ঘর ঠান্ডা করার যন্ত্র বাছাইয়ের আগে মাথায় রাখুন স্বাস্থ্যের কথা। ছবি:ফ্রিপিক।
বসন্তেই চড়ছে তাপমাত্রার পারদ। অনেক বাড়িতেই ইতিমধ্যে এসি চলছে। আর কয়েক দিন পর থেকেই এসি বা কুলার চালাতে হবে পুরোদমে। এখন গ্রীষ্মকালে তাপমাত্রার পারদ যে ভাবে চড়ে, তাতে এসি বা এয়ার কুলার আর বিলাসিতা নয়, বরং প্রয়োজনীতা হয়ে উঠেছে। এখন প্রশ্ন হল কোনটি কিনবেন? এ ক্ষেত্রে খরচ একটা প্রশ্ন অবশ্যই, তবে স্বাস্থ্যের দিকটিও কম গুরুত্বপূর্ণ নয়। অনেকেই বলেন এয়ার কুলার না কি ক্ষতিকর, আসলে কি তাই!
আবহাওয়ার দিক দিয়ে ভাবলে কলকাতায় এয়ার কুলারের চেয়ে এসি সব সময়েই বেশি কার্যকর। কারণ, এখানে বাতাসে আর্দ্রতার পরিমাণ বেশি। আর তুলনামূলক শুষ্ক আবহাওয়ায় এয়ার কুলার বেশি ভাল কাজ করে।
তবে গরমে স্বস্তি পেতে যাঁরা দামের জন্য এসি কিনতে পারেন না, তাঁদের অনেকেই এয়ার কুলার বেছে নেন। শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত যন্ত্র এবং এয়ার কুলার দু’টি ঘরের তাপমাত্রা কমাতে পারলে পদ্ধতিগত ভাবে তা হয় আলাদা। এয়ার কুলারে জল বা বরফ দেওয়া হয়। সেটি বাষ্পীভূত হয়ে ঘরের তাপমাত্রা কমায়। এয়ার কুলার ঘরে আর্দ্রতার পরিমাণও বাড়িয়ে দেয়। আবার এসির মাধ্যমে একই বাতাস ছড়িয়ে পড়ে। কমে আর্দ্রতা।
চিকিৎসক অরিন্দম বিশ্বাস বলছেন, ‘‘দু’টি যন্ত্র একই রকম ক্ষতিকর হতে পারে যদি তা সঠিক ভাবে পরিষ্কার করা না হয়। এসির এয়ার ফিল্টার বা এয়ার কুলারের জল রাখার প্রকোষ্ঠ নির্দিষ্ট সময় অন্তর পরিষ্কার না হলে ব্যাক্টেরিয়া, ছত্রাক বাসা বাঁধতে পারে।’’
সাধারণত শুষ্ক এলাকাতেই এয়ার কুলারের ব্যবহারের বেশি। সেখানে তেমন সমস্যা না হলেও, ক্রিটিকাল কেয়ার ইউনিটের চিকিৎসক নিখিল মোদি বলছেন, আর্দ্র এলাকায় এয়ার কুলার ব্যবহার ক্ষতিকর হতে পারে। অতিরিক্ত আর্দ্রতা একাধিক অসুখের কারণ হতে পারে। তার কারণও ব্যাখ্যা করেছেন চিকিৎসক। তিনি বলছেন, ‘‘উষ্ণ এবং আর্দ্র আবহাওয়ায় ছত্রাক, ব্যাক্টেরিয়া দ্রুত বৃদ্ধি পায়। ফলে হাঁপানি, শ্বাসকষ্টের সমস্যা থাকলে এয়ার কুলারের ব্যবহার এড়িয়ে চলাই ভাল।’’
উত্তরপ্রদেশ বা রাজস্থানের মতো যে সব জায়গায় যেখানে বাতাসে আর্দ্রতা কম, সেখানে এয়ার কুলার ক্ষতিকর না হলেও, কলকাতা বা যে সব জেলায় আর্দ্রতা বেশি সে ক্ষেত্রে কুলার ক্ষতির কারণ হতে পারে।
চিকিৎসক অরিন্দম সতর্ক করছেন, এসি বা এয়ার কুলার নিয়ম করে পরিষ্কার করা না হলে তা থেকে অনেক অসুখ ছড়াতে পারে। তিনি বলছেন, ‘‘অতীতে বিদেশে এমন ঘটনা ঘটেছে। এসির মধ্যে বাসা বাঁধা লিজিওনেল্লার মতো ব্যাক্টেরিয়া থেকে ‘লিজিওনেয়ারিস’-এর মতো অসুখ ছড়িয়েছে। এটি নিউমোনিয়ার মতোই। ফুসফুসে প্রদাহ হয়।’’
তবে এসি-র চেয়ে এয়ার কুলার ভাল বলে মনে করেন ফরিদাবাদের চিকিৎসক জয়ন্ত ঠাকুরিয়া। তিনি বলছেন, ‘‘যে হেতু এসিতে একই বাতাস ছড়িয়ে যায়, তাই বায়ুবাহিত রোগের আশঙ্কা বাড়ে। যেটা এয়ার কুলারে হয় না। তাঁর যুক্তি, এয়ার কুলারের মাধ্যমে তাজা বাতাস ঢোকে, তাই সেটা তুলনামূলক ভাবে ভাল। তবে সবটাই নির্ভর করছে ব্যক্তিগত অসুখ, সমস্যা এবং পরিবেশের উপর। তবে তিনিও একমত, আর্দ্র জায়গায় এয়ার কুলারের ব্যবহার সাইনাটাইটিস, ছত্রাক সংক্রমণ বৃদ্ধি করতে পারে।
এসির সাহায্যে ঘরের তাপমাত্রা নির্দিষ্ট করা যায়। সেটি ভাল দিক হলেও, সমস্যা হল এই যন্ত্র ঘরে জলীয় বাষ্পের মাত্রা কমিয়ে দেয়। যার ফলে, ড্রাই আই, ত্বক রুক্ষ হয়ে যাওয়ার মতো সমস্যা দেখা দেয়। সাইনাসের মতো সমস্যাও এতে বাড়তে পারে।
চিকিৎসকদের পরামর্শ, ঘর ঠান্ডা রাখতে যেটাই ব্যবহার করা হোক না কেন, পরিচ্ছন্নতার দিকে নজর দেওয়া খুব জরুরি। পেশাদার লোকজনকে দিয়ে এসির সব অংশ পরিষ্কার করা দরকার দু’-তিন মাস অন্তর জানাচ্ছেন অরিন্দম। এসি-র যে অংশ দিয়ে ঠান্ডা হাওয়া বেরোয়, তার খুব কাছে থাকা ঠিক নয় বলেও সতর্ক করছেন তাঁরা। এয়ার কুলারের জল রাখার জায়গাটি নিয়মিত পরিষ্কার করতে বলছেন অন্য চিকিৎসকেরা।