ছবি: সংগৃহীত।
বিশেষজ্ঞদের আশ্বাসবাণীকে হেলায় তুচ্ছ করে ডেঙ্গির জীবাণুরা ফুল ফর্মে দাপিয়ে বেড়াচ্ছে। ডেঙ্গি জ্বরে আক্রান্ত কিছু মানুষকে আর জীবনের আলোয় ফিরিয়ে আনা সম্ভব হচ্ছে না। মহামারী ডেঙ্গির মোকাবিলা করা কিন্তু খুব কঠিন নয়। কয়েকটা সাধারণ ব্যাপারে নজর দিলেই প্রাথমিক পর্যায়েই ডেঙ্গিকে আক্রমণ করা যায়। তখন থেকেই যথাযথ ব্যবস্থা নিলে ডেঙ্গির জটিলতা অনেকাংশেই কমিয়ে রাখা যায়।
জ্বর, মাথাব্যথা ও দুর্বলতা
কখনও মেঘ কখনও রোদ্দুর— ঋতু পরিবর্তনের এই সময়টায় ইনফ্লুয়েঞ্জা-সহ বেশ কিছু ভাইরাস সক্রিয় হয়ে ওঠে। তাই জ্বর বলতে গেলে ঘরে ঘরে। তবে এই বছরে ডেঙ্গির মহামারী হওয়ায়, সাধারণ ভাইরাল ফিভার হলেও ডেঙ্গির আতঙ্কে অনেকেই দিশেহারা। অনেকে আবার জ্বর হলে আমল দেন না। তিন-চার রকমের ডেঙ্গি ভাইরাসের সংক্রমণ হলে জ্বর হয়। আমার মতে, হাই ফিভার হলে অবশ্যই ডাক্তারের পরামর্শ নেওয়া উচিত। প্যারাসিটামল ছাড়া কোনও ব্যথার ওষুধ খাওয়া চলবে না। তীব্র জ্বর, মাথাব্যথা, শরীরের বিভিন্ন অংশে ব্যথা ও সামগ্রিক দুর্বলতা— এই রকম উপসর্গ দেখলে ডেঙ্গি ও ম্যালেরিয়ার টেস্ট করিয়ে নিতে হবে। অনেক সময় হেমারেজিক ডেঙ্গি বা ডেঙ্গির কারণে মারাত্মক শক সিনড্রোমের প্রাথমিক উপসর্গ হিসেবে মাড়ি থেকে রক্তপাত হতে পারে।
আরও পড়ুন: বাচ্চার জ্বর হলে আতঙ্কিত না হয়ে নজর রাখুন
টুথ ব্রাশে রক্ত নেই তো
বেশির ভাগ মানুষ ওরাল হাইজিন রক্ষা করার ব্যাপারে অত্যন্ত উদাসীন। তাঁরা শারীরিক পরিচ্ছন্নতা বজায় রাখলেও সঠিক ভাবে ব্রাশ করা বা মুখগহ্বরের সুস্বাস্থ্য নিয়ে খুব একটা ভাবনাচিন্তা করেন না। তাই অনেকেই দুর্বল মাড়ি নিয়ে মাঝেমধ্যেই ভোগেন। অনেক সময় হেমারেজিক ডেঙ্গির প্রাথমিক উপসর্গ হিসেবে মাড়ি থেকে রক্তপাত হতে পারে। এই অসুখে রক্ত জমাট বাঁধায় সহায়ক অনুচক্রিকা বা প্লেটলেট কাউন্ট কমে যাওয়ায় রক্তপাতের ঝুঁকি বাড়ে। শুরুতে সজাগ হলে বড় বিপদের হাত এড়ানো যায় সহজেই। ডেন-১ থেকে ডেন-৪, যে কোনও ভাইরাস শরীরে প্রবেশ করলে আমাদের রোগ প্রতিরোধ ব্যবস্থা সঙ্গে সঙ্গে সক্রিয় হয়ে ওঠে। যূথবদ্ধ হয়ে ডেঙ্গির জীবাণুদের সঙ্গে লড়াই করে। আর সমস্যার সূত্রপাত কিন্তু এখানেই। মুশকিলটা হল, ডেঙ্গির ভাইরাস আর রক্তের কণা প্লেটলেট বা অনুচক্রিকার গঠন অনেকটা একই রকম হওয়ায় রক্তের শ্বেতকণিকা এদের আলাদা করে চিনতে পারে না। এ কথা সকলেরই জানা যে শ্বেতকণিকা বা হোয়াইট ব্লাড সেল আমাদের শরীরকে রক্ষা করতে পাহারাদারের কাজ করে। ডেঙ্গির ভাইরাসকে এরা ধ্বংস করে। একই সঙ্গে অনুচক্রিকা বা প্লেটলেটকেও আক্রমণ করে তাদেরও মেরে ফেলে। এই কারণেই রক্তের প্লেটলেট দ্রুত কমতে শুরু করে। যত বিপত্তির সূত্রপাত এর থেকেই। হঠাত্ হঠাত্ শরীরের বিভিন্ন অংশ থেকে রক্তপাত শুরু হতে পারে। যাঁদের মাড়ি ও দাঁত দূর্বল তাঁদের মাড়ি থেকে রক্তপাতের ঝুঁকি অন্যদের তুলনায় বেশি।
আরও পড়ুন: হাঁপানি ও ফুসফুসের অসুখ থাকলে জ্বর হলেই সতর্ক হতে হবে
দ্রুত ডাক্তার দেখান
হাই ফিভারের সঙ্গে সঙ্গে মাড়ি থেকে রক্তপাত, এই সমস্যা হলেই দ্রুত ডেন্টাল সার্জেনের পরামর্শ নেওয়া উচিত। বিভিন্ন কারণে মাড়ি থেকে রক্ত বেরোতে পারে। জিঞ্জিভাইটিস হলে মাড়ি থেকে ব্লিডিং খুবই কমন। কিন্তু ডেঙ্গি জ্বরে মাড়ি থেকে রক্ত বেরনোর অন্যতম কারণ প্লেটলেট কমে যাওয়া। রোগীকে পুঙ্খানুপুঙ্খ পরীক্ষা করে ডেন্টাল সার্জন ব্যাপারটা বুঝতে পারবেন। কোনও অবস্থাতেই গাম ব্লিডিং অবহেলা করবেন না। জ্বর হলে আতঙ্কিত না হয়ে জ্বরের ওষুধ খাওয়ার সঙ্গে পর্যাপ্ত পরিমাণ তরল খাবার ও জল পান করা দরকার। তবে আতঙ্কগ্রস্ত হয়ে অতিরিক্ত জলপান করে সমস্যা বাড়াবেন না। সতর্ক থাকুন, কিন্তু প্যানিক করবেন না, সেলফ মেডিকেশন তো নয়ই।