কোভিড নিয়ে বয়স্কদের মধ্যে বা়ড়ছে টেনশন। ছবি: শাটারস্টক।
বয়স্কদের কোভিডের আশঙ্কা বেশি, সুগার-প্রেশার-হৃদরোগ ইত্যাদি থাকলে সে শঙ্কা আরও বাড়ে। এ সব তথ্য এত দিনে যেমন আমরা জানি, ঠিক তেমনই জানেন বয়স্করাও।
প্রতিনিয়ত এ সব কথা চর্চা থেকেই বয়স্কদের মধ্যে বা়ড়ছে টেনশন। রোগ হলে কোথায় যাবেন, কী করবেন, কাকে ডাকবেন? কোভিড এমন রোগ, নিজের হলে গোটা পরিবারের ভোগান্তি, সকলের কোয়রান্টাইন! অ্যাম্বুলেন্স ডাকলে কি আসবে? আর বাড়িতে কেউ না থাকলে? একা মানুষ বা সন্তানাদি বাইরে থাকলেই ঘরে স্রেফ একা বা দুটি প্রাণী। রোগী নিয়ে ছুটোছুটিই বা করবে কে? বাজার-দোকান করতে, ব্যাঙ্কের কাজ মেটাতে কিংবা ওষুধ কিনতে বাইরে যাওয়া ছাড়া তো গতি নেই, তখন যদি সংক্রমণ হয়! এর পর রয়েছে একা হাতে ঘরের যাবতীয় কাজ।
‘‘এমনিতেই বয়স্ক মানুষের মধ্যে শতকরা ২০ জন অবসাদে ভোগেন। বয়স বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে একাকিত্ব, উদ্বেগ, অসহায়তা মিলেমিশে থাকে তাঁদের মধ্যে। কোভিডের আতঙ্ক ও অস্বাভাবিক পরিস্থিতিতে তা একধাক্কায় বেড়ে গেছে বহু গুণ। ফলে মানসিক ও শারীরিক ভাবে আরও বিপর্যস্ত হয়ে পড়ছেন বয়স্করা।” জানালেন মনোচিকিৎসক গৌতম বন্দ্যোপাধ্যায়।
আরও পড়ুন: মাস্ক, সাবান, স্যানিটাইজার আর কত দিন? লকডাউনের এ সব অভ্যাস কি অসুখ ঠেকাবে?
উদ্বেগ ঠেকাতে কী করবেন?
পরিস্থিতির গুরুত্ব যাঁরা বুঝতে পারছেন, তাঁদের টেনশন হবেই। উদ্বেগপ্রবণ মানুষের পক্ষে সে চাপ নেওয়া খুব কঠিন, যদি না তিনি নিজে ও তাঁর আপন জনরা বিশেষ সতর্ক থাকেন। উদ্বেগ কাটানোর কিছু দাওয়াইয়ের সন্ধান দিলেন গৌতমবাবু।
বয়স্কদের যাতে টেনশন না বাড়ে, সে দিকে খেয়াল রাখতে হবে।
• প্রথমেই বুঝে নিতে হবে যে ঝুঁকি বেশি থাকলেও এই মুহূর্তে সাবধানে থাকা ছাড়া আর কিছু করার নেই। অন্য আর যা যা রোগভোগ আছে, তাদের সামলে রাখতে হবে। ওষুধপত্র খেতে হবে নিয়ম করে। ওষুধের জোগান যেন ঠিক থাকে সে দিকে খেয়াল রাখতে হবে। ঠিক সময়ে ঠিকঠাক খাবার খেতে হবে।
• ঘুম ঠিকঠাক হচ্ছে কি না, সে দিকে খেয়াল রাখতে হবে। এক-আধ দিন না হলে বা কম হলে সমস্যা নেই। কিন্তু দিনের পর দিন ঘুম ঠিক না হলে পরামর্শ করতে হবে নিজস্ব চিকিৎসকের সঙ্গে। আপাতত ফোনেই পরামর্শ নিতে হবে।
• নতুন করে যাতে টেনশন না বাড়ে, সে দিকে খেয়াল রাখতে হবে। যাঁরা উদ্বেগ সহ্য করতে পারেন না, তাঁদের জন্য এ রকম পরিস্থিতি মারাত্মক। কাজেই নিতান্ত প্রয়োজন না হলে কোভিড নিয়ে আলোচনা করবেন না। তবে বয়স্ক মানুষের মনে কোনও প্রশ্ন জাগলে তিনি যাতে তার উত্তর পান, সে দিকেও খেয়াল রাখুন। একেবারে কিছু না জানতে দিলেও কিন্তু টেনশন বাড়ে। কাজেই ব্যালান্স করে চলুন।
আরও পড়ুন: লকডাউনে এই খাবারগুলি দেহের প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়াতে পারে
• হাত ধোওয়া, একটু দূরে দূরে থাকা ও বাইরে বেরলে মাস্ক পরার যে নিয়ম আছে, তা মেনে চলতে হবে অক্ষরে অক্ষরে। বয়স্কদের বোঝাতে হবে যে এ সব নিয়ম মানলেই বিপদ কমবে।
• মানতে হবে আরও কয়েকটি নিয়ম। যেমন, সকাল-সন্ধ্যা ছাদে একটু হাঁটাহাটি, হালকা দু’-একটা স্ট্রেচিং বা অভ্যাস থাকলে একটু যোগাসন। কখন কী করা যেতে পারে তার একটা রুটিন করে নেওয়া ভাল। একটু বই পড়া, গান শোনা, আড্ডা, সিরিয়াল, সিনেমা থেকে শুরু করে আত্মীয়-বন্ধুদের খোঁজখবর নেওয়া, বাড়ির কাজে সাহায্য করা ইত্যাদি নিয়ে ব্যস্ত হয়ে গেলে টেনশন কম হবে।
• অসুখ হলে কোথায় যেতে হবে, কী করতে হবে, সে সব খবরও একটু নিয়ে রাখবেন, যদি দরকার হয়, তখন যাতে হাতড়ে বেড়াতে না হয়।
• যাঁরা সারাজীবন সব কিছু নিয়ন্ত্রণ করে এসেছেন, তাঁদের পক্ষে এই অসহায়তা মেনে নেওয়া মর্মান্তিক। তাঁদের বোঝাতে হবে যে পৃথিবীর তাবড় তাবড় মানুষও ঠিক তাঁর মতো অবস্থায় আছেন এখন। জীবাণুর মেজাজ-মর্জি বুঝতে পারছেন না কেউই। কাজেই এ নিয়ে অহেতুক জল্পনা-কল্পনা করা বা টেনশন করার কোনও মানে নেই।
(অভূতপূর্ব পরিস্থিতি। স্বভাবতই আপনি নানান ঘটনার সাক্ষী। শেয়ার করুন আমাদের। ঘটনার বিবরণ, ছবি, ভিডিয়ো আমাদের ইমেলে পাঠিয়ে দিন, feedback@abpdigital.in ঠিকানায়। কোন এলাকা, কোন দিন, কোন সময়ের ঘটনা তা জানাতে ভুলবেন না। আপনার নাম এবং ফোন নম্বর অবশ্যই দেবেন। আপনার পাঠানো খবরটি বিবেচিত হলে তা প্রকাশ করা হবে আমাদের ওয়েবসাইটে।)