ঠিক যেমন হঠাৎই ওষুধটাকে নিষিদ্ধ ঘোষণা করেছিল কেন্দ্রীয় সরকার, তেমন ভাবেই আবার আচমকা নিষেধাজ্ঞা তুলেও নিয়েছিল। কিন্তু অধিকাংশ ওষুধ বিক্রেতার কাছে সেই খবর আর পৌঁছয়নি। ফলে ডায়াবেটিস রোগীদের জন্য খুবই কার্যকরী ও সস্তার একটি ওষুধ বহু ক্ষেত্রে অধরাই থেকে যাচ্ছে বাজারে, অভিযোগ চিকিৎসকদের। এন্ডোক্রিনোলজিস্টদের সর্বভারতীয় সংগঠনের তরফে কেন্দ্রীয় স্বাস্থ্য মন্ত্রকে চিঠিও পাঠানো হয়েছে। দিন কয়েকের মধ্যেই এ নিয়ে বৈঠকে বসছে কেন্দ্র।
এন্ডোক্রিনোলজিস্টরা বলছেন, ডায়াবেটিস রোগীদের জন্য খুবই প্রয়োজনীয় ওষুধ পায়োগ্লিটাজোন। এই ওষুধ নিয়মিত খেলে ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে থাকে। বহু ক্ষেত্রে ইনসুলিন নেওয়ার প্রয়োজনও পড়ে না। চিকিৎসকেরা জানিয়েছেন, বাজারে এর বিকল্প যে সব ওষুধ পাওয়া যায়, তার দাম অনেকটাই বেশি। ফলে দুর্ভোগ বাড়ছে রোগীদের। আগে সরকারি হাসপাতালে নিখরচায় পায়োগ্লিটাজোন পাওয়া যেত। এখন সেখানেও সরবরাহ কার্যত বন্ধ।
কেন্দ্র কেন নিষিদ্ধ ঘোষণা করেছিল ওষুধটিকে? চিকিৎসকেরা বলছেন, টাইপ টু ডায়াবেটিসের ওষুধ পায়োগ্লিটাজোন থেকে ব্লাডার ক্যানসারের আশঙ্কা রয়েছে বলে বছর কয়েক আগে একটি গবেষণাপত্র প্রকাশিত হয়েছিল এক আন্তর্জাতিক বিজ্ঞান জার্নালে। তার পরেই বিভিন্ন দেশে ওই ওষুধ নিয়ে প্রশ্ন উঠতে শুরু করে। ওষুধের মোড়কের গায়ে সতর্কবার্তা লেখার নিয়ম জারি করে বিভিন্ন দেশ। কিন্তু কোথাওই ওষুধটা নিষিদ্ধ হয়ে যায়নি। এ দেশে ‘ড্রাগ কন্ট্রোলার জেনারেল অব ইন্ডিয়া’ (ডিসিজিআই) আচমকাই ওষুধটা পুরোপুরি নিষিদ্ধ ঘোষণা করে দেয় ২০১৩ সালের মে মাসে। সারা দেশ জুড়ে চিকিৎসকেরা প্রতিবাদ শুরু করায়, ওই বছরেরই জুলাই মাসে নিষেধাজ্ঞা তুলে নেওয়া হয়। কিন্তু তত দিনে যা ক্ষতি হওয়ার হয়ে গিয়েছে। বেশির ভাগ বহুজাতিক সংস্থাই ওষুধটি তৈরি করা বন্ধ করে দিয়েছে। বিক্রেতারাও ওষুধটি কেনার ব্যাপারে ক্রেতাদের নিরুৎসাহ করছেন।
এরই মধ্যে আবার সম্প্রতি অন্য একটি আন্তর্জাতিক বিজ্ঞান জার্নালে দাবি করা হয়েছে, পায়োগ্লিটাজোন খেলে ব্লাডার ক্যানসার তো বাড়েই না, উপরন্তু মহিলাদের ব্লাডার ক্যানসার কমার সম্ভাবনা থাকে। ফুসফুসের ক্যানসার, থাইরয়েডের ক্যানসার কমে বলেও দাবি করা হয়েছে আর একটি বি়জ্ঞান নিবন্ধে। ফলে ফের এই ওষুধ ব্যবহারের প্রয়োজনীয়তা নিয়ে সরব হয়েছেন চিকিৎসকরা।
এন্ডোক্রিনোলজিস্ট শুভঙ্কর চৌধুরী বলেন, ‘‘পায়োগ্লিটাজোনের এর যে কিছু পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া রয়েছে, তা-ও ঠিক। এতে ওজন বাড়ে। শরীরে জলও জমতে পারে। কিন্তু যাঁদের সেই সব ঝুঁকি আছে, তাঁদের ওষুধটা না দিলেই সমস্যা মিটে যায়। সকলের ক্ষেত্রে ওষুধটা বন্ধ করে দেওয়ার অর্থ নেই।’’ তিনি আরও জানান, অনেক ক্ষেত্রেই ওষুধটা বিক্রি করছেন না বিক্রেতারা। তাঁরা রোগীদের বলছেন, এটা নিষিদ্ধ ওষুধ। ফলে বিভ্রান্তি বাড়ছে। একই বক্তব্য এন্ডোক্রিনোলজিস্ট সতীনাথ মুখোপাধ্যায়েরও। তাঁর কথায়, ‘‘এ দেশে এমন কম দামের ওষুধ খুবই জরুরি। পায়োগ্লিটাজোনের এক-একটির দাম দু’টাকার মতো। এখন যেগুলি বাজারে পাওয়া যাচ্ছে, তার দাম ৪০ থেকে ৫০ টাকা। বাধ্য হয়ে রোগীদের সেটাই দিচ্ছি। পরিস্থিতি না বদলালে দুর্ভোগ বাড়বে।’’
সমস্যা যে হচ্ছে, তা ডিসিজিআই-এর কর্তারাও স্বীকার করে নিয়েছেন। এক শীর্ষ কর্তার কথায়, ‘‘নিষেধাজ্ঞা তুলে নেওয়ার পরেও ওষুধের এমন অভাব মেনে নেওয়া যায় না। সংশ্লিষ্ট সব পক্ষকে নিয়ে শীঘ্রই বৈঠক হবে। তবে ওষুধটার দাম কম বলেই বিক্রেতারা উৎসাহ দেখাচ্ছেন না।’’
এই বক্তব্য মানতে চায়নি ওষুধ বিক্রেতাদের সংগঠন ‘বেঙ্গল কেমিস্ট অ্যান্ড ড্রাগিস্ট অ্যাসোসিয়েশন’। সংগঠনের তরফে তুষার চক্রবর্তী বলেন, ‘‘কিছু বিক্রেতার মধ্যে বিভ্রান্তি ছিল। সেটা কেটে গিয়েছে। পরিস্থিতি ক্রমশ স্বাভাবিক হবে। এর সঙ্গে ওষুধের দামের যোগ নেই।’’