কান-এ গৌরব। ছবি: সংগৃহীত
গত বছর বাঙালাদেশি অভিনেত্রী আজমেরি হক বাঁধনের দৌলতে কান চলচ্চিত্র উৎসবের রে়ড কার্পেটে দেখা গিয়েছিল জামদানি শাড়ি। পাঞ্জাবি বা পাঠান কুর্তাও এর আগে দেখা গিয়েছে বহু বার। কিন্তু ধুতি পরে কান-এর রেড কার্পেটে সচারাচর কাউকে দেখা যায় না। এ বছর নবীন পরিচালক গৌরব কুমার মল্লিক তাঁর ছবি ‘স্টারফ্রুট্স’-এর জন্য আমন্ত্রণ পেয়েছিলেন চলচ্চিত্র উৎসব থেকে। তিনি রে়ড কার্পেটের সাজে বেছে নিয়েছিলেন খাঁটি বাঙালি ধুতি-পাঞ্জাবি।
ধুতি-পাঞ্জাবি দুই-ই ছিল কলকাতার পোশাকশিল্পীদের। অগ্নিক ঘোষের অ্যাপ্লিক এবং কারুকাজ করা পাঞ্জাবিতে ধরা পড়েছিল দেব-দেবী-লোককথার নানা চিত্র। সাদা এবং গোলাপি কারুকাজ করা ধুতি শহরের পোশাকশিল্পী পরমা ঘোষের। পেরুতে মায়েরা যে লম্বা কাপড়ে বাচ্চাকে বেঁধে কাজ করেন, সেই বুনোনই ব্যবহার করা হয়েছে গৌরবের শান্তিপুরি ধুতিতে। গৌরবকে সাজিয়েছেন কলকাতারই শাড়ি-প্রভাবী পুষ্পক সেন।
পরমা-অগ্নিকের ধুতি-পাঞ্জাবিতে গৌরব।
বিশ্ব জুড়ে বিভিন্ন আন্তর্জাতিক মঞ্চে চেষ্টা চলছে সব ধরনের সংস্কৃতিকে তুলে ধরার। সে সময়ে কান চলচ্চিত্র উৎসবের মতো সিনেমা ও ফ্যাশনের সম্মানীয় মঞ্চে বাঙালি পোশাক দেখে অনেকে আপ্লুত। নিজের তৈরি পোশাক কান-এর রেড কার্পেটে দেখে কেমন লাগছে পরমার? আনন্দবাজার অনলাইনকে পরমা বললেন, ‘‘আমি কোনও দিন ইলাস্টিক দেওয়া সেলাই করা ধুতি বানাইনি। এত মেয়ে যখন সহজেই শাড়ি পরে হাঁটাচলা করতে পারে, ছেলেরাই বা অভ্যাস করবে না কেন! ভেবেছিলাম আমার তৈরি ধুতি বিক্রিই হবে না। কিন্তু যবে থেকে বানিয়েছি, বিক্রি নেহাত মন্দ হয় না। সেই ধুতিই যখন কেউ বেছে নিলেন কান-এর রে়ড কার্পেটে পরার জন্য, তখন তো আনন্দ হবেই।’’
এখনকার নবীন প্রজন্ম কি নিজেদের পোশাক, নিজেদের সংস্কৃতি নিয়ে বেশি সচেতন? পরমা বললেন, ‘‘প্রত্যেকেরই আলাদা পছন্দ রয়েছে। তবে এটুকুই বলতে চাই, পোশাকশিল্পীদেরও উচিত নিজেদের পোশাক নিয়ে আমজনতার মধ্যে উৎসাহ তৈরি করার। যাঁরা জোর গলায় কথা বলার মতো সাফল্য অর্জন করতে পেরেছেন, যাঁদের কথা শুনলে অনেকে প্রভাবিত হবেন,তাঁদের তো বলা উচিত যে আমি স্যুটের বদলে ধুতিই পরাব। দীপিকা সব্যসাচীর শাড়ি পরেছে, তা খুবই ভাল কথা। কিন্তু আমাদের এখানকার কেউ যদি বেনারসি বা বালুচরি বেছে নেন, তা হলেই তো সেটা আরও বেশি মানানসই হবে।’’