উৎসবের প্রথম দিনে একটি আলোচনাসভায় (বাঁ দিক থেকে) সুজয়প্রসাদ চট্টোপাধ্যায়, বাপ্পাদিত্য মুখোপাধ্যায়, কাঞ্চন দত্ত, শোলাঙ্কি রায় এবং অভিরূপ মুখোপাধ্যায়। — নিজস্ব চিত্র।
কেউ বললেন নিজেকে খুঁজে চলার কথা। কেউ বললেন নিজের কথা অপরকে বোঝানোর সংগ্রাম। কেউ বা অনেকের স্বর একসঙ্গে তুলে ধরলেন তথ্যচিত্রে। কোনও মাকে সামনে বসিয়ে সমকামী মেয়ে নিজের বড় হয়ে ওঠার নানা অভিজ্ঞতা ব্যাখ্যা করলেন। সব কিছুর সাক্ষী রইল কলকাতা। প্রতি জুনে বিশ্ব জুড়ে চলে উদ্যাপন। এটি ‘গৌরব মাস’ বলেই পরিচিত। যৌনতার নিরিখে প্রান্তিক যাঁরা, নিজেদের স্বর খুঁজে পাওয়া, তুলে ধরার কথা বলেন তাঁরা। কখনও কখনও তাঁদের সঙ্গে পা মেলান অন্যরাও। বাইপাসের ধারের ‘কলকাতা সেন্টার ফর ক্রিয়েটিভিটি’-তে এ বছরও হয়েছে বিশেষ উৎসব ‘লার্ন টুগেদারনেস’-এর আয়োজন। উৎসব শুরু হয়েছে গত ২৪ তারিখ থেকে। চলবে ৫ জুলাই পর্যন্ত। দফায় দফায় আলোচনা, আড্ডা তো বসছেই, সঙ্গে থাকছে এ বিষয়ে বিভিন্ন তথ্যচিত্রের প্রদর্শন। কখনও নৃত্য পরিবেশনায় উঠে আসছে প্রান্তিকদের স্বর, কখনও আবার দেওয়ালে প্রদর্শিত ছবিই স্পষ্ট করছে মনের কথা, প্রতিবাদের ভাষা।
উৎসবের অঙ্গ হিসাবে আয়োজন করা হয়েছে পেন্টিংয়ের প্রদর্শনীরও। — নিজস্ব চিত্র।
কলকাতা সেন্টার ফর ক্রিয়েটিভিটিতে গৌরব মাস উদ্যাপনের এটি তৃতীয় বর্ষ। সেখানকার অধিকর্তা রিনা আগরওয়াল আনন্দবাজার অনলাইনকে জানান, প্রতি বছর নতুন নতুন ভঙ্গিতে এ মাসের অনুষ্ঠান সাজান তাঁরা। তিনি বলেন, ‘‘এ বছরও অনেকের কথা তুলে ধরার চেষ্টা করেছি আমরা। তবে এখনও কোনও স্কুলপড়ুয়া আমাদের এই অনুষ্ঠানের অংশ হয়ে ওঠেনি। আমাগী দিনে যাতে শিশু-কিশোরদেরও নিয়ে আসা যায়, সে চেষ্টা করব। কারণ, কমবয়সিরা আরও অনেক স্পষ্ট কথা বলে। আর এই সেন্টারের মূল কাজই হচ্ছে সকলের কথা, ভাবনা ভাগ করে নেওয়ার পরিবেশ তৈরি করা।’’
এ বারের উৎসবের পরিকল্পনার দায়িত্বে আছেন শিল্পী সুজয়প্রসাদ চট্টোপাধ্যায়। তিনি বলেন, ‘‘সমলিঙ্গ সাহিত্য নিয়ে আলোচনা থেকে তথ্যচিত্র প্রদর্শন, নাটক— শিল্পের নানা মাধ্যম নিয়ে চর্চা হচ্ছে এখানে। এটি এক দিকে মানবতার উদ্যাপন, আর এক দিকে সৃজনশীলতার উদ্যাপন। আর এর মধ্যে দিয়েই মনে করিয়ে দেওয়ার চেষ্টা যে, জীবনটা একরৈখিক নয়। কাউকে বাক্সবন্দি করে রাখবেন না, নিজেও বাক্সবন্দি থাকবেন না।’’