সন্তানসম পোষ্যদের অতিরিক্ত স্যানিটাইজ করতে গিয়ে বিপদে ফেলবেন না। ছবি: শাটারস্টক
নভেল করোনা ভাইরাস আমাদের জীবনযাত্রা আমূল বদলে দিয়েছে। একই সঙ্গে পাল্টে গেছে বাড়ির না-মানুষ সদস্য কুকুর, বিড়াল, খরগোশদের জীবনযাপনও। আন্তর্জাতিক প্রাণী সুরক্ষা স্বাস্থ্য দপ্তর (যা ডব্লিউএইচও–র সমতুল) ওআইই ( অফিস ইন্টারন্যাশনাল ডেস এপিজুটিস) -এর পক্ষ থেকে বার বার আশ্বাস দেওয়া হচ্ছে যে মানুষ থেকে না-মানুষে বা বাড়ির কুকুর, বিড়াল, গিনিপিগ, খরগোশ বা পাখি থেকে মানুষের শরীরে কোভিড-১৯ ভাইরাসের সংক্রমণ হওয়ার কোনও ঝুঁকিই নেই, বললেন পশ্চিমবঙ্গের প্রাণী ও মৎস্য বিজ্ঞান বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক ভাইরোলজিস্ট সিদ্ধার্থ জোয়ারদার। অনেকেই কোভিড-১৯ এর ভয়ে বার বার ঘর-বাড়ি স্যানিটাইজ করছেন। একই সঙ্গে না-মানুষ সন্তানসম কুকুর-বিড়ালদেরও একাধিক বার স্যানিটাইজ করার চেষ্টা করতে গিয়ে বিপদে পড়ছেন।
বাড়িতে বা একদম পাশের ফ্ল্যাটে যদি করোনা সংক্রমিত মানুষ না থাকেন, তা হলে আতঙ্কিত হওয়ার কিছুই নেই বলে ভরসা দিলেন সিদ্ধার্থবাবু। সাধারণ সময়ে যেভাবে ঘর পরিষ্কার করা হয়, সেই নিয়ম মানলেই চলে। দিনে দু’বার ঘর পরিষ্কার করা উচিত। বাড়তি সতর্কতা হিসেবে সাবান জল দিয়ে ঘর মোছা যেতে পারে। কিন্তু হাসপাতাল বা স্বাস্থ্য কেন্দ্রে যে ভাবে স্যানিটাইজ করা হয়, তার কোনও প্রয়োজন নেই বলে সিদ্ধার্থ বাবুর অভিমত।
আরও পড়ুন:কিডনির অসুখে করোনা হতে পারে বিপজ্জনক, সুস্থ থাকতে মেনে চলুন চিকিৎসকের এই সব পরামর্শ
তবে করোনা আবহে মানুষের মতো বাড়ির না-মানুষ সদস্যদের ও জীবনযাপন কিছুটা পালটে গেছে। সকালে হাঁটা বা বিকেলে পার্কে যাওয়া বন্ধ। রোজকার রুটিন বদলে যাওয়ায় ওদের মনেও চাপ পড়ছে বললেন সিদ্ধার্থবাবু। বেশিরভাগ মানুষই বিড়াল, কুকুর-সহ বাড়িতে থাকা না মানুষদের ‘পোষ্য’ বলেন। এই শব্দটায় আপত্তি আছে সিদ্ধার্থবাবুর।
কোভিড আবহে চারপেয়ে সদস্যের সঙ্গে সময় কাটালে মনও ভাল থাকবে পরস্পরের। ছবি: শাটারস্টক
তাঁর মত, এরা বাড়ির সদস্য, পোষ্য নয়, ‘সন্তান’ শব্দটাই যথাযথ। কথা বলতে না পারলেও ওরা সব কিছু বুঝতে পারে। মানুষের ওপর ওরা অত্যন্ত নির্ভরশীল। নিজেদের ওরা আমাদের সমান মনে করে। যাঁদের বাড়িতে অবলা না-মানুষ থাকে, তাঁদের তরফ থেকে এদের অবশ্যই সঠিক মর্যাদা দিতে হবে। রোগের আতঙ্কে অনেকে এদের বাড়ি থেকে বার করে দেন। এই অমানবিক কাজটি করবেন না। কোভিডের সময় কী ভাবে বাড়ির চারপেয়ে সদস্যদের ভাল রাখতে হবে, সে বিষয়ে কয়েকটি টিপস দিলেন সিদ্ধার্থবাবু।
• পরিচ্ছন্নতার ব্যাপারে সতর্ক থাকতে হবে। নিয়মিত স্নান করিয়ে লোম আঁচড়ে পরিষ্কার করে রাখতে হবে।
• লোম ভিজে থাকলে এরা চেটে পরিষ্কার করে। পেটে লোম চলে গিয়ে বলের মতো পাকিয়ে পেট ব্যথা ও বমির ঝুঁকি বাড়ে। চেষ্টা করুন ড্রায়ার দিয়ে ভিজে লোম শুকনো করে দেওয়ার।
• বাইরে হাঁটতে নিয়ে গেলে বাড়ি ফিরে নিজেরা যেমন হাত মুখ ধুয়ে পরিষ্কার করে নেন, প্রাণীদেরও সেই ভাবে শ্যাম্পু দিয়ে পরিষ্কার করে দিলে ভাল হয়। তবে এই সময়টায় রাস্তার বদলে বাড়ির ছাদে দৌড়াদৌড়ি করে খেলতে দিতে পারেন। কুকুরকে বাইরে নিয়ে গেলে মোজার মত সফট শু পরিয়ে দিন।
• প্রতি মাসে কুকুর, বিড়ালকে কৃমির ওষুধ খাওয়ানোর ব্যাপারটা ভুললে চলবে না।
• কোনও রকম অসুস্থতা দেখলে ভেটেরনারি ক্লিনিকে নিয়ে যেতে হবে। সরকারি ভেটেরনারি ক্লিনিকের আউটডোরে কার্ড করিয়ে রাখলে সুবিধা হবে।
নিয়মিত স্নান করিয়ে লোম আঁচড়ে পরিষ্কার করতে হবে বাড়ির না-মানুষ সদস্যটিকে। ছবি: শাটারস্টক
• বমি, পেট খারাপ বা জ্বর হয়েছে বুঝলে টেলিফোন করে চিকিৎসককে জানাতে হবে। যদি প্রয়োজন হয়, অবশ্যই বাচ্চাকে নিয়ে চিকিৎসকের কাছে যেতে হবে।
• লকডাউনের সময় অনেকেরই টিকা দেওয়া হয়নি, বকেয়া টিকা ফেলে না রেখে দিয়ে দিন।
• বাড়ির মেঝে পরিষ্কারে ব্যবহৃত ফিনাইল বা এই ধরনের কেমিক্যাল থেকে প্রাণীদের অ্যালার্জি হতে পারে। সেক্ষেত্রে ঘর মোছার জলে লিকুইড সাবান মিশিয়ে পরিষ্কার করা উচিত। আর অ্যালার্জির জন্যে বয়স ও ওজন অনুযায়ী কুকুর, বিড়াল বা অন্য প্রাণীদের অ্যান্টি অ্যালার্জিক খাওয়ানোর দরকার। অবশ্যই চিকিৎসকের কাছে ডোজ জেনে নিয়ে ওষুধ দেবেন।
• পুষ্টিকর খাবার দিতে ভুলবেন না। টিনজাত খাবার পাওয়া না গেলে বাড়িতে তৈরি খাবার দিন।
• অনেক সময় টানা বাড়ি থাকলে শারীরিক পরিশ্রম কমে গেলে প্রাণীদের মন খারাপ হতে পারে। এক্ষেত্রে বাড়ির বারান্দায় খেলার সরঞ্জাম দিয়ে খেলতে দিতে পারেন। এছাড়া সিঁড়ি দিয়ে বার বার ওঠানামা করাতে পারলেও ভাল হয়। নিজেরা ভাল থাকুন, না-মানুষ বাচ্চাদেরও ভাল রাখুন।
আরও পড়ুন:কেউ উপসর্গহীন বাহক, কেউ করোনা সংক্রমিত, ভাইরাসের আচরণ বাচ্চাদের ক্ষেত্রে কেমন
(জরুরি ঘোষণা: কোভিড-১৯ আক্রান্ত রোগীদের জন্য কয়েকটি বিশেষ হেল্পলাইন চালু করেছে পশ্চিমবঙ্গ সরকার। এই হেল্পলাইন নম্বরগুলিতে ফোন করলে অ্যাম্বুল্যান্স বা টেলিমেডিসিন সংক্রান্ত পরিষেবা নিয়ে সহায়তা মিলবে। পাশাপাশি থাকছে একটি সার্বিক হেল্পলাইন নম্বরও।
• সার্বিক হেল্পলাইন নম্বর: ১৮০০ ৩১৩ ৪৪৪ ২২২
• টেলিমেডিসিন সংক্রান্ত হেল্পলাইন নম্বর: ০৩৩-২৩৫৭৬০০১
• কোভিড-১৯ আক্রান্তদের অ্যাম্বুল্যান্স পরিষেবা সংক্রান্ত হেল্পলাইন নম্বর: ০৩৩-৪০৯০২৯২৯)