বেহাল পরিষেবা, ধুঁকছে আমতলা গ্রামীণ হাসপাতাল

অস্ত্রোপচারের পরিকাঠামো রয়েছে। কিন্তু স্থায়ী শল্য চিকিৎসক নেই। দাঁতের চিকিৎসার পরিকাঠামো আছে। বিভাগীয় চিকিৎসকও আছেন। তবুও ফিরে যেতে হয় রোগীদের। টিবি নির্ণয়ের জন্য থুতু পরীক্ষার যন্ত্র আছে। কিন্তু তার ব্যবহার হয় মর্জিমাফিক। এসএনসিইউ আছে। নিওনেটোলজিস্ট নেই। এ ছবি আমতলা গ্রামীণ হাসপাতালের। ১১৭ নম্বর জাতীয় সড়কের উপরে অবস্থিত এই হাসপাতাল পরিচালনার ভার বিষ্ণুপুর দু’নম্বর পঞ্চায়েত সমিতির উপর।

Advertisement

জয়তী রাহা

কলকাতা শেষ আপডেট: ২৮ মার্চ ২০১৫ ০২:৫৬
Share:

সমস্যায় জর্জরিত এই হাসপাতাল। ছবি: অরুণ লোধ।

অস্ত্রোপচারের পরিকাঠামো রয়েছে। কিন্তু স্থায়ী শল্য চিকিৎসক নেই। দাঁতের চিকিৎসার পরিকাঠামো আছে। বিভাগীয় চিকিৎসকও আছেন। তবুও ফিরে যেতে হয় রোগীদের। টিবি নির্ণয়ের জন্য থুতু পরীক্ষার যন্ত্র আছে। কিন্তু তার ব্যবহার হয় মর্জিমাফিক। এসএনসিইউ আছে। নিওনেটোলজিস্ট নেই। এ ছবি আমতলা গ্রামীণ হাসপাতালের। ১১৭ নম্বর জাতীয় সড়কের উপরে অবস্থিত এই হাসপাতাল পরিচালনার ভার বিষ্ণুপুর দু’নম্বর পঞ্চায়েত সমিতির উপর।

Advertisement

অভিযোগ, বেশ কয়েক বছর ধরেই এর পরিষেবা প্রায় তলানিতে ঠেকেছে। বছর দুই আগে ইনকিউবেটর যন্ত্র বসিয়ে এসএনসিইউ-এর সূচনা করেছিল স্বাস্থ্য দফতর। আজও তা চালু হয়নি। বাম শাসনের শেষ পর্যায়ে উদ্বোধন হয়েছিল ওটি-র। সপ্তাহের ছ’দিনই সেটি তালা বন্ধ থাকে। সাধারণ প্রসব ছাড়া অন্য কোনও অস্ত্রোপচার প্রায় হয় না বললেই চলে। কারণ, হাসপাতালে স্থায়ী কোনও শল্য চিকিৎসক নেই। চুক্তির ভিত্তিতে এক জন শল্য চিকিৎসক প্রতি বুধবার অস্ত্রোপচার করেন বলে হাসপাতাল সূত্রে খবর। দন্ত বিভাগ সম্পর্কে অভিযোগ, সংশ্লিষ্ট চিকিৎসক বিভাগটি বন্ধ রেখে জরুরি বিভাগে কয়েক ঘণ্টার ডিউটি করে প্রাইভেট প্র্যাক্টিস করেন। ফলে রোগীরা এসে ফিরে যান।

সম্প্রতি ওই হাসপাতালে চিকিৎসা করাতে গিয়েছিলেন সোমনাথ পাঁড়ুই। ভ্যানরিকশা উল্টে মাথায় চোট পান। তাঁর অভিজ্ঞতায়, “মাথায় সাতটা স্টিচ করাতে কালঘাম ছুটেছিল। রক্ত তখন ভেসে যাচ্ছে সারা শরীর। নার্স নেই। চিকিৎসক লেবার রুমে।” অন্য এক রোগীর স্বামী জানাচ্ছেন, প্রসব যন্ত্রণা নিয়ে স্ত্রীকে হাসপাতালে নিয়ে গেলে চিকিৎসক জানান সিজার করতে হবে। কিন্তু ওই দিন শল্য চিকিৎসক না থাকায় স্ত্রীকে অন্যত্র নিয়ে যেতে হয়।

Advertisement

হাসপাতাল সূত্রে খবর, এত দিন সুপার ইনচার্জ কাজ চালাচ্ছিলেন হাসপাতালের। সদ্য তিনিই সুপার হিসেবে নিয়োগপত্র পেয়েছেন। স্থায়ী ও চুক্তির ভিত্তিতে পাঁচ জন চিকিৎসক এবং অপ্রতুল নার্স নিয়ে চলছে চিকিৎসা পরিষেবা। অস্থায়ী কর্মীদের ক্ষোভ, সামান্য টাকায় তাঁদের কাজ করতে হয়। দীর্ঘ দিন কাজের পরেও তাঁদের স্থায়ীকরণের কোনও উদ্যোগ নেই হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের।

এক রোগী জানান, শৌচাগার অত্যন্ত নোংরা। প্রসব যন্ত্রণা নিয়ে আসা রোগীকেও ওখানেই যেতে হয়। অপরিচ্ছন্ন এবং জলের অভাবের জন্য রোগীরা স্নান করার সাহসও পান না। হাসপাতালে অপর্যাপ্ত আলোর অভিযোগ করছেন সকলেই। হাসপাতাল চত্বরে আলোর ব্যবস্থাও পর্যাপ্ত নয়। ঝোপঝাড় ও আগাছায় ঢেকে গিয়েছে হাসপাতালের চার দিক। আমতলা নাগরিক উন্নয়ন ও জনকল্যাণ প্রসার সমিতির সম্পাদক দেবাশিস দে বলেন, “চিকিৎসা পরিষেবার পাশাপাশি জল, পরিচ্ছন্নতা নিয়েও সমস্যা রয়েছে। রোগীদের রান্নার জল আনতে আশপাশের বাড়িতে যেতে হয়। হাসপাতালের ট্যাঙ্কের জল পানের অযোগ্য

হলেও তাতেই বাসন ধোওয়া, ঘর মোছা হয়।”

যদিও সমস্ত অভিযোগ অস্বীকার করছেন হাসপাতালের সুপার অপূর্ব বিশ্বাস। তিনি বলেন, “চিকিৎসকের কোনও সমস্যাই নেই। সপ্তাহে এক দিন ওটি হয়। নিওনেটোলজিস্ট না থাকলেও এসএনসিইউ ঠিক মতো চলছে।” তিনি জানান, জলেরও কোনও সমস্যা নেই। গত সাত দিন জলের পাইপ ফেটে সমস্যা হয়েছিল। সেটাও সারিয়ে নেওয়া হয়েছে। বিষ্ণুপুর ২ নম্বর পঞ্চায়েত সমিতির সভাপতি মোহন নস্কর অবশ্য বলছেন, “খুবই সমস্যা হাসপাতালে। দাঁতের বিভাগ নিয়ে অভিযোগ পেয়ে সুপারের সঙ্গে কথা বলেছি। পঞ্চায়েতে সমিতির পক্ষ থেকে এক লক্ষ টাকা জলের সমস্যা মেটাতে এবং হাসপাতাল চত্বর পরিচ্ছন্নতার জন্য দেওয়া হয়েছে। কাজ শুরু হবে।” তিনি জানান, হাসপাতালবাড়ির অবস্থাও খারাপ। চিকিৎসক নেই। ফলে ওটি, এসএনসিইউ ঠিক মতো চালু রাখা যাচ্ছে না। জাতীয় সড়কের উপরে হওয়ায় একটি ট্রমা সেন্টারও থাকা জরুরি। সম্প্রতি স্থানীয় সাংসদ অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়কে এই সব কিছু জানান হয়েছে। হাসপাতালের তরফে স্বাস্থ্য দফতরকেও চিকিৎসক চেয়ে চিঠি দেওয়া হয়েছে। স্বাস্থ্য দফতর সূত্রে খবর, এখনও কোনও চিঠি আসেনি। চিকিৎসকের অভাব রাজ্যজুড়ে। চিঠি এলে দেখা হবে আমতলা গ্রামীণ হাসপাতালের ক্ষেত্রে কতটা কী করা যায়।

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement