ভুঁড়ি কতটা বিপজ্জনক, কী বলছেন গবেষকেরা? ফাইল চিত্র।
ভুঁড়ি দেখতে যেমন খারাপ লাগে তেমনই স্বাস্থ্যের পক্ষেও ভাল নয়। এমনিতে ধরুন আপনার গায়ে গতরে তেমন মেদ নেই, কিন্তু ঠিক পেট আর কোমর জুড়ে চর্বির প্রলেপ পড়ছে। পেটে কাছে ওই চর্বির স্তর কিন্তু আপনার সামগ্রিক চেহারাকেই নষ্ট করে দেবে। শুধু রূপ নয়, এই অবাঞ্ছিত ভুঁড়ি নষ্ট করে দেবে পরিশ্রম করার ক্ষমতাও। আর বেশির ভাগ ভারতীয় পুরুষের মধ্যে ভুঁড়ি ব্যাপারটা বেশ চোখে পড়ার মতোই। চল্লিশ হতে না হতেই পেট জুড়ে চর্বির স্তর যেন থলথল করছে। কারও স্থূলতা থেকে ভুঁড়ি বাড়চ্ছে, আবার কারও সেই অর্থে স্থূলতা না থাকলেও পেটে ভুঁড়িখানি দিব্যি শোভা পাচ্ছে। আর এই আপাত-নিরীহ ভুঁড়িই যে মারণরোগের কারণ হয়ে উঠতে পারে, তা জানেন না অনেকেই। সাম্প্রতিক গবেষণা তেমনই ইঙ্গিত দিচ্ছে।
সুইডেনের ‘ন্যাশনাল ক্যানসার ইনস্টিটিউট’-এর জার্নালে প্রকাশিত একটি গবেষণাপত্রে উল্লেখ করা হয়েছে, বিএমআই যেমনই হোক না কেন, যদি ভুঁড়ি আড়েবহরে বাড়তেই থাকে, তা হলে বুঝতে হবে বিপদ ঘনাচ্ছে। ভুঁড়ি থেকেই কোলন, প্রস্টেট, খাদ্যনালির ক্যানসারের আশঙ্কা বহুগুণে বেড়ে যাবে। আর এই গবেষণা হয়েছে কেবল পুরুষদের নিয়েই। গবেষকেরা দাবি করেছেন, মহিলাদের ক্ষেত্রে স্থূলতা নানা রোগের কারণ হতে পারে ঠিকই, কিন্তু পুরুষদের ভুঁড়ি বেশ বিপজ্জনক। এই মেদের স্তরেই ক্যানসার কোষের অনিয়মিত বিভাজন শুরু হতে পারে। কোমরের পরিধি ৪০ ইঞ্চির বেশি হয়ে গেলেই সতর্ক হতে হবে।
৩ লক্ষ ৩৯ হাজারের বেশি পুরুষকে নিয়ে একটি সমীক্ষা চালান গবেষকেরা। দেখা যায়, যাঁদের কোমরের মাপ ৪০ ইঞ্চির বেশি এবং কোমর ও পেটে যথেষ্ট চর্বি জমেছে, তাঁদের ২৫ শতাংশের ক্যানসারের ঝুঁকি রয়েছে। এর সঙ্গে কিন্তু বিএমআই (বডি মাস ইনডেক্স)-এর কোনও সম্পর্ক নেই। বিএমআই হল ওজনের সঙ্গে উচ্চতার অনুপাত। বিএমআই বেশি মানেই যে ক্যানসারের ঝুঁকি বাড়বে তা নয়, সমস্যা কেবল ওই ভুঁড়িকে নিয়েই। ধরুন, কোনও পুরুষের উচ্চতা ৬ ফুট, তাঁর ওজনও বেশি, কাজেই তাঁর ওজনের সঙ্গে উচ্চতার অনুপাত বা বিএমআই বেশি হবেই। আবার যাঁর উচ্চতা ৫ ফুট এবং বিএমআই কম, কিন্তু বিশাল একটি ভুঁড়ি রয়েছে, তাঁর কিন্তু ঝুঁকি থাকবেই।
ভুঁড়ি কতটা বিপজ্জনক?
গবেষকেরা দাবি করেছেন, ভুঁড়ি একাই নানা রোগ ডেকে আনে। হরমোনের ভারসাম্য নষ্ট করে, ইনসুলিনের কার্যক্ষমতা কমে যায়। ভুঁড়ি মানেই রক্তে খারাপ কোলেস্টেরল, ট্রাইগ্লিসারাইডের স্তর জমছে। কাজেই তা ক্ষতি করে হার্টেরও। ভুঁড়ির কারণে ‘কার্ডিয়ো ভাসকুলার মর্টালিটি’ বেড়ে যায়। শরীরে প্রদাহজনিত নানা অসুখ দেখা দিতে থাকে। এবং ক্যানসারের ঝুঁকি বাড়ে।
তলপেটে চর্বির কারণে মূত্রথলির কার্যক্ষমতাও নষ্ট হয়। ফলে প্রস্রাবের বেগ নিয়ন্ত্রণ করা যায় না। ৫০-এর কোঠা পেরোলে পুরুষদের প্রস্টেট ক্যানসারের ঝুঁকি বাড়ে, যার একটি কারণ কিন্তু এই ভুঁড়ি। আবার পেট-কোমরের মেদ অগ্ন্যাশয়ের ক্যানসারের ঝুঁকি বাড়িয়ে দিতে পারে। সেই সঙ্গেই পাকস্থলীর ক্যানসার ও লিভার ক্যানসারের ঝুঁকিও বাড়ে। কেবল তা-ই নয়, অতিরিক্ত মেদ থাকলে ক্যানসারের চিকিৎসাও খুব জটিল হয়ে পড়ে। শরীরে মেদ জমতে থাকলে রক্তে ইনসুলিনের মাত্রা বেড়ে যায়। অতিরিক্ত ইনসুলিন ক্যানসার কোষের বৃদ্ধিতে সাহায্য করে। ফ্যাট শরীরে হরমোনের ভারসাম্য নষ্ট করে। মাত্রাতিরিক্ত ইস্ট্রোজেন ও টেস্টোস্টেরন ক্যানসারের ঝুঁকি বাড়িয়ে তোলে।