sanitizer

স্যানিটাইজার মিলছে না? হাত ধুতে এর চেয়েও ভাল বিকল্প কী?

আমরা এত পলিউশন সামলে নিচ্ছি, কোভিড কী করবে! —এই জাতীয় ভাবনা যদি মাথায় স্থান দিয়েছেন, বিপদ কেউ আটকাতে পারবে না।

Advertisement

সুজাতা মুখোপাধ্যায়

কলকাতা শেষ আপডেট: ৩০ মার্চ ২০২০ ১৬:৩৫
Share:

স্যানিটাইজার নেই তো কী, সাবান তো আছে!

ভিডিয়ো চ্যাট হচ্ছিল চার বন্ধুর সঙ্গে। পোস্টগ্র্যাজুয়েট বন্ধু সব। এক জন বলল, “স্যানিটাইজার তো পাচ্ছি না, তাই নুন-জলে হাত ধুচ্ছি। নুন-জল দিয়ে নাক পরিষ্কার করছি।” আর এক জন তার এন-৯৫ মাস্ক গলায় নামিয়ে বলল, “আমি ধুচ্ছি জীবাণুনাশক লোশন দিয়ে।”

Advertisement

“কেন, সাবান কী দোষ করল?” “আরে, বললাম না, স্যানিটাইজার পাচ্ছি না!” আবার বললাম, “সাবানে ধুচ্ছিস না কেন?” “কোন সাবানে ধোব? সাবানে কি কাজ হবে? তা ছাড়া গরিব মানুষের কথা ভাব? তারা অত দাম দিয়ে স্যানিটাইজার কী করে কিনবে! নুন-জলের তো অ্যান্টিসেপটিক গুণ আছে বা যদি কষ্ট করে একটা ডেটল কিনে নেয়?” এক জন আর এক কাঠি উপরে, “আমি সাবানে হাত ধুয়ে তার পর স্যানিটাইজার দিয়ে ধুয়ে নিচ্ছি।”

ছোটবেলার বন্ধু সব। তাও রাগ হয়ে গেল। বিপর্যয়ের মুখে দাঁড়িয়ে এদেরই যদি এই অবস্থা হয়, আমআদমির তবে কী হাল! কেন সবাই ধরে নিচ্ছে সাবানের চেয়ে স্যানিটাইজার ভাল? কেনই বা এন-৯৫ মাস্ক কিনে তার পর তা গলায় ঝুলিয়ে রাখা? কেন ওষুধ খেয়ে রোগ ঠেকানোর চেষ্টায় প্রাণ চলে যাচ্ছে মানুষের? বিশেষজ্ঞরা যা বলছেন, তা মানতে বাধা কোথায়? তবে কি বিজ্ঞানে ডিগ্রীধারী হয়েও বিজ্ঞানে বিশ্বাস নেই আমাদের? এক জন বললও সে কথা, “ডাক্তারদের কথা ছাড়। ওঁরা আজ এই কথা বলেন, কাল বলেন অন্য কথা। এখন বলছেন, এই ভাইরাস বাতাসে ভেসে বেড়ায় না। কাল শুনবো, বাতাসেই ভেসে বেড়ায়। ওঁদের এ কথা সে কথার মাঝে, আমাদের প্রাণটাই তো যাবে!” বললাম, শেষ চেষ্টা করলাম। “শোন, ডাক্তার বা বিজ্ঞানীদের চেয়ে আমরা এই ব্যাপারটা বেশি বুঝি না কিন্তু। কাজেই আয়, আমরা সবাই তাঁদের কথা ভাল করে বুঝে, সেইমতো চলি। তা-ও যদি বিপদ আসে, সেটাও তো তাঁরাই সামলাবেন। তাই না?” বন্ধুরা রাজি হল। তখন জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞ সুবর্ণ গোস্বামী ও বক্ষরোগ বিশেষজ্ঞ সুমিত সেনগুপ্ত যা যা বলে চলেছেন, তা জানালাম।

Advertisement

আরও পড়ুন: মোবাইলেও ঘাপটি মেরে থাকে করেনাভাইরাস, কী ভাবে ব্যবহার করলে দূরে থাকবে অসুখ?

সাবান, স্রেফ সাবান

যে কোনও সাবান ব্যবহার করা যায়, নামী দামি হওয়ার দরকার নেই, বেশ হাত ভরে ফেনা হলেই হল। তবে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা থেকে যে ভাবে ৭টি ধাপে রগড়ে রগড়ে ধুতে বলা হচ্ছে সেটা খেয়াল রাখবেন। মনে না থাকলে হাতের নখ, নেলপলিশ, সব বিসর্জন দিয়ে, ৩০ সেকেন্ড ধরে একেবারে কচলে কচলে ধুয়ে নিন। সাবান জলের সঙ্গে মৃত ভাইরাসও, যদি থেকে থাকে, চলে যাবে নালা-নর্দমায়। কারণ, সাবানের অণু ভাইরাসের চর্বির আস্তরণকে এমন টানা টানবে যে সে মারা যাবে ছিন্নভিন্ন হয়ে।

হাত ধোয়ার পর, নাক-মুখ-চোখে যত পারেন হাত দিয়ে নিন। চুলকে নিন। তার পর আর এক বার ধুয়ে নেবেন। তবে ঘরের কোনও আসবাব, হাতল, সুইচ, টিভি রিমোট, মোবাইল, ব্যাগ, জামাকাপড়, সব্জি, বাসন বা যে কোনও কিছুতে হাত দিলে হাত না ধুয়ে মুখে-চোখে-নাকে লাগাবেন না। কারণ, যদি অসাবধানে আপনার বা আপনার বাড়ির কারও হাঁচি-কাশি মারফৎ কয়েক ঘণ্টার জন্য এ সব জায়গায় অস্থায়ী আবাস বানিয়ে থাকে ভাইরাস, হ্যাঁ অস্থায়ী আবাস, কারণ জীবিত কোষ ছাড়া কয়েক ঘণ্টার বেশি ভাইরাস বাঁচতে পারে না, সে আবার আপনার হাতে লাগবে। সে হাত নাক-চোখ-মুখে লাগা মানে, আবার তাকে শরীরে ঢোকার সুযোগ করে দেওয়া। কেন দেবেন সে সুযোগ?

যদি লেগে যায় এক-আধ বার? ভুল করে এক-আধ বার লেগে গেলে অত টেনশন করবেন না। ঘরে রোগী না থাকলে বা আপনি যদি ডাক্তার-নার্স না হন, হাসপাতালের ধারেকাছে না যান বা বিরাট জনতার মাঝখানে ঘুরে না বেড়ান, এক-আধ বারে কিছু হবে না। আপনার রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা এটুকু সামলে নেবে। টেনশন করলে বরং প্রতিরোধ ক্ষমতা কমে সংক্রমণের আশঙ্কা বাড়লেও বাড়তে পারে।

তবে হ্যাঁ, ওই এক-আধ বার যেন এক-আধ বারেই সীমাবদ্ধ থাকে। ‘আমরা এত পলিউশন সামলে নিচ্ছি, কোভিড কী করবে,’ জাতীয় ভাবনা যদি মাথায় স্থান দিয়েছেন, বিপদ কেউ আটকাতে পারবে না। আমাদের প্রতিরক্ষা কাজ করবে ঠিকই, কিন্তু তার ভরসায় থেকে নিয়ম না মানলে বিপদের আশঙ্কা প্রতি পদে। আপনার একার নয়, আপনার হাত ধরে সবার। কাজেই জেগে থাকার সময়, প্রতি ঘণ্টায় নিয়ম করে সাবান জলে হাত ধুয়ে নিন, তা হলে আর কোথায় জীবাণু আছে, কোথায় হাত দিয়ে ফেললাম জাতীয় টেনশনে ভুগতে হবে না।

আরও পড়ুন: গন্ধ পাচ্ছেন না কিছুর? হতে পারে করোনা সংক্রমণ, বলছেন বিশেষজ্ঞরা

স্যানিটাইজার কী দোষ করল

একটাই দোষ, বেজায় দাম। লাগেও বেশি। ৩০ সেকেন্ড ধরে হাতের সামনে-পিছনে ঘষে ঘষে তাকে লাগাতে গেলে, কী পরিমাণে লাগবে বুঝতে পারছেন? পয়সা থাকলে ও ঘরে যদি মজুত করে রেখে থাকেন ও তাতে যদি অ্যালকোহল ৭০ শতাংশের বেশি থাকে, ব্যবহার করতে পারেন। কিন্তু সাধারণ গরিব মানুষকে ভুল বোঝাবেন না। তাঁদের মাথায় ঢুকে যাচ্ছে যে স্যানিটাইজার না হলে প্রাণে বাঁচা যাবে না। ফলে খেয়ে না-খেয়ে তাঁরা দোকানে লাইন লাগাচ্ছেন। না পেলে হতাশায় ভুগছেন। এর মধ্যে আবার অনেকে স্যনিটাইজার বানাতে শুরু করে দিয়েছেন। কিন্তু তাতে অ্যালকোহল কত আছে কেউ জানে না।

অনেকে আবার স্যানিটাইজার দিয়ে হাত ধুচ্ছেন। মানে স্যানিটাইজার দিয়ে হাত ঘষে জল দিয়ে ধুয়ে নিচ্ছেন। “ভুল করছেন,” জানালেন চিকিৎসক সুমিত সেনগুপ্ত। “অ্যালকোহল মেশানো রাব দিয়ে হাত ঘষে হাওয়ায় তা শুকিয়ে নিতে হয়। না হলে কাজ হয় না। তা ছাড়া, যেখানে জলের যোগান আছে, সেখানে সাবান ব্যবহার করাই সবচেয়ে ভাল। রাস্তাঘাটে সে সুযোগ না থাকলে তখনই কেবল স্যানিটাইজারের প্রশ্ন। তবে মনে রাখবেন, স্যানিটাইজার এমন পরিমাণে নিতে হবে যাতে ৩০ সেকেন্ড ধরে হাতের সামনে-পিছনে, আঙুল, সব ভাল করে ঘষে নেওয়া যায়। দু-ফোঁটা দিয়ে হাত একটু ঘষে নিলে কোনও কাজই হয় না।”

অতএব, বুঝতেই পারছেন, ধনী-দরিদ্র সবার জন্য সাবানই সবচেয়ে ভাল পন্থা। হাতের কাছে জল না থাকলে তখনই একমাত্র স্যানিটাইজার ব্যবহার করার প্রশ্ন।

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement