চলচ্চিত্র জগতের হারিয়ে যেতে বসা সংগ্রহ নিয়ে বসেছে ‘শখের বাজার’, উদ্বোধন করলেন অভিনেত্রী মাধবী মুখোপাধ্যায়। —নিজস্ব চিত্র।
চলচ্চিত্রের ফেলে আসা অধ্যায়ের স্মৃতি উস্কে, ক্রমশ হারিয়ে যেতে বসা সংগ্রহকে উৎসাহীদের কাছে তুলে ধরতেই কলকাতার বুকে বসল ‘শখের বাজার’।
রাজ-রাজড়ার বিচিত্র সব শখের কথা অনেকেই শুনেছেন। কিন্তু সাধারণ মানুষ? কেউ শখে ডাকটিকিট জমান, কারও শখ কলম সংগ্রহের, কারও আবার দেশলাই বাক্স, কারও বা পুরনো মুদ্রা। এ সবের পাশাপাশি, চলচ্চিত্রের নানা সামগ্রীর সংগ্রহও শখের মধ্যে পড়ে কিছু মানুষের।
শখে জমানো চলচ্চিত্রের সেই লবি কার্ড, হাতে আঁকা পোস্টার, বুকলেট এই সমস্ত কিছুর সম্ভার নিয়ে টালিগঞ্জে ‘নোয়া’ ক্যাফেতে গত শুক্রবার থেকে তিন দিনের প্রদর্শনীর আয়োজন হয়েছিল। যেখানে গিয়ে হাতে নিয়ে এই সমস্ত সামগ্রী দেখতে ও কিনতে পারছেন আগ্রহীরা।
‘নোয়া ক্যাফে’ ও ‘দেবু’জ দরবার’-এর উদ্যোগে আয়োজিত ‘শখের বাজার’। অভিনেত্রী মাধবী মুখোপাধ্যায় গত শুক্রবারই ‘শখের বাজার’-এর উদ্বোধন করেছেন।
বায়োস্কোপ ও বুকলেট ও অন্যান্য সমাগ্রী। —নিজস্ব চিত্র
এ নিয়ে জনতার যথেষ্ট উৎসাহ রয়েছে বলেই জানালেন উদ্যোক্তা জ্যোতির্ময় ভট্টাচার্য। তিনি পেশায় শিল্প সংগ্রাহক। দেবু’জ দরবারের অন্যতম সদস্য। জানালেন, তাঁদের উদ্দেশ্য হল, চলচ্চিত্র জগতের অতীতের বিভিন্ন সংগ্রহকে জনসমক্ষে তুলে ধরা। একই সঙ্গে উৎসাহী সংগ্রাহকদের কাছে তা পৌঁছনোর পথ করে দেওয়া। ভবিষ্যতে যাতে অন্যান্য সংগ্রাহকরাও এই নিয়ে বৃহত্তর অর্থে ভাবতে পারেন। কোনও ব্যাক্তিগত সংগ্রহের প্রদর্শনীর কথা বা আরও কোনও ভাবে তা মানুষের সামনে আনতে পারেন।
রিজেন্ট পার্ক থানার কাছেই চিত্রনাট্যকার ও পরিচালক লীনা গঙ্গোপাধ্যায়ের ক্যাফে ‘নোয়া’। সেখানেই সেজে উঠেছে ‘শখের বাজার’। প্রদর্শনী দেখতে ঢোকার সময়ই কাচের দরজায় বাইরে থেকে চোখে পড়বে চার্লি চ্যাপলিনের পোস্টার। দরজার উল্টো দিকে পথের পাঁচালির পোস্টার। পাশেই রাখা বায়োস্কোপ। ভিতরের দেওয়ালে পুরনো দিনের নানা সিনেমার পোস্টার।
কোন ভাবনা থেকে ‘শখের বাজার’ ? লীনা গঙ্গোপাধ্যায় জানালেন, এমন বিষয় নিয়ে প্রদর্শনীর প্রস্তাব পেয়ে তিনি সাগ্রহে সম্মত হন। চলচ্চিত্র জগতের পুরনো জিনিসপত্র, বই দেখতে অভিনয় জগতের লোকজন তো বটেই, পড়ুয়ারাও ভিড় করছেন। উৎসাহী সংগ্রাহকরাও রয়েছেন সেই তালিকায়। পুরনো দিনের ছবি নিয়ে চর্চায় স্মৃতিমেদুর হয়ে পড়ছেন অনেকেই। জানালেন, অভিনেত্রী মাধবী মুখোপাধ্যায় এত পুরনো ছবির পোস্টার, ছবি, বুকলেট দেখে আবেগপ্রবণ হয়ে পড়েছিলেন।
চলচ্চিত্র বিষয়ের পড়ুয়ারাও হাতে নিয়ে দেখতে পারছে লবি কার্ড। বুকলেট। অন্যতম উদ্যোক্তা জ্যোতির্ময় ভট্টাচার্য জানালেন, বর্তমান প্রজন্ম তো লবি কার্ডের নামই শোনেনি। হাতে নিয়ে সব কিছু দেখছেন-বুঝছেন তাঁরা।
চলচ্চিত্র জগতের নানা সংগ্রহ হাতে নিয়ে দেখছেন লোকজন। —নিজস্ব চিত্র
এই ধরনের প্রদর্শনী চলচ্চিত্র নিয়ে আগ্রহী ও গবেষণাকারী পড়ুয়াদের জন্যেও বিশেষ পাওনা বলেই মনে করছেন পরিচালক লীনা গঙ্গোপাধ্যায়। জানালেন, প্রতি মাসেই হারিয়ে যেতে বসা নানা জিনিস নিয়ে প্রদর্শনী করার পরিকল্পনা রয়েছে তাঁদের। সেই তালিকায় তাস থেকে ঘড়ি পর্যন্ত থাকতে পারে বলে জানালেন জ্যোতির্ময়।