লেখিকা, সমাজসেবী তথা ‘ইনফোসিস’ সংস্থার চেয়ারপার্সন সুধা মূর্তি। ছবি- সংগৃহীত
লেখিকা, সমাজসেবী তথা ‘ইনফোসিস’ সংস্থার চেয়ারপার্সন সুধা মূর্তিকে অনেকেই চেনেন। কন্নড় এবং ইংরেজি সাহিত্যে তাঁর অবদান অনস্বীকার্য। সমাজের জন্য সুধার যে অবদান, সেই কথা মনে রেখেই ভারত সরকার তাঁকে ২০০৬ সালে পদ্মশ্রী সম্মানেও ভূষিত করে।
পারিবারিক পরিচয়ও বহুমুখী। এক দিকে তিনি ‘ইনফোসিস’ কর্তা নারায়ণ মূর্তির সহধর্মিণী, অন্য দিকে সদ্য নির্বাচিত বিট্রেনের প্রথম অশ্বেতাঙ্গ এবং কনিষ্ঠতম প্রধানমন্ত্রীর শাশুড়ি। এত কিছু সত্ত্বেও সুধা কিন্তু সাধারণ জীবনযাপনেই অভ্যস্ত। দেশের চোখে বিখ্যাত সুধা। কিন্তু বিখ্যাত হয়ে ওঠার লক্ষ্য নিয়ে কাজ করেননি। বাইরের চাকচিক্য তাঁকে গ্রাস করতে পারেনি কোনও কালেই। “টেলিভিশনে বা খবরের কাগজে মুখ দেখানো মানেই বিখ্যাত হওয়া নয়। সাধারণ ভাবে বলতে গেলে, আশপাশের মানুষের কাছে আপনার গ্রহণযোগ্যতা কতটা, তার উপরেও কিছুটা নির্ভর করে এই বিষয়টি,” বলছেন সুধা।
কিন্তু সুধার ক্ষেত্রে বিষয়টি একটু অন্য রকম। তাঁর চোখেও গ্রহণযোগ্যতার প্রয়োজন ছিল। তবে তাঁর জীবনে বাইরের মানুষের গ্রহণযোগ্যতা ক্ষণ স্থায়ী। সুধা বলছেন, “গ্রহণযোগ্যতা দেখে আমি কাজ করি না। তার জোয়ারে গা ভাসিয়েও দিই না। আমি যে বিষয় নিয়ে পড়াশোনা করেছি, সেই সময়ে তার কোনও গ্রহণযোগ্যতাই ছিল না। আমাকে, আমার কাজ দিয়ে প্রমাণ করতে হয়েছে। আমার কাজ নিয়ে মানুষ কী ভাবলেন, তা নিয়ে সত্যিই আমার কিছু এসে যায় না। কারণ আমি কোনও অনৈতিক কাজ করছি না। আমার কাজ গরিব মানুষদের পাশে থাকা। তার জন্য কে কী বলল, সে সব নিয়ে সত্যিই ভাবি না। আমি সবটাই গ্রহণ করতে পারি। হয়তো এই মানসিকতাই আমাকে বিখ্যাত হওয়ার স্বাদ কেমন, তা বুঝতে দেয়নি।”
শুধু দেশ নয়, দেশের বাইরেও কটাক্ষের শিকার হয়েছেন সুধা। সংবাদমাধ্যমকে দেওয়া একটি সাক্ষাৎকারে তেমন একটি অভিজ্ঞতার কথাই তুলে ধরেছেন তিনি। “অনেকেই আমাকে দেখে ভাবেন, আমি বোধ হয় ইংরেজিতে সড়গড় নই। তাঁদের ধারণা, যাঁরা শাড়ি বা সালোয়ার কামিজ় পরেন, মেক আপ করেন না, তাঁরা অশিক্ষিত,” বলছেন লেখিকা সুধা।
সদ্য নির্বাচিত বিট্রেনের প্রথম অশ্বেতাঙ্গ এবং কনিষ্ঠতম প্রধানমন্ত্রী ঋষির শাশুড়ি সুধা। ছবি- সংগৃহীত
তথ্যপ্রযুক্তি জগতে উজ্জ্বল নক্ষত্র নারায়ণ মূর্তি, সুধার স্বামী। তাঁর সঙ্গে একটি অনুষ্ঠানে গিয়েও বিদ্রুপের শিকার হয়েছিলেন সুধা। ওই অনুষ্ঠানে উপস্থিত অতিথিরা সে দিন, তাঁর কম দামি জীবনযাপন দেখেই ভেবেছিলেন, এত সাধারণ সুধা বোধ হয় ইংরেজি বুঝতে পারবেন না।
এমনকি, লন্ডনের হিথরো বিমানবন্দরেও এমন অভিজ্ঞতা হয়েছিল তাঁর। সালোয়ার কামিজ় পরিহিতা সুধাকে দেখে বিমানবন্দরের কর্মীরা তাঁকে ‘ইকনমি ক্লাস’-এর লাইনে দাঁড়াতে বলেন।
সুধা জানতে চান, শ্রেণির সংজ্ঞা কী? ‘ক্লাস’ অর্থ নয়, যশ নয়, সৌন্দর্য নয়। তিনি বলেন, ‘‘আপনি যে সমাজে বাস করেন, তাঁদের চোখে আপনার গ্রহণযোগেয্যতা কতটা, সেটাই আপনার ‘ক্লাস’। কিন্তু আমার কাছে শ্রেণির সংজ্ঞাটি আলাদা। আমি কারও ‘ক্লাস’ বিচার করি, সমাজে তাঁর অবদান কতটুকু তা দেখে।”
বেশির ভাগ মানুষজনই বাইরেটা দেখে বিচার করেন। সমাজের সিংহ ভাগ মানুষের এই আচরণকে বুড়ো আঙুল দেখাতে পারা এবং নিজের লক্ষ্যে অবিচল থাকতে পারাটাই বোধ হয় অন্তরের শিক্ষা।