মাল্টিটাস্কিং সর্বনাশ করছে মস্তিষ্কের। ছবি: শাটারস্টক।
কোনও নির্দিষ্ট সময়ে মন দিয়ে একটা কাজ করা এখন প্রায় অলীক ব্যাপার৷ একটা শুরু করতে না করতে এসে যায় আর একটি, তার পর আর একটি, তার পর আবা....৷ মাল্টিটাস্কিং এখন সবার জীবনের অঙ্গ৷ সে ঘরে হোক, কি বাইরে৷
ঘরে–বাইরে হলে তো কথাই নেই, কী ভাবে যে স্ট্রেস বাড়ে তা ভুক্তভোগী মাত্রই জানেন৷ নাওয়া–খাওয়ার সময় থাকে না৷ সময় থাকে না আরাম–বিরামেরও৷ কম বয়সে সে সব কোনও মতে সামলানো গেলেও বয়স বাড়লে কাজের মান খারাপ হওয়ার পাশাপাশি বিগড়োতে শুরু করে শরীর–মন৷
স্ট্যানফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষকরা জানাচ্ছেন, দীর্ঘ দিন ধরে মাল্টিটাস্কিং করে গেলে ব্রেনের কার্যকারিতা কমতে শুরু করে৷ কমে মনোযোগ, স্মৃতিশক্তি, দ্রুত কাজ করার ক্ষমতা,আই কিউ৷
আরও পড়ুন: অসুখ রুখতে চিনি বা কৃত্রিম চিনি ভুলে যান, তার বদলে রান্না করুন এ সব দিয়ে
কেন এমন
মোটামুটি একই দক্ষতা সম্পন্ন এক দল মাল্টিটাস্কার ঠান্ডা মাথায় একটা করে কাজ শেষ করেন— এমন এক দল মানুষকে নিয়ে স্টাডি করে গবেষকরা দেখলেন যে, যাঁরা বহু দিন ধরে মাল্টিটাস্কিং করে চলেছেন, তাঁদের কিছু বুঝতে ও মনে রাখতে যত সময় লাগছে, অন্যদের তত লাগছে না৷
মানসিক চাপ কাটাতে বাদ দিন মাল্টিটাস্কিং।
একসঙ্গে ২–৩টি কাজ করতে দিয়েও দেখা গেল সাধারণত যাঁরা মাল্টিটাস্কিং করেন না, তাঁরা অনেক দ্রুত ও অনেক ভাল ভাবে কাজগুলি করতে পারছেন৷ কারণ, ব্রেনের ধর্ম হল, এক বারে একটা বিষয়ে ‘ফোকাস’ করা৷ দীর্ঘ দিন ধরে তাকে অবহেলা করে এক সঙ্গে একাধিক কাজ করে চললে ঠান্ডা মাথায় চিন্তা করা ও চিন্তাকে সাজানোর দক্ষতা কমে যায়৷ হাজারো তথ্যের ভিড় থেকে দরকারিগুলিকে ছেঁকে তুলে তাকে কাজে লাগানোর পদ্ধতি ধীর হয়৷ এক কাজ শেষ করে চটপট অন্য কাজে ঢুকে পড়তেও অসুবিধে হয় প্রায় সময়ই৷
বিপদ ঠেকাতে
মাল্টিটাস্কিং পুরোপুরি বন্ধ করা যাবে না৷ কিন্তু তার দরুন যে যে বিপদ হয় তার প্রকোপ কমাতে কয়েকটি পদক্ষেপ নেওয়া যেতে পারে৷ যেমন:
লো ক্যালোরির পুষ্টিকর খাবার খান৷ শরীর পুষ্টি পেলে পুষ্টি পাবে ব্রেনও৷ কাজের ধরন অনুযায়ী কী খাবেন, কতটা খাবেন, কী খাবেন না তা জেনে নিন ডায়াটিশিয়ানের কাছে৷ সাধারণত সেমি–তে উচ্চতা মেপে তা থেকে১০০ বিয়োগ করলে পাওয়া যায় আদর্শ ওজন, অর্থাৎ ওজন যা হওয়া উচিত৷ তাকে ৩০০ দিয়ে গুণ করলে জানা যায় কত ক্যালোরি খাওয়া উচিত৷ এমন ব্যবস্থা করুন যাতে সেই ক্যালোরির সবটুকুই প্রায় পুষ্টিকর খাবার থেকে আসে৷ এর পাশাপাশি সারা দিনে আরও কয়েকটি বিশেষ খাবার খান৷ ব্রেনের ক্ষতির হার কমবে৷ যেমন– ২–৩ কাপ দুধ–চিনি ছাড়া গ্রিন টি৷ ২–৩ রকমের টাটকা ফল৷ একেক দিন একেক রকম৷ দু’-চারটে করে অ্যালমন্ড, আখরোট, কিসমিস৷ তৈলাক্ত মাছ, সপ্তাহে অন্তত দু’বার৷ টাটকা শাকসবজি, বিন্স, স্যালাড৷ এক–আধ গ্লাস রেড ওয়াইন, সপ্তাহে ৩–৪ বার৷ এক টুকরো ডার্ক চকোলেট৷
৩৫–এর পর, বিশেষ করে মেয়েদের শরীরে কিছু ভিটামিন–মিনারেল ও অ্যান্টিঅক্সিডেন্টের চাহিদা বাড়ে৷ খাবার খেয়ে তা পূরণ করা না গেলে চাপ পড়ে ব্রেনে৷ সে ক্ষেত্রে বিশেষজ্ঞের পরামর্শ মতো সাপ্লিমেন্ট খেতে হতে পারে৷
আরও পড়ুন: খোসাতেই কামাল! রোগের দাওয়াই থেকে রূপচর্চা, কোন খোসার কী গুণ জেনে নিন
ঘুমকে হাতিয়ার করে কাটান মানসিক চাপ।
স্ট্রেস কমাতে, ফিটনেস বাড়াতে, ব্রেনকে চাঙ্গা করতে সপ্তাহে ৫ দিন অন্তত ৩০ মিনিট কার্ডিওভাস্কুলার এক্সারসাইজ যেমন, হাঁটা, জগিং, সাঁতার বা সাইক্লিংয়ের কোনও বিকল্প নেই৷ হলকা ওজন নিয়ে ব্যায়াম করলেও মন ভাল থাকে বলে জানা গিয়েছে৷ মানসিক চাপ খুব বেড়ে গেলে এর সঙ্গে করুন ডিপ ব্রিদিং, মেডিটেশন ও যোগা৷
ভাল করে ঘুমোন৷ সারা দিন ধরে যত তথ্য পায় ব্রেন, ঘুমের সময় তাকে প্রসেস করে অপ্রয়োজনীয়গুলিকে বিদায় করে মাথা হালকা করে৷ ভাবনা–চিন্তা, স্মৃতিশক্তি, মনোযোগ, সব কিছু বজায় রাখতে তাই নিশ্ছিদ্র ঘুম দরকার৷ স্ট্রেসের কারণে সে কাজে ব্যাঘাত এলে কাউন্সেলিং করে সমস্যা সামলান৷ চট করে ঘুমের ওষুধ খেয়ে নেবেন না৷
দিনান্তে বা দিনের শুরুতে আধ ঘণ্টা সময় নিজের জন্য রাখুন৷ ভেবে দেখুন, এই যে দৌড়ে চলেছেন তার কতটা জরুরি, আর কতটুকু না করলেও চলে৷ প্রায়োরিটি ঠিক করে চলুন৷ কারণ দিন–রাত কাজ করলে শুধু যে কাজের মান খারাপ হয় তা নয়, বাড়ে ক্লান্তি–বিরক্তিও৷ তার হাত ধরে বাড়ে মানসিক চাপ৷ বিপর্যস্ত হয় জীবনযাপন৷ কাজেই দৌড়ে চলায় লাগাম পরান৷ নিজে না পারলে, বিশেষজ্ঞের সঙ্গে কথা বলে দেখতে পারেন৷