জরুরি অবস্থা হলে ক্যানসার রোগীকে হাসপাতালে এনে রেডিয়েশন দিতে হবে।ছবি: শাটারস্টক।
লাগাতার লকডাউনে সমস্যায় পড়েছেন ক্যানসার আক্রান্ত এবং নিয়মিত কেমোথেরাপি, রেডিয়েশন চলছে এমন রোগীরা। এক দিকে করোনার আতঙ্ক, অন্য দিকে নিয়মিত চিকিৎসা করানোর অসুবিধা, এর ফলে রোগী তো বটেই বাড়ির লোকজনও আতান্তরে পড়েছেন।
তাঁদের এই সময় হাসপাতালে গিয়ে চিকিৎসা নেওয়া উচিত কি না তা নিয়েও তৈরি হয়েছে ধন্দ। প্রথমত, এখন হাসপাতালে পৌঁছনোর সমস্যা অনেক। অন্য দিকে হাসপাতালে গিয়ে কোভিড-১৯-এর সংক্রমণের আশঙ্কা উড়িয়ে দেওয়ার মতো নয়। এ দিকে ক্যানসারের মতো ক্রনিক অসুখে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা কিছুটা কমে যায় বলে করোনা সংক্রমণের ঝুঁকিও বাড়ে।
“ক্যানসার রোগীদের দু’ভাগে ভাগ করে নিয়ে চিকিৎসা প্রোটোকল ঠিক করে দেওয়াই ভাল। যাঁরা ক্যানসার চিকিৎসায় সেরে উঠবেন বলে আশা করা যাচ্ছে এবং যাঁদের সেরে ওঠার সম্ভাবনা কম হওয়ায় প্যালিয়েটিভ থেরাপি চলছে, তাঁদের চিকিৎসার ব্যাপারে টিউমার বোর্ড গঠন করে সেই অনুযায়ী চিকিৎসা করতে হবে।” বললেন নেতাজি সুভাষচন্দ্র বোস ক্যানসার হাসপাতালের মেডিক্যাল অঙ্কোলজিস্ট অনিতা রমেশচন্দ্রন।
আরও পড়ুন: আগামী সপ্তাহেই মানবদেহে করোনার টিকার পরীক্ষা
টিউমার বোর্ড গঠন করা হয় মেডিক্যাল অঙ্কোলজিস্ট, সার্জিকাল অঙ্কোলজিস্ট, প্যাথোলজিস্ট, রেডিওলজিস্ট, নার্স, সাইকোলজিস্ট ও সোশ্যাল ওয়ার্কারদের নিয়ে। কেননা, ক্যানসার আক্রান্ত হলে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা কমে যায়। চিকিৎসা চলাকালীনও রোগীদের শরীরও কমজোরি থাকে। এই সময় অন্যান্য সংক্রমণের পাশাপাশি কোভিড-১৯-এর সংক্রমনের ঝুঁকি বহু গুণ বাড়ে। তাই বিশেষজ্ঞদের মতে, নিতান্ত দরকার না পড়লে হাসপাতালে না যাওয়াই ভাল। তবে অনিতাদেবীর মতে, যে সব ক্যানসার আক্রান্তের কেমোথেরাপি চলছে এবং সেরে ওঠার সম্ভবনা রয়েছে ক্যানসার তাঁদের কিন্তু থেরাপি নিতে হাসপাতালে যেতে হবে। তবে যদি খাওয়ার ওষুধ দিয়ে কেমো দেওয়া সম্ভব হয়, সে ক্ষেত্রে সংশ্লিষ্ট চিকিৎসকদের সঙ্গে কথা বলে সেই মতো কেমো নেওয়া যেতে পারে। তখন আর হাসপাতালে যাওয়ার দরকার হবে না। টার্মিনাল স্টেজের ক্যানসার আক্রান্তদের এমন ওষুধ ও ইঞ্জেকশন দিয়ে বাড়িতে রাখাই ভাল। ৪–৬ সপ্তাহ পর্যন্ত ক্যানসার রোগীদের এই ভাবে চিকিৎসা করা যায়।
রোগীকে মনের জোর জোগানোর দায়িত্বও চিকিৎসক ও রোগীর পরিজনদের।ছবি: শাটারস্টক।
অনিতাদেবীর অভিমত, এখন যদি কেউ নতুন করে ক্যানসার আক্রান্ত হন, সে ক্ষেত্রে টিউমার বোর্ড সিদ্ধান্ত নেবে কী ভাবে চিকিৎসা করা উচিত। অনেক ক্ষেত্রেই ক্যানসার-যুক্ত টিউমারে অস্ত্রোপচার করতেই হয়। কিন্তু করোনার বাড়বাড়ন্তের সময়ে চট করে অস্ত্রোপচারে সায় নেই চিকিৎসকদের। তখন রেডিয়েশন ও কেমোথেরাপির সাহায্যে টিউমারের বৃদ্ধি ঠেকিয়ে রেখে রাখাই এই পরিস্থিতিতে বাঞ্ছনীয়। কোভিড-১৯ ভাইরাসের প্রকোপ কমে গেলে অস্ত্রোপচার অথবা বোন ম্যারো ট্র্যান্সপ্ল্যান্টেশনের সিদ্ধান্ত নেওয়া ভাল। তবে যদি কারও ব্রেন টিউমার বা স্পাইনাল কর্ডের ক্যানসারের কারণে রক্তপাত শুরু হয়, সে ক্ষেত্রে রোগীর জীবন বাঁচাতে জরুরি ভিত্তিতে অস্ত্রোপচার করতেই হবে।
আরও পড়ুন: করোনার হানা, প্যাঙ্গোলিনের প্রতিশোধ নয় তো?
যাঁদের রেডিয়েশন নিতে হচ্ছে, তাঁদের ৪–৬ সপ্তাহ রেডিয়েশন পিছিয়ে দেওয়া যায়। এ ক্ষেত্রে ২৫টার পরিবর্তে ১২টা রেডিয়েশন দিয়ে রোগ আটকানোর চেষ্টা করা হয়। তবে কোনও জরুরি অবস্থা হলে রোগীকে হাসপাতালে এনে রেডিয়েশন দিতেই হবে। অনেক সময় ব্রেস্ট ক্যানসার, ওভারিয়ান ক্যানসার, প্রস্টেট ক্যানসারে হরমোন ইঞ্জেকশন দেওয়া হয়। নভেল করোনাভাইরাসের প্রকোপ কমলে এই ইঞ্জেকশনের ডোজ দেওয়া যেতে পারে। তবে যে কোনও জরুরি অবস্থাতেই রোগী ও পরিবারের লোকজনকে হোয়াটসঅ্যাপ ও ফোনে চিকিৎসকের সঙ্গে যোগাযোগ করতে হবে।
সুতরাং ক্যানসারের রোগীর স্বাভাবিক চিকিৎসা বন্ধ করা নয়, বরং লকডাউনের সময়ে বিশেষজ্ঞের পরামর্শ নিয়ে রোগীকে বিকল্প উপায়ে তাঁর প্রয়োজনীয় কোনও চিকিৎসা পৌঁছে দেওয়াটাই বুদ্ধিমানের কাজ হবে।
(অভূতপূর্ব পরিস্থিতি। স্বভাবতই আপনি নানান ঘটনার সাক্ষী। শেয়ার করুন আমাদের। ঘটনার বিবরণ, ছবি, ভিডিয়ো আমাদের ইমেলে পাঠিয়ে দিন, feedback@abpdigital.in ঠিকানায়। কোন এলাকা, কোন দিন, কোন সময়ের ঘটনা তা জানাতে ভুলবেন না। আপনার নাম এবং ফোন নম্বর অবশ্যই দেবেন। আপনার পাঠানো খবরটি বিবেচিত হলে তা প্রকাশ করা হবে আমাদের ওয়েবসাইটে।)