও পড়ুন: মাস্ক না ফেস শিল্ড, এখন বাইরে বেরলে কী পরলে আপনি বেশি নিরাপদ?
ভিড় এড়ানোর চেষ্টা করি, সাবধান হয়েই লড়তে হবে করোনার সঙ্গে।
তা হলে আমরা কী করব?
সুকুমার মুখোপাধ্যায়: কোনও মহামারি বা অতিমারিকে রাতারাতি থামিয়ে দেওয়া যায় না। কলেরা, বসন্ত, বিউবোনিক প্লেগ টানা দু’-তিন বছর পৃথিবী দাপিয়ে বেরিয়েছে। নভেল করোনার ক্ষেত্রেও তা হতে পারে। অবশ্য এই নিয়ে ভবিষ্যৎবাণী করতে চাইছি না। তবে একটা আশার কথা যে, এখন কোভিড-১৯ থেকে সেরে ওঠার হার অনেকটাই বেড়েছে, একই সঙ্গে মৃত্যুহার অনেকটাই কমে গিয়েছে। ভারতে এখন ৫০ শতাংশ মানুষ দ্রুত কোভিড-১৯ থেকে সেরে উঠছেন, আমাদের রাজ্যে এই হার প্রায় ৪০ শতাংশ। সুস্থতার হার আগামী দিনে আরও বাড়বে আশা করা যাচ্ছে। এ ছাড়া লোকজনের মধ্যে হার্ড ইমিউনিটি তৈরি হচ্ছে এর থেকে রোগকে অনেকটাই প্রতিহত করা যাবে। ১৯১৮ সালের মহামারি আড়াই বছর ধরে চলেছিল। অন্তত দুর্গাপুজোর সময় পর্যন্ত রোগের সংক্রমণ চলতে পারে। তাই নিজেদেরই সাবধানে থাকতে হবে।
অমিতাভ নন্দী: ভবিষ্যতের দিকে তাকিয়ে বসে থাকা ছাড়া আর কীই বা করার আছে। তবে সব জিনিসেরই একটা শেষ আছে, সে রকম ভাবেই হয়ত কোভিড-১৯ শেষ হয়ে যাবে। আপাতত সেই আশা করেই বাঁচি। আপাতত আরও কড়া হাতে নিয়ম মেনে চলার বাইরে আর কোনও উপায় নেই।