দিল্লি নয়, মুম্বই নয়, বেঙ্গালুরুও নয়। সব শহরকে পিছনে ফেলে প্রথম হয়েছে কলকাতা।
সম্প্রতি একটি বেসরকারি সংস্থা ভারতের বিভিন্ন শহরে আট থেকে ষোলো বছর বয়সী ছেলেময়েদের মধ্যে প্রোটিনের অভাব নিয়ে সমীক্ষা চালায়। সেখানে উঠে এসেছে, কলকাতায় যত শতাংশ শিশু প্রোটিনের অভাবে ভুগছে, তা দেশের অন্য শহরের তুলনায় খানিকটা কম।
ওই সমীক্ষার পরিসংখ্যান অনুযায়ী, কলকাতায় ৪৩ শতাংশ শিশু প্রোটিনের সমস্যায় ভুগছে। তালিকায় এর উপরেই দিল্লি, যেখানে ৬০ শতাংশ ছেলেমেয়ের এই অভাব রয়েছে। তার পরে মুম্বই, বিজয়ওয়াড়া, চেন্নাই। তালিকা অনুযায়ী ভারতে সবচেয়ে বেশি প্রোটিনের অভাবে ভুগছে লখনউ শহর। সেখানে প্রায় ৯০ শতাংশ শিশুর এই সমস্যা রয়েছে।
যদিও বিশেষজ্ঞদের একাংশ মনে করছেন, দেশের অন্য শহরের তুলনায় কলকাতার অবস্থা ভাল হলেও যত সংখ্যক শিশুর প্রোটিনের অভাব রয়েছে, সেটাও স্বাস্থ্য পরিস্থিতির জন্য খুব ইতিবাচক নয়। পাশাপাশি একাংশ মনে করছেন, কলকাতার সার্বিক ছবি এতটাও উজ্জ্বল নয়। দীর্ঘ দিন ধরে শিশুদের নিয়ে কাজ করা একটি স্বেচ্ছাসেবী সংস্থার কর্তা সুস্মিতা ঘোষ বলেন, ‘‘শহরে বস্তিতে থাকা ছেলেমেয়েরা নানা শারীরিক সমস্যায় ভোগে। অনেক সময় শহুরে বাসিন্দাদের মধ্যে ওদের ধরা হয় না। কিন্তু শহরের সার্বিক ছবি তুলে ধরত হলে ওদের শারীরিক অবস্থার দিকও দেখতে হবে।’’
তাঁরা জানাচ্ছেন, অধিকাংশ মানুষের মধ্যে সঠিক খাদ্যাভ্যাস নিয়ে নানা ভ্রান্ত ধারণা রয়েছে। সমীক্ষায় উঠে আসা পরিসংখ্যান অনুযায়ী, ৯৩ শতাংশ ভারতীয় খাবারের গুণাগুণ সম্পর্কে সচেতন নন। বিশেষত, গর্ভাবস্থায় কী ধরনের খাবার খাওয়া উচিত, সন্তান ও মা দু’জনের শরীরের জন্য কতটা প্রোটিন, ভিটামিন জরুরি সেগুলো নিয়ে সচেতনতার অভাব রয়েছে। প্রায় ৯৭ শতাংশ গর্ভবতী মহিলা প্রতি দিনের খাবারে সব উপাদানের গুরুত্ব সম্পর্কে জানেন না। অধিকাংশ ক্ষেত্রে প্রোটিন ও ভিটামিন কম এবং কার্বোহাইড্রেট জাতীয় খাবার অধিক খাওয়ার জেরে হার্টের সমস্যা, ডায়াবেটিসের মতো সমস্যা বাড়ছে।
চিকিৎসকেরা জানাচ্ছেন, শিশুদের বড় হয়ে ওঠার জন্য প্রোটিন খুব গুরুত্বপূর্ণ। শারীরিক বিকাশের পাশাপাশি মস্তিষ্কের বিকাশেও প্রোটিন খুব জরুরি। শুধু পেশি মজবুত নয়, দেহের প্রতিটি কোষ তৈরিতে প্রোটিনের গুরুত্বপূ্র্ণ ভূমিকা রয়েছে। প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ানোর পাশাপাশি ত্বক, চুল ভাল রাখতেও প্রোটিন জরুরি। শিশুদের খাবারে কার্বোহাইড্রেট, প্রোটিন, ভিটামিন— সব কিছুর সাম্য থাকা জরুরি।
শিশুরোগ বিশেষজ্ঞ কেয়া ঘোষ উত্তমের বক্তব্য, খাদ্যাভ্যাসের ক্ষেত্রে কলকাতার পরিস্থিতি দেশের অন্যান্য শহরের তুলনায় ভাল। কারণ, প্রতি দিনের খাবারের মেনুতে আমিষ খাবারের পরিমাণ পর্যাপ্ত থাকে। তাঁর কথায়, ‘‘নিরামিষ খাবারে পর্যাপ্ত প্রোটিন থাকে না। কিন্তু আমিষ খাবারে সেটা থাকে। বাঙালির খাবারের মধ্যে যে বৈচিত্র থাকে সেটা খাবারে সামঞ্জস্য তৈরি করে। ভাত কিংবা মাংস কোনওটাই বেশি পরিমাণ খাওয়া ঠিক নয়। ভাত, ডাল, আনাজ, মাছ-মাংস সব কিছু খাবারের তালিকায় থাকা জরুরি। তবে, প্রোটিন যেন বেশি না হয় সে দিকেও খেয়াল রাখা দরকার। কারণ অতিরিক্ত মাংস জাতীয় খাবার খেলে ফ্যাট বেড়ে যেতে পারে। সেটা আবার স্বাস্থ্যের পক্ষে ভাল নয়।’’
তবে, খাদ্য তালিকায় শুধু নিরামিষ খাবার থাকলে দুধ, সয়াবিন জাতীয় খাবারের উপর বিশেষ গুরুত্ব দেওয়া উচিত বলে মনে করছেন চিকিৎসক অর্ণব হালদার। তাঁর কথায়, ‘‘শিশুর বিকাশে প্রোটিন খুব জরুরি। তাই আমিষ কিংবা নিরামিষ যে কোনও খাবারের মধ্যে দিয়ে সেটা শরীরে যেতে হবে। তবে খাবারে সামঞ্জস্য থাকা খুব দরকার। তাই রোজ শুধু হাই-প্রোটিন যেন না হয় সেটাও দেখতে হবে।’’ আরও এক শিশুরোগ বিশেষজ্ঞ রুচিরেন্দু সরকার বলেন, ‘‘শারীরিক ভাবে সুস্থ হয়ে উঠতেও প্রোটিন জরুরি। যে কোনও অস্ত্রোপচারের পরে শিশুর শরীরে প্রোটিনের অভাব থাকলে ক্ষতস্থান ঠিক হতে বেশি সময় লাগে। এ ছাড়া অস্ত্রোপচারের পরবর্তী সময়েও সমস্যাও তৈরি হতে পারে।’’