প্রায় ২০ বছর আগে সেই যে বাড়ির চৌকাঠ পেরোল মেয়ে, আজও তাঁর একটা পা বাইরে। প্রতীকী ছবি।
মেয়ের বয়স তখন ১৭। দশম শ্রেণির পড়ুয়া বৃত্তি পেয়ে সিঙ্গাপুরে পড়তে যাওয়ার সুযোগ পেয়েছে। বাবা-মায়ের গর্বের শেষ নেই। সেই সঙ্গে চিন্তার ভাঁজ কপালে। ছোট থেকে কাছছাড়া হয়নি যে মেয়ে, সে কী করে বিদেশ-বিভুঁইয়ে একা থাকবে। তবু সুযোগ যখন এসেছে, ছাড়তে তো হবেই। প্রায় ২০ বছর আগে সেই যে বাড়ির চৌকাঠ পেরোল মেয়ে, আজও তাঁর একটা পা বাইরে। পৃথিবীর প্রায় ৩০টি দেশ ঘুরে ফেলেছেন ইতিমধ্যেই। শুধু ঘুরেছেন বললে ভুল হবে। যেখানেই গিয়েছেন, সেখানকার সংস্কৃতির সঙ্গে মিশে গিয়েছেন। বছরের পর বছর থেকেছেন। এত দিন ধরে এই বর্ণময় অভিজ্ঞতা শুধু নিজের মনে বয়ে বেড়াতেন বৈশাখী সাহা, এ বার তা বন্দি করলেন দু’মলাটের মধ্যে। মঙ্গলবার সন্ধ্যায়, ৪৬তম আন্তর্জাতিক কলকাতা বইমেলায় প্রকাশিত হল তাঁর লেখা প্রথম ইংরাজি বই ‘লাইফ ইজ অ্যাব্রাকাড্যাব্রা’। ২১টি অধ্যায় রয়েছে বইটিতে। প্রতিটি অধ্যায় জুড়ে বৈশাখী তাঁর বিদেশ যাপনের রকমারি অভিজ্ঞতার কথা লিখেছেন।
মঙ্গলবার সন্ধ্যায়, ৪৬তম আন্তর্জাতিক কলকাতা বইমেলায় প্রকাশিত হল বৈশাখীর লেখা প্রথম ইংরাজি বই ‘লাইফ ইজ অ্যাব্রাকাড্যাব্রা’। ছবি: সংগৃহীত।
সিঙ্গাপুর থেকে বৈশাখীর বোহেমিয়ান জীবনের সফর শুরু। তার পর কী ভাবে যেন পর পর বিশ্বভ্রমণের দরজা খুলে যায়। সিঙ্গাপুরে থাকাকালীন বৈশাখী আফ্রিকায় একটি ভাল প্রজেক্টে কাজ করার সুযোগ পান। কিন্তু এ বার বাধ সাধলেন বাবা-মা। এতটুকু মেয়েকে আফ্রিকার মতো অপরিচিত একটি মহাদেশ একেবারে একা ছেড়ে দিতে নারাজ। মায়ের কান্নাকাটি, বাবার বারণ— কোনও কিছুই টলাতে পারেনি বৈশাখীর জেদ। ওই বয়সেই একা পাড়ি দিয়েছিলেন আফ্রিকা। তার পর আর থামেননি। একের পর এক দেশ ঘুরেছেন। নাইজেরিয়া, ভেনেজুয়েলা, কোস্টারিকা— এ তালিকা দীর্ঘ। এক একটি দেশে এক এক রকম সংস্কৃতি, ভাষা, খাওয়াদাওয়া, পোশাক, স্থানীয় বাসিন্দাদের আচরণ সবটাই আত্মস্থ করেছেন তিনি।
এই গোটা যাত্রাপথ যে মসৃণ ছিল, এমন নয়। সিঙ্গাপুর আসার পরেই বৈশাখীর শিরদাঁড়ায় ধরা পড়েছিল কঠিন অসুখ। চিকিৎসক বলেছিলেন, এই অসুখ কমবে না কখনও। আর কমলেও সময় লাগবে দীর্ঘ। তবু কী ভাবে যেন খুব তাড়াতাড়ি পুরোপুরি সুস্থ হয়ে উঠেছিলেন বৈশাখী। পরবর্তীকালে প্রচুর সমস্যার সম্মুখীন হয়েছেন। কিন্তু কোনও এক জাদুবলে সব সমস্যার সমাধান হয়েছে নিমেষে। কোন মন্ত্রগুণে সময় সব ক্ষেত্রে তাঁর পক্ষে ছিল, তা আজও বুঝতে পারেন না বৈশাখী। লেখিকার কথায়, ‘‘সমস্যায় আমি বহু বার পড়েছি। তবু কোন জাদুকাঠির সব ছোঁয়ায় উতরে গিয়েছে বুঝতে পারি না। আমার বই জুড়ে সেই অ-জানা অনুভূতিগুলি ধরার চেষ্টা করেছি। এই বইটিতে পুরোটা লিখে উঠতে পারিনি। পরবর্তী অধ্যায়গুলি পরের বইতে থাকবে।’’