অনুত্তমা বলেন, ‘‘যৌনতাকে হাতিয়ার করে শিশুর যে কোনও ধরনের অস্বস্তির উদ্রেক করা আইনত অপরাধ।’’
শিশুদের যৌন হেনস্থার কথা শোনা যায়। আবার যায় না। কারণ, অনেক সময়ে বলাই হয় না। চাপা দেওয়া থাকে। কিন্তু দিন দিন এ বিষয়েও সচেতনতা বাড়ছে। অনেক অভিভাবক সন্তানকেও সচেতন করতে চাইছেন। তবু তা ঘিরে থেকে যায় ছোট ছোট বহু প্রশ্ন। কোন সময়ে সন্তানকে সতর্ক করবেন, কী কী বিষয়ে সচেতন হতে হবে নিজেদেরও, এমন অনেক কিছু।
এমনই কয়েকটি প্রশ্ন নিয়ে আনন্দবাজার অনলাইনের ফেসবুক এবং ইউটিউবে ‘লোকে কী বলবে! সঙ্গে অনুত্তমা’ শীর্ষক অনুষ্ঠানে রবি সন্ধ্যায় হাজির হয়েছিলেন মনোবিদ অনুত্তমা বন্দ্যোপাধ্যায়। এ সপ্তাহে তাঁর অতিথি ছিলেন পশ্চিমবঙ্গ শিশু অধিকার সুরক্ষা আয়োগের অধ্যক্ষ অনন্যা চক্রবর্তী। শিশুর উপর কোন ধরনের অত্যাচার আইনের চোখে অপরাধ, তাঁদের কথায় বার বার উঠে এল সে প্রসঙ্গ।
প্রশ্ন এসেছিল, স্পর্শ হল নির্যাতনের একটি গুরুত্বপূর্ণ অঙ্গ। ভাল স্পর্শ আর মন্দ স্পর্শ সম্পর্কে শিশুদের কোন বয়স থেকে সচেতন করা যেতে পারে, তা নিয়ে। এবং তা কী ভাবেই বা বলা হবে সন্তানকে? এ বিষয়ে শিশু সুরক্ষা কমিশনের ওয়েবসাইটে গেলে বিশদে জানা যাবে বলে উত্তর দিলেন অনন্যা। সঙ্গে বার্তা দিলেন, শুধু স্পর্শ নয়, আরও নানা ধরনের কাজই হেনস্থার অঙ্গ হিসাবে দেখা হয় আইনে। এ বিষয়ে নির্দিষ্ট আইন ‘প্রোটেকশন অব চিল্ড্রেন ফ্রম সেকশুয়াল অফেন্সেস’ (পক্সো) অ্যাক্টের আওতায় আরও নানা ধরনের কাজ পড়ে। শিশুর সামনে যৌন আলোচনা, যৌন ইঙ্গিতপূর্ণ গালাগালি দেওয়া থেকে শুরু করে আঠেরোর নীচে কারও সামনে পর্নোগ্রাফি দেখা— সবই আইনের চোখে অপরাধ। অনুত্তমা গুছিয়ে বলেন, ‘‘যৌনতাকে হাতিয়ার করে শিশুর যে কোনও ধরনের অস্বস্তির উদ্রেক করা আইনত অপরাধ। এমনকি কোনও শিশুর উপস্থিতিতে তার অস্তিত্বকে অগ্রাহ্য করে অন্য কারও সঙ্গে কোনও রকম যৌন আদান-প্রদানও আইনত পড়ে পক্সোর আওতায়।’’
অপরাধ না হয় হল। তার মানেই কি সব সময়ে আইনের সাহায্য নেওয়া সহজ হয়? হয় না, মানছেন দুই বিশেষজ্ঞই। পরিবার এবং সমাজের চোখে ‘সম্মান’ রক্ষার চিন্তা বহু সময়ে বাধা হয়ে দাঁড়ায়। অনেকর সময়ে পরিজনেরা সবটা বুঝেও বোঝেন না। কিন্তু এ ধরনের অস্বস্তি কাটিয়ে কমিশনের কাছে এসে সাহায্য চাইতে উৎসাহ দিচ্ছেন অনন্যা। তিনি বলেন, ‘‘শিশুদের যৌন হেনস্থা নিয়ে যত বেশি অভিযোগ জমা পড়বে, তত বেশি ব্যবস্থা নেওয়া সম্ভব হবে। আর এ ভাবে রুখে দাঁড়ানো যাবে এই অপরাধের বিরুদ্ধে।’’ এ ধরনের যে কোনও অপরাধের ক্ষেত্রে পুলিশের সাহায্যও যে মিলবে, সে বিষয়ে সচেতন হতে বলেন অনন্যা।
হেনস্থার পর শিশুকে নিয়ে পুলিশের কাছে যাওয়া ঘিরে সংশয় তৈরি হয় অনেক অভিভাবকের। মনে হতেই পারে যে, শিশুটি ভয় পেয়ে হয়তো কথাই বলতে পারবে না। কিন্তু অভয় দিচ্ছেন অনন্যা। তিনি জানাচ্ছেন, পক্সো সংক্রান্ত কোনও অভিযোগ এলে শিশুর সামনে কখনও পুলিশের পোশাক পরে যাবে না। ফলে শিশুর মনের উপর তা নিয়ে বাড়তি চাপ পড়ার আশঙ্কা কম।
শিশুর যৌন হেনস্থা পরিবারের অন্দরেই হোক বা বাইরে, তাকে সুরক্ষিত রাখার জন্য আইন যে এখন কড়া, সে কথা মনে রাখার আর্জি জানাল আলোচনা। এমনকি, ঘটনাটি ঘটে যাওয়ার বহু বছর পরও যদি কেউ অভিযোগ জানাতে চান, তেমন ক্ষেত্রেও পাশে থাকার আইনি আশ্বাস রয়েছে।