শিশুদের নাক ডাকায় বিপদসঙ্কেত

চার বছরের ঋক ঘুমোনোর সময়ে প্রবল নাক ডাকত। এত কম বয়সে এমন নাক ডাকে কেন, সে নিয়ে খানিকটা অবাক হলেও ব্যাপারটাকে খুব একটা গুরুত্ব দেননি ঋকের মা-বাবা।

Advertisement

সৌভিক চক্রবর্তী

কলকাতা শেষ আপডেট: ১৭ অগস্ট ২০১৫ ০২:৫৯
Share:

চার বছরের ঋক ঘুমোনোর সময়ে প্রবল নাক ডাকত। এত কম বয়সে এমন নাক ডাকে কেন, সে নিয়ে খানিকটা অবাক হলেও ব্যাপারটাকে খুব একটা গুরুত্ব দেননি ঋকের মা-বাবা।

Advertisement

কিন্তু কিছু দিন পর থেকে দেখা দিল আরও নানা সমস্যা। ঘুমের সময়ে মুখ বন্ধ হয় না, নিঃশ্বাসের কষ্ট, মাঝেমধ্যেই সর্দি-কাশি, খেতে অসুবিধা, গলা শুকিয়ে যাওয়া, কানে কম শোনা ইত্যাদি বিভিন্ন কারণে অসুস্থ হয়ে পড়তে লাগল ঋক। চিন্তিত মা-বাবা ছুটলেন চিকিৎসকের কাছে। আর তখনই জানা গেল, এই সমস্যার জন্য দায়ী একটি বিশেষ গ্রন্থি, যার নাম অ্যাডিনয়েড। ইদানীং বহু শিশুই এই গ্রন্থির নানা সমস্যায় ভুগছে।

চিকিৎসকেরা জানাচ্ছেন, শিশুদের নাকের পিছনে একটু উপরের দিকে থাকে অ্যাডিনয়েড গ্রন্থি। পাঁচ বছর বয়সের পর থেকে এটি একটু একটু করে ছোট হতে থাকে এবং বয়ঃসন্ধির পরে প্রায় মিলিয়ে যায়। এমনিতে শ্বাস-প্রশ্বাস নেওয়া বা খাওয়ার সময়ে এটি নানা রকম ভাইরাস বা ব্যাকটেরিয়ার হাত থেকে শিশুদের রক্ষা করে। কিন্তু কোনও কারণে অ্যাডিনয়েড গ্রন্থি ফুলে উঠলে শিশুরা নানা ভাবে অসুস্থ হয়ে পড়ে। তাই সঠিক সময়ে চিকিৎসা না হলে তাদের কথা বলার সমস্যা, কানে কম শোনা, শ্বাসপ্রশ্বাসে অসুবিধা হয়। এমনকী, টানা মুখ দিয়ে নিঃশ্বাস নিতে হয় বলে দাঁতের গঠন খারাপ হয়ে মুখের বিকৃতিও দেখা দিতে পারে। হতে পারে ব্রঙ্কাইটিস বা নিউমোনিয়ার মতো অসুখও।

Advertisement

এর চিকিৎসা কী? অ্যাডিনয়েড গ্রন্থি অপসারণ ছাড়া অন্য কোনও রাস্তা নেই। কিন্তু এ ব্যাপারে একমত হলেও অপসারণের পদ্ধতি নিয়ে মতভেদ রয়েছে চিকিৎসক মহলে। চিকিৎসকদের একাংশের মতে, অ্যাডিনয়েড গ্রন্থির অপসারণ, ডাক্তারি ভাষায় যার নাম অ্যাডিনয়েডেক্টমি, তার সর্বাপেক্ষা নিরাপদ পদ্ধতি হল ‘কোবলেশন থেরাপি’। এই পদ্ধতিতে বাইপোলার রেডিও ফ্রিকোয়েন্সি এনার্জির মাধ্যমে ফুলে ওটা অ্যাডিনয়েড গ্রন্থিকে সম্পূর্ণ ভাবে নির্মূল করা যায়। ফলে আর কখনও এই সমস্যা হওয়ার ভয় থাকে না। পাশাপাশি, কোবলেশন থেরাপির সবচেয়ে বড় সুবিধা হল এতে কোনও রক্তপাত হয় না।

ইএনটি চিকিৎসক দীপঙ্কর দত্ত বলেন, ‘‘কোবলেশন থেরাপি এই মুহূর্তে অ্যাডিনয়েডেক্টমির ক্ষেত্রে আন্তর্জাতিক স্তরে স্বীকৃত সবচেয়ে ভাল পদ্ধতি। রক্তপাতহীন, যন্ত্রণাহীন এই পদ্ধতিতে সকালে হাসপাতালে ভর্তি হয়ে রাতের মধ্যেই বাড়ি ফিরে যাওয়া যায়।’’ একই কথা বলছেন ইএনটি চিকিৎসক তুষারকান্তি ঘোষও। তাঁর কথায়, ‘‘এমন একটা সমস্যাকে বেশি দিন বয়ে বেড়ানোর কোনও অর্থ হয় না। শিশুদের ক্ষেত্রে যেহেতু কাটাছেঁড়ায় বাবা-মায়েরা ভয় পান, সে কারণেই এই রক্তপাতহীন প্রক্রিয়া তাঁদেরও অনেকটা ভরসা জোগাবে।’’

তবে কোবলেশন থেরাপির গুরুত্ব মানতে নারাজ ইএনটি চিকিৎসকদের অন্য একটি অংশ। তাঁদের মতে, অ্যাডিনয়েডেক্টমির প্রচলিত পদ্ধতি অর্থাৎ ফুলে ওঠা অ্যাডিনয়েড গ্রন্থিকে কেটে বাদ দেওয়াই সবচেয়ে ভাল। এই পদ্ধতিকে ডাক্তারি পরিভাষায় বলে ন্যাজাল এন্ডোস্কোপি উইথ মাইক্রো ডিব্রাইডার (কনভেনশনাল মেথড)। এসএসকেএম হাসপাতালের ইএনটি বিভাগের প্রধান, চিকিৎসক অরুণাভ সেনগুপ্ত বলেন, ‘‘ভারতবর্ষে কোবলেশন থেরাপি মোটেই জনপ্রিয় হয়নি। কারণ এর খরচ অনেকটাই বেশি। অস্ত্রোপচারে সামান্য রক্তপাত হয় ঠিকই, কিন্তু তেমন কোনও ঝুঁকি একেবারেই নেই।’’

কোবলেশন থেরাপির অতিরিক্ত খরচ প্রসঙ্গে তুষারকান্তিবাবু বলেন, ‘‘নতুন কোনও পদ্ধতি শুরু হলে প্রাথমিক ভাবে খরচ কিছুটা বেশি হয়। ধীরে ধীরে খরচ কমবে। তবে আগে শিশুদের যতটা কষ্ট হতো, তার তুলনায় এই বাড়তি খরচ হয়তো কিছুই নয়।’’

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement