এই সুপারফুডেই মাত ভারতীয় ক্রিকেটের ড্রেসিংরুম! ছবি: টুইটার থেকে নেওয়া।
‘‘গায়ে গত্তি না এলে চাপের মুখে কৌশলে বল করবে কী করে?’’
‘কারনাল প্রিমিয়ার লিগ’ খেলতে আসা রোগাসোগা চেহারার ছেলেটিকে ডেকে বলেছিলেন টুর্নামেন্টের আয়োজক সুমিত নারওয়াল। যাঁর হাত ধরেই কয়েক বছর পর দিল্লি ক্রিকেটে নিজেকে প্রতিষ্ঠা করতে আসবে ছেলেটি। কিন্তু গায়ে গত্তি আসবে কোত্থেকে! হরিয়ানার হতদরিদ্র ড্রাইভারের পরিবারে তখন যে পেট ভরে খাবারই জোটে না রোজ!
তবু নিজের খাবারদাবারের প্রতি বিশেষ যত্নবান হয়েছিলেন নবদীপ সাইনি। ভারতীয় ক্রিকেটের উদীয়মান তারকা। হাতে টাকাপয়সা বিশেষ না থাকায় কম খরচেও কী করে বেশি পরিমাণ পুষ্টিগুণ পেতে হয়, ডায়েটে রাখার চেষ্টা করতেন সে সব। নিজেই বানাতেন নানা রকম ফল দিয়ে বানানো ‘সুপারফুড’। নিজেকে তৈরি করতে ডায়েট থেকে ক্রিকেটীয় শট, ফিটনেস থেকে ব্যায়াম, সবেতেই মনে রাখতেন নারওয়ালের নানা পরামর্শ।
আরও পড়ুন: উচ্চ রক্তচাপ ডেকে আনে হার্ট অ্যাটাক-স্ট্রোক, অসুখ নিয়ন্ত্রণে রাখতে কী কী করবেন?
শুক্রবার নিউজিল্যান্ডের বিরুদ্ধে চতুর্থ টি টোয়েন্টিতে নবদীপের ১৯ ওভারে মাত্র ৪ রান দেওয়া ইতিমধ্যেই প্রশংসিত হয়েছে। নিউজিল্যান্ডের দুই সেট ব্যাটসম্যানকে আটকে দিয়েছিলেন হাতের জাদুতে। চলতি সিরিজে তাঁর প্রথম ম্যাচ ছিল এটি।
চাপের মুখে কৌশলে বল করার ক্ষমতা যে ইতিমধ্যেই নবদীপ অর্জন করেছেন তা তো প্রমাণিত। তবে শুধু বলের জাদুই নয়, তাঁর হাতের জাদুতেও নবদীপ মাতিয়েছেন ড্রেসিংরুম। ব্যাট-বলের কঠিন লড়াই, টিমমেটদের সঙ্গে হাসি-মশকরার মধ্যেই এ বার নবদীপ বানিয়ে ফেললেন ‘সুপারফুড’! খেতে দিলেন মণীশ পাণ্ডেকে। যা খেয়ে মণীশ বলেই ফেললেন, “এটা আমার খাওয়া সেরা স্মুদিগুলোর একটা!”
দেখুন সেই ভিডিয়ো।
কী এই সুপারফুড? কী কী উপকরণ প্রয়োজন?
এক চামচ প্রোটিন পাউডার একটা কলা বীজ বাদ দিয়ে কুচোনো আপেল কিছু কুচোনো ড্রাই ফ্রুটস (কাজু-কিসমিস-পেস্তা-আমন্ড) জল।
আরও পড়ুন: দূরে থাকুক নিউমোনিয়া
কী ভাবে বানাবেন?
এই সুপারফুড বানানোর পদ্ধতি একেবারেই সরল। আর পাঁচটা সাধারণ স্মুদির মতোই। এক চামচ প্রোটিন পাউডার, কলা, আপেল ও ড্রাই ফ্রুটগুলি মিক্সিতে দিয়ে জল মিশিয়ে নিন। এমন পরিমাণে জল মেশাবেন, যাতে ব্লেন্ড হওয়ার পর মিশ্রণটি খুব তরল না হয়ে যায়। ভাল করে ব্লেন্ড করে নিলেই তৈরি এই স্বাস্থ্যকর স্মুদি!
কতটা উপকারী এই ‘সুপারফুড’?
পুষ্টিবিদ সুমেধা সিংহের মতে, ফল দিয়ে বানানো যে কোনও স্মুদিই স্বাস্থ্যকর। আর এই স্মুদিতে যোগ হয়েছে প্রোটিন পাউডার। ফলে নো কার্বস, লো ফ্যাট ডায়েটে এই স্মুদি বিশেষ উপকারী। এমনিতেই স্বাস্থ্যকর উপায়ে মেদ ঝরাতে, ডায়াবিটিস, থাইরয়েড, হৃদরোগ দূর করতে এই নো কার্বস, লো ফ্যাট ডায়েট দেওয়া হয়। এই ডায়েট অনুযায়ী, খাদ্যতালিকায় প্রোটিনই রাখতে হবে বেশি করে। সুতরাং সেই ডায়েটে প্রোটিনের জোগান দেওয়ায় এমন ‘সুপারফুড’-এর বিশেষ ভূমিকা রয়েছে।
খেলোয়াড়দের ফিটনেসের সঙ্গে যুক্ত চিন্ময় রায়ের মতে, হোয়ে প্রোটিন পাউডার ভারতীয় ক্রিকেটাররা অনেকেই খান। বিশেষ করে এই ধরনের প্রোটিন পাউডার নিরামিষাশীদের জন্য খুব উপকারী। মাছ-মাংস না খাওয়ায় যেটুকু প্রোটিনের ঘাটতি তাঁদের শরীরে তৈরি হয়, তা পুষিয়ে দেয় এমন প্রোটিন পাউডার। দুধের ক্যাসিন থেকে এই হোয়ে প্রোটিন তৈরি হয়। পেশীগঠন ও তা মজবুত করতে এমন পাউডারের বিশেষ ভূমিকা রয়েছে। প্রোটিন পাউডারের সঙ্গে এই স্মুদিতে যোগ হয় কলা, আপেল ও কিছু শুকনো ফল— যারা শরীরকে সার্বিক ভাবে সুস্থ রাখে ও শক্তি জোগায়।
সুতরাং এমন স্বাদু স্মুদি অবশ্যই যোগ করুন প্রতি দিনের ডায়েটে। না হয় আপনি নবদীপ সাইনি নন, তবে আপনিই বা কম কীসে!