exercise

রুটিনে রাখুন এই অভ্যাস, রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়বে, দূরে থাকবে অসুখ

সপ্তাহে ৫ দিন দৈনিক গড়ে ৪৫ মিনিট করে ব্যায়াম করলে এন্ডরফিন নিঃসরণ বাড়ে, ফলশ্রুতি ডোপামিনের পরিমাণও বাড়ে।

Advertisement

সুমা বন্দ্যোপাধ্যায়

কলকাতা শেষ আপডেট: ১১ জুন ২০২০ ১৬:৪০
Share:

ব্যায়ামে বাড়িয়ে তুলুন রোগ প্রতিরোধক ক্ষমতা। ছবি: শাটারস্টক।

নভেল করোনাভাইরাসের সংক্রমণের নির্দিষ্ট কোনও ওষুধ এখনও পর্যন্ত চিকিৎসকদের হাতে আসেনি, চলছে গবেষণা। তবে বিশ্বের তাবড় চিকিৎসকগণ সহমত যে শরীরের রোগ প্রতিরোধ ব্যবস্থা বাড়াতে পারলে কোভিড-১৯ ভাইরাসকে ঠেকিয়ে দেওয়া যায়।

Advertisement

ইনেট ইমিউনিটি বা শরীরের প্রতিরোধ ব্যবস্থা জোরদার করার অন্যতম উপায় সঠিক খাবার খাওয়া এবং নিয়মিত ব্যায়াম করা। এ বিষয়ে বিশ্বের বিভিন্ন প্রান্তের সব চিকিৎসাবিজ্ঞানীরা সহমত। গবেষণায় প্রমাণিত হয়েছে যে, নিয়মিত মাঝারি মাপের ঘাম ঝরানো আসন ও মর্নিং ওয়াক করলে শরীরের রোগ প্রতিরোধ ব্যবস্থা জোরদার হয় বললেন ফিজিক্যাল মেডিসিনের বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক মৌলীমাধব ঘটক। তবে একই সঙ্গে এটাও ঠিক যে অনেকে অতিরিক্ত জিম ও এক্সারসাইজ করেন। তা আবার ইমিউনিটি বাড়ানোর বদলে কমিয়ে দিতে পারে। নিয়মিত যোগাসন ও অ্যারোবিক এক্সারসাইজ করলে শরীরে স্ট্রেস হরমোনের পরিমাণ কমে। আসলে দৈনন্দিন জীবনের নানা কাজকর্ম ও দুশ্চিন্তার ফলে আমাদের শরীরের স্ট্রেস হরমোন নিঃসরণ বেড়ে যায়। এই স্ট্রেস হরমোন আবার ইমিউনিটি কমিয়ে দেয়।

সপ্তাহে ৫ দিন দৈনিক গড়ে ৪৫ মিনিট করে ব্যায়াম করলে এন্ডরফিন নিঃসরণ বাড়ে, ফলশ্রুতি ডোপামিনের পরিমাণও বাড়ে। এর ফলে মানসিক চাপ ও উদ্বেগ কমে যায় ও মনমেজাজ ভাল থাকে। শরীরের শ্বেতকণিকার সংখ্যা বাড়ে অর্থাৎ জীবাণুদের বিরুদ্ধে লড়াই করার ক্ষমতা অনেক বেড়ে যায়। ফলে চট করে ভাইরাস বা ব্যাকটিরিয়ার সংক্রমণ হয় না। নিয়ম করে আসন ও হাঁটাহাঁটি করলে শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা অনেকটাই বাড়ানো যায় বললেন মৌলীমাধব ঘটক। লকডাউনের শিথিল পর্বে কোভিড-১৯-এর সংক্রমণ ঠেকানোর এক অন্যতম হাতিয়ার নিয়ম করে ব্যায়াম করা। সপ্তাহে অন্তত পাঁচ দিন নিয়ম করে এক্সারসাইজ ও আসন করলে ইনেট ইমিউনিটি অর্থাৎ শরীরের অভ্যন্তরের রোগ প্রতিরোধ ব্যবস্থা জোরদার হয়। এই প্রসঙ্গে মৌলীমাধব বাবু জানালেন যে নিয়মিত গা ঘামিয়ে এক্সারসাইজ, হাঁটা বা দৌড়নোর একটা রুটিন করে নিলে ভাল হয়। যাঁরা বেশি বয়সে আসন শুরু করতে চান, তাঁরা অবশ্যই এক জন চিকিৎসককে দেখিয়ে প্রেশার, ব্লাড সুগার ও হার্টের অবস্থা জেনে নেবেন। নতুন ভাবে শুরু করলে কখনওই জোর করে কিছু না করাই ভাল। যতটা সয়, ততটুকুই করা উচিত। নিয়ম করে এক্সারসাইজ করলে শরীরের বিভিন্ন উপকার হয়।

Advertisement

আরও পড়ুন: করোনা প্রতিরোধী ওষুধ ও সতর্কতা নিয়ে কী বলছেন বিশেষজ্ঞরা?

• ব্যায়াম বা শারীরিক কসরত করার সময় আমাদের শরীরের তাপমাত্রা কিছুটা বেড়ে যায়। এর ফলে ভাইরাস বা ব্যাকটেরিয়াদের বাড়বাড়ন্ত থমকে যায়। এই প্রসঙ্গে বলা যায় যে কোনও সংক্রমণ হলে জ্বর হয়। আমাদের ইমিউন সিস্টেম শরীরের তাপমাত্রা বাড়িয়ে দিয়ে জীবাণুদের বংশবিস্তার থামিয়ে দিতে চেষ্টা করে। ঠিক সেইভাবেই এক্সারসাইজ করলে শরীরের তাপমাত্রা বেড়ে গিয়ে ভাইরাস বা অন্যান্য জীবাণু শরীর থেকে বেরিয়ে যায়।

• গা ঘামিয়ে এক্সারসাইজ করলে বিপাকীয় প্রক্রিয়ার হার বাড়ে (মেটাবলিক রেট)। ফলে রোগ প্রতিরোধ ব্যবস্থা জোরদার হয়।

• শরীরের সমস্ত অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ সঞ্চালন হয় বলে ক্ষয়জনিত ব্যধি দূরে সরিয়ে রাখা যায়।

• নিয়মিত ব্যায়াম করলে শ্বাসনালী ও ফুসফুসে জীবাণুরা বেশি ক্ষণ থাকতে পারে না। তাজা বাতাস জীবাণুদের বার করে দিতে সাহায্য করে। তাই চট করে সর্দি কাশি ও শ্বাসনালীর সংক্রমণ হয় না।

আরও পড়ুন: করোনা –আতঙ্কে দাঁতের চিকিৎসায় দেরি করছেন? বিপদ বাড়ছে না তো?

• হাঁটাহাঁটি ও অন্যান্য এক্সারসাইজ করলে ওজন স্বাভাবিক থাকে। বাড়তি ওজন নানা সংক্রমণের ঝুঁকি বাড়িয়ে দেয়।

• নিয়মিত ব্যায়াম করলে শরীরে বিভিন্ন জীবাণুর বিরুদ্ধে অ্যান্টিবডি তৈরি হওয়ার গতি বেড়ে যায়। শ্বেত রক্তকণিকার সংখ্যা বাড়ে। শ্বেত রক্তকণিকা রোগ প্রতিরোধ ব্যবস্থাকে জোরদার করে। যে কোনও জীবাণু শরীরে প্রবেশ করলে দ্রুত তাদের নিকেশ করে দেয়।

• একই ধরণের ব্যায়াম প্রতি দিন করাতে একঘেয়ে লাগতে পারে। সে ক্ষেত্রে বদলে বদলে আসন করতে পারেন। কোনও দিন সাইকেল চালালেন, কখনও আসন করলেন, তবে নিয়ম করে সপ্তাহে পাঁচদিন আধ ঘন্টা দ্রুত পায়ে হাঁটা খুব দরকার।

ব্যায়ামের পাশাপাশি সঠিক ডায়েট এবং মন ভাল রাখতে হবে। ধুমপান সহ তামাক ও মদ্যপানের নেশা না ছাড়লে রোগ প্রতিরোধ ব্যবস্থা বাড়ানো মুশকিল।

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement