Cheese

nutrition: দুধের পুষ্টি মিলবে চিজ়েও

চিজ়ের গুণ অনেক। কিন্তু সুস্থ থাকতে চিজ়ের পরিমাণ নিয়ন্ত্রণ করাও জরুরি।

Advertisement

নিজস্ব প্রতিবেদন

কলকাতা শেষ আপডেট: ১২ ফেব্রুয়ারি ২০২২ ০৬:৫৩
Share:

প্রতীকী ছবি।

মূলত দীর্ঘদিন দুধ সংরক্ষণের উদ্দেশ্যেই চিজ় তৈরি করা শুরু হয়। প্রযুক্তিহীন প্রাচীন সমাজে ঠান্ডায় তা দীর্ঘ দিন ভাল থাকত। ফলে মানুষের পুষ্টিরও জোগান দিত। সময়ের সঙ্গে সঙ্গে চিজ়ের জগতেও সংযোজিত হয়েছে কত নাম। মোজ়ারেলা, পারমেশান, ফেটা, সুইস চিজ়, চেডার ইত্যাদি। কিন্তু কোন চিজ় খাওয়া স্বাস্থ্যকর এবং কতটা পরিমাণে খাবেন, সেটা জানতে হবে।

Advertisement

দুধের সমতুল্য

গুণের দিক থেকে চিজ় প্রায় দুধের সমান। পুষ্টিবিদ সুবর্ণা রায়চৌধুরী বললেন, ‘‘চিজ় প্রোটিনের ভাল উৎস। তাই নিরামিষাশীরা রোজ খাবারে চিজ় রাখতে পারেন। চিজ়ে ক্যালশিয়ামও থাকে প্রচুর পরিমাণে। আমাদের দেশের মহিলারা অনেক সময়েই ক্যালশিয়ামের অভাবে ভোগেন। বিশেষত মেনোপজ়ের পর থেকেই হাড়ের সমস্যা দেখা দেয়। অস্টিয়োপোরোসিসের সমস্যাও খুব কমন। তাই রোজকার খাবারে চিজ় রাখতে পারেন। ডায়েটে ফ্যাটের পরিমাণ নিয়ন্ত্রণ করে সেখানে চিজ় সংযোজন করাই যায়। তবে অবশ্যই তা ব্যক্তিবিশেষের স্বাস্থ্য অনুযায়ী ঠিক করতে হবে।’’

Advertisement

কোন চিজ় ভাল?

কোন চিজ় খাচ্ছেন, সেটা অবশ্যই বিবেচনাসাপেক্ষ। কারণ কিছু চিজ়ে যেমন ক্যালরি কনটেন্ট বেশি, কিছু চিজ়ে সোডিয়ামের পরিমাণ বেশি। ‘‘হার্ড চিজ় আর সফ্ট চিজ়ে ক্যালশিয়াম ও প্রোটিন কনটেন্ট ভিন্ন। চেডার পড়ে হার্ড চিজ়ের মধ্যে আর সুইস চিজ় হল সফ্ট চিজ়। হার্ড চিজ়ে ক্যালশিয়াম ও প্রোটিনের পরিমাণ সফ্ট চিজ়ের তুলনায় অনেক বেশি থাকে। হার্ড চিজ়ে ল্যাক্টোজ়ের পরিমাণ কম থাকে। ফলে ল্যাক্টোজ় সহ্য না হলে হার্ড চিজ়ে খুব একটা অসুবিধে হয় না। মোজ়ারেলায় ৮৫-৯০ ক্যালরি পাওয়া যায়। অন্য দিকে চেডারের ক্যালরি কনটেন্ট প্রায় ১৫০ মতো। চেডারের ফ্যাট কনটেন্টও মোজ়ারেলার তুলনায় বেশি। তাই ওজন নিয়ে সচেতন হলে চেডারের চেয়ে মোজ়ারেলা ভাল। আবার ফেটায় সোডিয়াম কনটেন্ট অন্যান্য চিজ়ের তুলনায় অনেক বেশি। তাই উচ্চ রক্তচাপ বা কিডনির সমস্যা থাকলে ফেটার পরিমাণ বাঁধতে হবে,’’ বলে জানালেন ক্লিনিক্যাল নিউট্রিশনিস্ট হিনা নাফিস। তবে স্বাস্থ্যের দিক থেকে দেখতে গেলে কটেজ চিজ় অনেক বেশি উপকারী ও স্বাস্থ্যকর বলে জানালেন তিনি।

কখন চিজ় খাবেন না

পুষ্টিবিদ কোয়েল পালচৌধুরী বললেন, ‘‘মাইগ্রেন ও ডিপ্রেশনের মতো রোগের ওষুধ চললে চিজ় খাওয়ার পরিমাণ নিয়ন্ত্রণ করতে হয়। উচ্চ রক্তচাপের সমস্যাতেও চিজ় বাদ পড়বে, কারণ চিজ়ে সোডিয়াম কনটেন্ট অনেক বেশি থাকে। ল্যাক্টোজ় ইনটলারেন্ট হলেও তাঁদের ডায়েট থেকে চিজ় বাদ রাখতে হবে। ওবিস রোগীদের খাবারেও চিজ়ের পরিমাণ নিয়ন্ত্রণ করা প্রয়োজন।’’ ইদানীং পিৎজ়া বা স্যান্ডউইচে অনেক সময়ে এক্সট্রা চিজ় সংযোজন করার সুযোগ থাকে। সে ক্ষেত্রে বাচ্চারা সেই সুযোগ নিলেও বড়দের তা এড়িয়ে যাওয়াই ভাল। কিডনির রোগ থাকলেও চিজ় বাদ দিতে হবে খাদ্যতালিকা থেকে।

এ বিষয়ে আর-একটি দিক সম্পর্কে সচেতন করলেন হিনা নাফিস, ‘‘প্রাকৃতিক চিজ়ের তুলনায় প্রসেসড চিজ়ে সোডিয়াম কনটেন্ট বেশি থাকে। কিন্তু আমাদের দেশের স্ট্রিট ফুড বা চলতি ফুড জয়েন্টে পাস্তা, পিৎজ়ায় প্রসেসড চিজ় বেশি ব্যবহার হয়। আবার দোকান থেকেও অনেক সময়ে না জেনেই আমরা প্রসেসড চিজ় কিনে ফেলি। ফলে চিজ়ের গুণের চেয়ে খারাপ দিকটার প্রভাবই বেশি পড়ে।’’ অতিরিক্ত চিজ় খেলে কোলেস্টেরল লেভেল বেড়ে যেতে পারে বলেও সাবধান করলেন হিনা।

কী ভাবে খাবেন?

রোজ স্যান্ডউইচে একটু চিজ় দিয়ে খেতে পারেন। তবে মনে রাখতে হবে, দিনে যদি দু’গ্লাস দুধ খান, তা হলে সেই দুধ থেকে তৈরি সমপরিমাণ চিজ়ই থাকবে রোজকার ডায়েটে। চিজ়ের পরিমাণ অতিরিক্ত বাড়ানো যাবে না। ইদানীং জলখাবার ও স্ন্যাকসে পাশ্চাত্য প্রভাব বাড়তে থাকায় বাচ্চা থেকে টিনএজারদের মধ্যে চিজ়বেসড খাবার খাওয়ার প্রবণতা বেশি। বয়স অনুপাতে তাদের অতটা অসুবিধে না হলেও তাদের সঙ্গে অভিভাবকও যদি চিজ়ভর্তি খাবার খেতে থাকেন, তা হলে কিন্তু শারীরিক সমস্যা দেখা দিতে পারে। বাচ্চাদের হোল হুইট পাস্তায় চিজ় মিশিয়ে দেওয়া যায়। সন্তান যদি দুধ খেতে ভাল না বাসে, তা হলে তার খাবার চিজ় দিয়ে তৈরি করে দিতে পারেন। খাবারের স্বাদ বাড়লে, সে-ও খাবে আর পুষ্টিও বজায় থাকবে খাবারে। তবে খেয়াল রাখবেন ময়দার খাবারে বেশি চিজ় মেশাবেন না। কোষ্ঠের স্বাস্থ্যের জন্য তা ভাল নয়। চিজ়বেসড খাবার খেলে (বড় থেকে ছোটদের) খাবারের বেসে হুইট বেছে নেওয়াই ভাল।

চিজ়ের গুণ থাকলেও তা কী ভাবে খাচ্ছেন, রোজ কতটা পরিমাণে খাচ্ছেন, সেটা গুরুত্বপূর্ণ। রোজকার ডায়েটে চিজ় সংযোজন করতে হলে অন্য দিকে ফ্যাট কনটেন্ট কমাতে হবে। স্বাদের জন্য অতিরিক্ত চিজ় খেয়ে গেলে কিন্তু শরীরের কোনও লাভ হবে না। তাই স্বাদের জন্য নয়, স্বাস্থ্যের কথা ভেবে খাবার খাওয়া জরুরি।

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement