গ্রাফিক: শৌভিক দেবনাথ।
নারীসুরক্ষার দাবিতে উত্তাল শহর কলকাতা। আরজি কর কাণ্ডের প্রতিবাদ এই আন্দোলনের সূত্রপাত হলেও, এখন তা বহু নারীর এক স্বর হয়ে ছড়িয়ে পড়েছে সর্বত্র। গণপরিবহণ থেকে রাস্তাঘাট, প্রতিনিয়ত নারীকে শারীরিক এবং মৌখিক হেনস্থার শিকার হতে হয়। বাদ নেই কর্মক্ষেত্রও। তা আরও এক বার মনে করিয়ে দেয় সাম্প্রতিক সময়ে ঘটে যাওয়া নির্মম ঘটনা। এখানেই শেষ নয়। আরজি করের ঘটনার মাসখানেক পেরোতে না পেরোতেই টলিডড ইন্ডাস্ট্রিতেও নারীর সুরক্ষা প্রশ্নের মুখে। পরিচালক অরিন্দম শীলের বিরুদ্ধে ওঠা যৌন হয়রানির অভিযোগ প্রমাণ করে দেয়, এই একবিংশ শতকে দাঁড়িয়েও নারীর নিরাপত্তা, সম্মান বিপন্ন। নারীকে পণ্য হিসাবে ভেবেই উল্লসিত হন, তৃপ্তি পান সমাজের এক শ্রেণির মানুষ। নারী নির্যাতনের ইতিহাস সে কথাই বলছে। কিন্তু, এর শেষ কোথায়? যে যুগে পুরুষ সহকর্মীর সঙ্গে দীর্ঘ সময় সুনীতা উইলিয়ামস মহাকাশে থাকতে পারেন, সেই সময়ে নারীর সম্মান নিয়ে ছিনিমিনি খেলা কি সত্যিই এত সহজ? হেনস্থাকারীর চোখে চোখ রেখে প্রতিবাদ আর রুখে দাঁড়ানোই কি এ যুগে মেয়েদের একমাত্র হাতিয়ার? এই বিষয়গুলিকে মাথায় রেখেই আনন্দবাজার অনলাইনের ইউটিউব চ্যানেলে আলোচনায় বসেছিলেন অভিনেত্রী চৈতী ঘোষাল এবং দেবলীনা ঘোষ।
আরজি কর-কাণ্ডের প্রতিবাদে রাস্তায় নেমে স্লোগানে গলা মেলাতে দেখা গিয়েছে চৈতীকে। ইন্ডাস্ট্রিতে কাটিয়ে দিয়েছেন বহু বছর। হাতের তালুর মতো চেনেন টলিউডের অলিগলি। বিখ্যাত বাবার মেয়ে হওয়ার সুবাদে খানিকটা হলেও নিজেকে সুরক্ষিত রাখতে পেরেছেন। তবে কুপ্রস্তাব এসেছে তাঁর কাছেও। কী ভাবে সামলেছিলেন চৈতী? অভিনেত্রীর কথায়, ‘‘না বলতে শিখতে হবে। আমি না বলতে জানি। যে পরিচালকদের নিয়ে এত কথা হচ্ছে, তাঁরা আমার জন্য নানা সমস্যা তৈরি করার চেষ্টা করেছেন। কিন্তু পারেননি। সম্মান ক্ষুণ্ণ হচ্ছে বুঝতে পেরে আমি নিজেই এ ধরনের মানুষদের এড়িয়ে চলেছি।’’ শুধু তো বিনোদন দুনিয়া নয়, নারী-হেনস্থার ঘটনার শুরু গার্হস্থ্য হিংসা থেকে। রাতের অন্ধকার হোক কিংবা দিনের আলো, নারী ঘরের বাইরেও বিপন্ন। কাজের জায়গাতেও তাঁরা অসুরক্ষিত। নারীর মনের মধ্যে জমে থাকা প্রতিবাদ আর ক্ষোভের আগুন কি আন্দোলনের মধ্যে দিয়ে স্ফুলিঙ্গের মতো ছড়িয়ে পড়ছে? দেবলীনা বলেন, ‘‘আমরা, নারীরা নিরাপদ নই পশ্চিমবঙ্গে। আর এই ঘটনা কর্মক্ষেত্রে ঘটায় আরও নাড়িয়ে দিয়েছে মানুষকে। আমাদের প্রচার বেশি বলে এখানকার হেনস্থার ঘটনা প্রকাশ্যে আসে। কিন্তু হেনস্থাকারীরা সব ক্ষেত্রেই আছে। এ বার তাদেরকে শাস্তি দেওয়ার সময় হয়ে গিয়েছে।’’