ছবি: সংগৃহীত।
সূর্যের আলোয় এখনকার মতো ভয় বোধ হয় আগে কখনও পায়নি মানুষ!
—ফাইল চিত্র।
কতখানি ভয়? তা রক্ষাকবচের বাড়াবাড়ি দেখলেই বোঝা যায়। রোদে বেরোলে মাথায় কাপড়, রোদচশমা, সানস্ক্রিন, ছাতা, কনুই পর্যন্ত হাতঢাকা দস্তানা, এমনকি, ছোটদের ব্যাগে গরমকালে রেডিমেড ওআরএসের পাউচও দিয়ে দেন বাবা মায়েরা! বছর ৩০-৪০ আগেও কি ছবিটা এমন ছিল। রোদে তো তখনও রাস্তায় নেমেছে মানুষ। এসি গাড়ির এত ঘনঘটা ছিল না তখন। চড়া রোদ্দুরে বড়জোড় মাথায় থাকত ছাতা। খুব কেতাদুরস্তেরা রোদচশমা পরতেন। হাতেগোনা কিছু শৌখিনী ব্যবহার করতেন সানস্ক্রিন লোশন। রাস্তাঘাটে কাপড়ে মাথা মোড়ানো, রোদচশমা, দস্তানায় ঢাকা মহিলাদের হেঁটে যেতে দেখা যেত না। হয়তো উষ্ণায়ন তখনও এতটা মাথায় চড়ে বসেনি। কিন্তু খর গ্রীষ্মে তাপপ্রবাহ কি হত না! তার পরেও তো সে সব সহ্য করে মানুষ দীর্ঘ দিন বাঁচত। হয়তো এখনকার থেকে কিছু বেশিই।
—ফাইল চিত্র।
তা-ই যদি হবে, তা হলে এখন কেন এত বাধানিষেধ? কেন বলা হয় রোদ থেকে বাঁচতে? কেন বলা হয় সূর্যরশ্মি ত্বকের জন্য ক্ষতিকর, তাই সানস্ক্রিন মাখা আবশ্যক? তবে কি এই ভয় বা আতঙ্কের পুরোটা ঠিক নয়?
বিভিন্ন গবেষণায় দেখা যাচ্ছে, সূর্যের রশ্মি শুধু শরীরকে ভিটামিন ডি-ই সরবরাহ করে না, তার আরও অনেক গুণ আছে। তার মধ্যে সবচেয়ে বেশি উল্লেখযোগ্য হল শরীরকে দূষণমুক্ত করার ক্ষমতা। এ ছাড়া হৃদ্রোগের ঝুঁকি কমানোর ক্ষেত্রেও কার্যকরী সূর্যরশ্মি। প্রতি দিন শুধু ২০ মিনিট রোদে থাকলেই তার উপকার পাওয়া যেতে পারে।
ছবি: সংগৃহীত।
কী কী উপকার?
সূর্যের অতিবেগনি রশ্মি আগের থেকে এখন অনেক বেশি পৌঁছোচ্ছে পৃথিবীর বুকে। তার কারণ, বিজ্ঞানীরা বলছেন, পৃথিবী আর সূর্যের মাঝামাঝি ওই রশ্মিকে ছেঁকে নেওয়ার যে স্তর ছিল, তার ছাঁকনি ক্রমশ অকেজো হচ্ছে। ছিঁড়ে যাচ্ছে জাল। অতিবেগনি রশ্মি স্বাস্থ্যের ক্ষতি করলেও এর কিছু কিছু উপকারও আছে। ২০১৪ সালের একটি গবেষণা বলছে, সূর্যের অতিবেগনি রশ্মি রক্তচাপ কমাতে সাহায্য করে। একই সঙ্গে রক্ত সঞ্চালন এবং হৃৎস্পন্দন বৃদ্ধিতেও সাহায্য করে, যা হৃদ্যন্ত্রের জন্য উপকারী।
প্রতি দিন যদি ২০-৩০ মিনিট রোদ গায়ে লাগানো যায়, তবে ভিটামিন ডি-র অভাবও হবে না। ২০০৪ সালের একটি গবেষণা বলছে, ভিটামিন ডি-র অভাবে ছোটদের রিকেট রোগ হতে পারে। বড়দের হতে পারে অস্টিয়োপোরোসিস। এ ছাড়াও হাড়ের রোগ অস্টিয়োম্যালাসিয়া হতে পারে ভিটামিন ডি-র অভাবে। ওই গবেষণায় বলা হয়েছে, ভিটামিন ডি-র অভাব মারণরোগ ক্যানসারের ঝুঁকিও বাড়িয়ে দিতে পারে। হার্টের রোগ, মাল্টিপল সিরোসিস, রিউমাটয়েড আর্থ্রারাইটিস এবং টাইপ ওয়ান ডায়াবিটিস মেলিটাসের ঝুঁকিও বাড়তে পারে ভিটামিন ডি-র অভাবে।