ক্লান্তি কাটাতে চান? ছবি: শাটারস্টক।
টানা ন’মাস একই জীবনযাত্রায় চলতে চলতে কোথাও ‘করোনা-ক্লান্তি’ জমা হয়েছে। ফলে যখন বেশি সতর্ক থাকার দরকার, তখনই সাবধানতার বর্ম সরে গিয়েছে। অথচ ‘ইন্ডিয়ান কাউন্সিল অব মেডিক্যাল রিসার্চ’-এর (আইসিএমআর) গবেষকদের একাংশ জানাচ্ছেন, আগামী দেড় মাস সংক্রমণের দিক থেকে ‘গুরুত্বপূর্ণ’ পর্যায়। যেখানে মাস্ক পরা, হাত ধোওয়া, দূরত্ব-বিধি বজায় রাখার মতো নিয়ম আরও সতর্ক ভাবে পালন করার দরকার। কিন্তু জনগোষ্ঠীর একটি অংশের মধ্যে সেই সতর্কতা হারিয়ে যাচ্ছে। আর তাতেই বিপদ আরও বাড়ার আশঙ্কা করছেন গবেষকেরা।
কারণ, রেস্তরাঁ ইতিমধ্যেই খুলেছে। উৎসব মরসুমেই সিনেমা হল এবং স্কুল খোলারও কথা চলছে। এমনিতে করোনাকে নিয়েই আগামিদিনে চলতে হবে, জানিয়েছেন বিশেষজ্ঞেরা। কিন্তু কী ভাবে চলা যাবে, তার উপায় কী হবে, শুধুমাত্র মাস্ক পরেই করোনা সংক্রমণ ঠেকানো যাবে কি না, এমন হাজারো প্রশ্ন দেখা দিয়েছে জনসাধারণের একাংশে। প্রশ্ন আসাটা অস্বাভাবিক কিছু নয়। কারণ, উত্তরোত্তর সংক্রমণের হার বৃদ্ধি পাচ্ছে।
আইসিএমআর-এর প্রাক্তন ডিরেক্টর জেনারেল নির্মল গঙ্গোপাধ্যায় জানাচ্ছেন, এমন নয় যে কেউই সংক্রমণ রোখার নিয়মগুলি মানেননি। একটা সময়ে অনেকেই নিয়মগুলি পালনের চেষ্টা করেছেন। কিন্তু এখন নিয়ম পালনের ক্ষেত্রে ক্লান্তি জমা হয়েছে। তাঁর কথায়, ‘‘এই ক্লান্তির মধ্যেই বিপদ লুকিয়ে রয়েছে। কারণ, হাত ধোয়ার অভ্যাস ইতিমধ্যেই চলে গিয়েছে। মাস্কও আর কেউ পরতে চাইছেন না। ফলে সংক্রমণ রোখার প্রাথমিক নিয়মগুলোই প্রতি ক্ষেত্রে লঙ্ঘিত হচ্ছে।’’
দিল্লির ‘অল ইন্ডিয়া ইনস্টিটিউট অব মেডিক্যাল সায়েন্সেস’-এর (এমস) তরফেও দেশের করোনা পরিস্থিতি ক্রমাগত পর্যালোচনা করা হচ্ছে। সেখানে ধরা পড়েছে যে, বিভিন্ন রাজ্যে করোনা রোগীর সংখ্যা ফের বাড়তে শুরু করেছে। এমস-এর এক সংক্রামক রোগ চিকিৎসক জানাচ্ছেন, এর সম্ভাব্য কারণ হিসেবে মূলত অসতর্কতাকেই দায়ী করা হচ্ছে। অথচ উৎসবের মরসুমে সংক্রমণ রোখার একমাত্র পথ সতর্কতা। সংশ্লিষ্ট চিকিৎসকের কথায়, ‘‘এই মুহূর্তে জনসাধারণের সিংহভাগই আর নিয়ম পালন করতে চাইছেন না অথবা নিয়ম পালন করতে করতে ক্লান্ত হয়ে পড়েছেন। ফলে উৎসবের মরসুমে বা তার পরে দেশের সংক্রমণের চিত্রটা কী হতে চলেছে, সেটাই সব থেকে চিন্তার।’’
এমনিতে সংক্রমণের শুরু থেকেই জনগোষ্ঠীর একটি অংশের মাস্ক না পরা, হাত না ধোয়া, দূরত্ব-বিধি না মানা-সহ নিয়ম পালনে অনীহা ছিল। ‘হলে হবে’, এমন মানসিকতাও অনেকের মধ্যেই রয়েছে। মানসিক চিকিৎসার উৎকর্ষকেন্দ্র ‘ইনস্টিটিউট অব সাইকায়াট্রি’-র অধিকর্তা
প্রদীপ সাহা জানাচ্ছেন, যাঁরা নিয়ম মানছিলেন না, তাঁদের কথা নয় বাদ দেওয়া গেল। কিন্তু এটাও ঠিক, জনসাধারণের একটি অংশ নিয়ম পালন করছিলেন। প্রদীপবাবুর কথায়, ‘‘আমাদের সাম্প্রতিক পর্যবেক্ষণে ধরা পড়েছে, ওই অংশও মানসিক ক্লান্তির কারণে আর নিয়ম পালন করতে চাইছেন না। ফলে সতকর্তার বোধ হারিয়ে করোনার সামনে ক্রমশ বর্মহীন হয়ে পড়ছি আমরা!’’
(জরুরি ঘোষণা: কোভিড-১৯ আক্রান্ত রোগীদের জন্য কয়েকটি বিশেষ হেল্পলাইন চালু করেছে পশ্চিমবঙ্গ সরকার। এই হেল্পলাইন নম্বরগুলিতে ফোন করলে অ্যাম্বুল্যান্স বা টেলিমেডিসিন সংক্রান্ত পরিষেবা নিয়ে সহায়তা মিলবে। পাশাপাশি থাকছে একটি সার্বিক হেল্পলাইন নম্বরও
• সার্বিক হেল্পলাইন নম্বর: ১৮০০ ৩১৩ ৪৪৪ ২২২
• টেলিমেডিসিন সংক্রান্ত হেল্পলাইন নম্বর: ০৩৩-২৩৫৭৬০০১
• কোভিড-১৯ আক্রান্তদের অ্যাম্বুল্যান্স পরিষেবা সংক্রান্ত হেল্পলাইন নম্বর: ০৩৩-৪০৯০২৯২৯)