স্বাদে আমকে টেক্কা দিতে পারে, গরমকালে এমন ফল খুব কমই রয়েছে। তাই গ্রীষ্ম এলেই বাজারে হিমসাগর থেকে গোলপখাস, সব রকম আমের কদর ও দর দুই নিয়েই ব্যস্ত হয়ে যায় বাঙালি। গরমে খিদে ও রসনা মেটাতে তাই ফ্রিজ থেকে বার করে হাপুসহুপুস শব্দ আমাদের অচেনা নয়। প্রায় দু’বেলা খাবার পাতে আম না হলে আমাদের মুখ ভার!
কিন্তু একের পরে এক আম খাওয়া আদৌ কি স্বাস্থ্যকর? এমনিতে স্বাদে-গন্ধে অতুলনীয় হলেও অতিরিক্ত আম খেয়ে কিন্তু বিপদও ডাকছেন আপনি।আমের ঘরে কিন্তু কাঁটা ফেলছেন চিকিৎসকরাই। তাঁদের মতে শরীরের দিকে খেয়াল না রেখে আম খেলে কিন্তু আপনার জন্য অপেক্ষা করছে নানা ক্ষতি। জানেন সে সব?
আমে ভিটামিন সি ও ক্যালোরি দুইয়ের পরিমাণই যথেষ্ট থাকে। মাঝারি সাইজের আমে থাকে ১৩৫ ক্যালোরি। কিন্তু যাঁরা ওবেসিটির সমস্যায় ভুগছেন এবং ওজন কমানোর চেষ্টা করছেন, তাঁদের পক্ষে এই কারণেই আম ক্ষতিকারক হয়ে উঠতে পারে। তাই পরিমাণ বুঝে আম খান।
আম রক্তে চিনির মাত্রা বাড়িয়ে দেয়। এটি ফ্রুকটোজে ভরপুর। তাই যাঁরা ডায়াবিটিসের রোগী, তাঁদের পক্ষে আম বড় বিপদ হয়ে দেখা দিতে পারে। ব্লাড সুগার আয়ত্তে রাখতে তাই নিয়ম-নীতি ভেঙে ও চিকিৎসকের পরামর্শ ছাড়া আম একেবারেই নয়। খেলেও নিয়ন্ত্রণ রেখে খান।
আজকাল বহু আমই কৃত্রিম ভাবে পাকানো হয়। ক্যালশিয়াম কার্বাইড ব্যবহার করা হয় আম পাকাতে। এই রাসায়নিকগুলি ব্যবহারের ফলে শরীরে বিভিন্ন ধরনের প্রভাব পড়তে পারে। এর থেকে শরীরে ক্লান্তি, অবশ বোধ করা ইত্যাদি সমস্যা দেখা দিতে পারে। শুধু তা-ই নয়, এই সব রাসায়নিক ব্যবহার করার ফলে ত্বকেরও নানা সমস্যা দেখা দিতে পারে।
অতিরিক্ত আম খেলে আরও যে বড় সমস্যা হয় সেটি হল হজমের সমস্যা। রোজ বেশি পরিমাণে আম খেলে হজমশক্তির উপর তার প্রভাব পড়ে। শুধু তা-ই নয়, দিনের পর দিন অতিরিক্ত আম গ্যাসটাইট্রিসের সমস্যাকেও উস্কে দেয় অনেকটা। তাই হজম ক্ষমতাকে ঠিক রাখতে চাইলে ঘন ঘন আম খাওয়া বুদ্ধিমানের কাজ নয়।
আম খাওয়ার সময় কিছু সচেতনতাও অবলম্বন করতে হয় বইকি।খেয়াল রাখুন, আমে লেগে থাকা আঠা যেন কোনও ভাবে মুখে লেগে না যায়।এ থেকে মুখে চুলকানি, জ্বালা হতে পারে। বেশ কয়েকদিন এর দাগও থেকে যায়। তাই আম খাওয়ার সময়ে এই আঠা যাতে না লাগে সেদিকে নজর দিতে হবে।
আর্থারাইটিস বা বাতের ব্যথায় যাঁরা ভোগেন তাঁরা আম এড়িয়ে চলুন। আম খেলে এই ধরনের ব্যথা বাড়ার আশঙ্কা বেড়ে যায়। একান্তই আম খেতে চাইলে চিকিৎসকদের পরামর্শ নিন।
অনেকে আম চিবিয়ে না খেয়ে আমের জুস করে খান। কিন্তু এতে আমের মধ্যে অবস্থিত ফাইবারগুলি নষ্ট হয়ে যায়। ফলে সেই ফাইবারের গুণাগুণ শরীরে কাজে লাগে না। উল্টে পেটের সমস্যা বেড়ে যাওয়ার আশঙ্কা থাকে।
যাঁদের ত্বকে অ্যালার্জির প্রবণতা আছে, তাঁরাও আম খাওয়ায় নিয়ন্ত্রণ আনুন। এঁদের আম খেলে চোখ জ্বালা, হাঁচি, পেটে ব্যথা, ঠান্ডা লেগে যাওয়া ইত্যাদি সমস্যা আসতে পারে। তাই আম খাওয়ার আগে সচেতন থাকুন।