সারা দিন কেবলই ছুটে যাওয়া। অফিস থেকে বাড়ি, আবার বাড়ি থেকে অফিস। সমান তালে দু’দিক সামাল দেওয়ার পরে মেয়েদের ভাল লাগা, ভালবাসাগুলোর উপরে ধুলো জমে যায় অজান্তেই। বিশেষ করে ছোট বাচ্চা থাকলে তো আর কথাই নেই। নিত্য এই ব্যস্ততার মধ্যে নিজের জন্য হারিয়ে যাওয়া সময় এক দিন বিদ্রোহ করে। হঠাৎ হঠাৎ মেজাজ বিগড়ে যাওয়া, গুরুত্বপূর্ণ কথা ভুলে যাওয়া, কাজে ভুল হওয়া ইত্যাদি যার পূর্বাভাস। বিদ্রোহ দমনের একটাই ওষুধ—অবসর। কিন্তু চাইলেই কি তা পাওয়া যায়? উত্তর ‘না’। তা হলে উপায়! ছোটবেলায় আমরা পড়াশোনা ছাড়াও কত কিছু নিয়ে মেতে থাকতাম, ফুরফুরে থাকতাম। তাই মনে করে দেখুন সেই সময় পড়াশোনা ছাড়া আপনি আর কী করতেন? ছবি আঁকা, নাচ, গান... স্কুলে শিখেছিলেন রঙিন কাগজ দিয়ে অরিগ্যামি কিংবা গ্রিটিংস কার্ড বানাতে। অনেকেই হয়তো বাড়িতে শিখেছিলেন সেলাই। ধুলো ঝেড়ে সেই অতীত ফিরিয়ে আনুন। কর্মক্ষেত্র থেকে বাড়ি ফিরে বা গৃহবধূরা কাজ সারার পরে আধ ঘণ্টা সময় দিন নিজেকে। সঙ্গে নিতে পারেন সন্তানকেও।
আকাশের রং সবুজ...
সমীক্ষা বলছে, প্রতিদিন ২০ মিনিট কেউ যদি ছবি আঁকেন, তা হলে মনের মধ্যে জমে থাকা নেগেটিভ এনার্জি অনেকটাই কমে যায়। নানা ধরনের রং নিয়ে আঁকিবুকি মনের ভয়কে সরিয়ে দেয়। প্যাস্টেল, জল রং বা অ্যাক্রিলিক— যেমন খুশি রং নিয়ে সাদা পাতায় আঁকিবুকি কাটুন। মন যদি চায় আকাশের রং সবুজ হবে বা মাটির রং নীল, তবে প্রশ্রয় দিন মনকে। সম্ভব হলে ছবির বই কিনে আনুন, যে বইয়ে আঁকা থাকে, শুধু রং করতে হয়। এখন তো বিদেশে ক্লান্তি দূর করার জন্য কালারিং বই পাওয়া যায়। ছবি আঁকার পাশাপাশি তৈরি করতে পারেন রঙিন কাগজ কেটে কার্ড বা কাগজ ভাঁজ করে করে বানিয়ে ফেলুন পদ্মফুল, পাখি, এরোপ্লেন। জানা না থাকলে অরিগ্যামি শিখে নিন ইউটিউব দেখে। একটি সমীক্ষা বলছে, উপহারের মধ্যে বাচ্চারা সব চেয়ে পছন্দ করে আঁকার সরঞ্জাম। সুতরাং আপনার ছোটটিকেও জুড়ে নিন এই সময়। দেখবেন শান্ত হয়ে সেও আপনার মতোই ছবি আঁকছে।
গলা ছেড়ে হোক গান
অনেক দিন গানের চর্চা নেই কিংবা কোনও কালেই সে ভাবে গানের স্কুলে যাওয়া হয়নি। গানের দৌড় ওই বাথরুমেই। তাই গলা ছেড়ে গান গাইলে যদি লোকে ভীষ্মলোচন বলে! মাথা থেকে বার করে দিন কথাগুলো। গলা ছেড়ে গান করুন, আপনার মন যা চায়। একটু বেসুরো হলেও দমে যাবেন না। আপনি নিজের ভাল লাগার জন্য গান গাইছেন, কোনও অনুষ্ঠানে নয়। গান সারা দিনের ক্লান্তি দূর তো করেই, আত্মবিশ্বাসও তৈরি হয়। উচ্চারণ স্পষ্ট হয়। স্মৃতিশক্তিও হয় জোরদার। এমনকি ব্যথা কমাতে সাহায্য করে।
নাচ আত্মবিশ্বাস তৈরি করে
আত্মবিশ্বাস তৈরি করতে, ওজন ঠিক রাখতে, পেশি ও হাড় মজবুত রাখতে নাচ খুবই গুরুত্বপূর্ণ। ছোট বেলায় নাচ শিখে থাকলে আবার পায়ে ঘুঙুর পরে নিন। ফিট থাকবেন। তবে হাঁটু বা কোমরে সমস্যা থাকলে, ডাক্তারের পরামর্শ নিয়ে নিন।
সরগম শেখাবে ইন্টারনেট
গিটার, সেতার, সরোদ, সিনথেসাইজ়ার, বেহালা, বাঁশি, মাউথঅরগ্যান— ছোটবেলায় যদি কোনও বাদ্যযন্ত্র বাজানো শিখে থাকেন, তা হলে ধুলো ঝেড়ে সেটিকে আবার বার করুন। এমনও তো হতেই পারে, ছোটবেলায় ইচ্ছে থাকলেও শেখা হয়ে ওঠেনি। তা হলে এই তো সময় শখ পূরণ করার। শেখার জন্য স্কুলে যাওয়ার ফুরসত না থাকলে, ইন্টারনেট আপনাকে শিখিয়ে দেবে সা-রে-গা-মা। মনে রাখবেন, বাদ্যযন্ত্র সাহায্য করে একাগ্রতা বাড়াতে এবং ভুলে যাওয়া আটকাতে।
রোজকার ঝোল-ভাত নয়...
রান্না করতে ভালবাসেন অনেকেই। রান্না করলে মন ভাল হয়ে যায়। কিন্তু সময়ের অভাব। কর্মক্ষেত্র থেকে ফিরে বা ছুটির দিনে এমন কিছু পদ তৈরি করে ফেলুন যা রোজকার ঝোল ভাতের চেয়ে আলাদা, রান্নার পদ্ধতিও সহজ। এ ক্ষেত্রে আপনার সন্তানকে পেঁয়াজ, রসুন বা কড়াইশুঁটি ছাড়ানোয় হাত লাগাতে বলুন। এতে সে খুশি তো হবেই, পাশাপাশি আপনার সঙ্গও পাবে।
বাড়ির নানা কাজের মধ্যে মা হিসেবে সন্তানের হোমওয়র্ক দেখা অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ কাজ। ইচ্ছে না হলেও এই কর্তব্যকে এড়িয়ে যেতে পারেন না। কিন্তু আপনার নিজস্ব আধ ঘণ্টায় যদি সঙ্গী করেন সন্তানকে, তা হলে সেও পড়াশোনা বা হোমওয়ার্ক আগাম এগিয়ে রাখার উৎসাহ পাবে। গান, নাচ বা ছবি আঁকার মতো বিষয়ে তারও ভালবাসা ক্রমশ তৈরি হতে থাকবে।
ঊর্মি নাথ
মডেল: তৃণা
মেকআপ: পরিণীতা সরকার
ছবি: অয়ন নন্দী
আর্ট স্টুডিয়ো ও পেন্টিং: হিমশিখা পালিত