৫০০ টাকা সঞ্চয় নিয়ে শুরু। প্রথম দিন প্রতিবেশীদের কাছ থেকে ধার করে আনেন কাচের বাসন, বেডশিট, জানলা-দরজার পর্দা। নিজস্ব চিত্র।
একলা মেয়ের সংসার। সেখানে হাজির চার অচেনা পুরুষ। রাতে থাকবেন তাঁরা! চারপাশে বড্ড কথা উঠেছিল সে দিন। সেই সব কথা চুপচাপ মুখ বুজেই এড়াতে চেয়েছিলেন পবিত্রা। এড়িয়েও ছিলেন। কারণ, এটাই তো তিনি চাইছিলেন দীর্ঘ দিন ধরে। তাঁর ঘরে অতিথি আসুন। তাঁরা রাতে থাকুন। পবিত্রা খাওয়াস জানতেন, এক দিন না এক দিন চারপাশের ওই সব চোখ-মুখ বদলে যাবে। একটা না একটা সময়ে তিনি ভরসার পাত্রী হয়ে উঠবেন সকলের কাছে। এবং, এক দিন সেটা হলও। পবিত্রার হাত ধরে এক অখ্যাত পাহাড়ি গ্রাম বাংলার পর্যটন মানচিত্রে ধীরে ধীরে ফুটে উঠল। গ্রামটার নিজস্ব অর্থনীতি বদলে গেল। পাল্টে গেল তার সামাজিক চিত্রও।
দশক দুয়েক আগের সেই দিনটার কথা আজও মনে আছে বছর সাতচল্লিশের পবিত্রার। প্রথম দিনটার কথা। ঘরে চার জন অতিথি। তাঁদের জন্য তিনিই রান্না করেছিলেন। সব্জি, ডাল, পাহাড়ি মুরগির ঝোল, মোটা চালের ভাত আর রুটি। বাড়িতে কাচের বাসন ছিল না। পাশের বাড়ি থেকে চেয়ে এনেছিলেন। বিছানার চাদর আর দরজা-জানলার পর্দাও ধার করে আনা। পবিত্রা চেয়েছিলেন, এমন করে অতিথিরা রোজ রাতে তাঁর বাড়িতে এসে থাকুন। তিনি তাঁদের যত্ন করবেন। বাজার করবেন। নিজের হাতে রান্না করে খাওয়াবেন। বিনিময়ে যে অর্থ আসবে, তা দিয়ে আরও ভাল করে সাজিয়ে তুলবেন নিজের অতিথিশালা। তার পর, আস্তে আস্তে গুছিয়ে তুলবেন গ্রাম। গ্রামের নাম চুইখিম।
চুইখিম তখনও দার্জিলিং জেলায়। কালিম্পং তো জেলা হল এই সে দিন। চুইখিমের কথা তেমন ভাবে কেউ জানতেনই না। এখান থেকে না দেখা যায় কাঞ্চনজঙ্ঘা, না আছে কোনও পাহাড়ি নদী। কিন্তু প্রাকৃতিক দৃশ্যপট অনবদ্য। আলটপকা কিছু পর্যটক ছবির মতো এই গ্রাম ঘুরে চলে যেতেন। থাকতেন না। থাকতে চাইলেও থাকার জায়গা কোথায়? ছিল শুধু একটা-দুটো ছোটখাটো দোকান। তাতে বিস্কুট-মুড়ি-মোমো-চিপস-জলের বোতল! ক’টাকারই বা ব্যবসা হয়। বেশির ভাগ গ্রামবাসীই বাইরে থাকতেন। ছোটখাটো কাজ করতেন শিলিগুড়ি, কলকাতা, দিল্লি, বেঙ্গালুরু, মুম্বইয়ের মতো শহরে। ছেলেরা শুধু নয়, মেয়েরাও। কাজের খোঁজে চুইখিম ছেড়ে যাওয়াদের সংখ্যা বাড়ছিল ধীরে ধীরে। গ্রামে যাঁরা থেকে গেলেন পবিত্রার মতো, তাঁদের আর্থিক অবস্থা বলার মতো নয়। পবিত্রার মতো অনেকেরই দিন চলত নিজেদের জমিতে অল্পবিস্তর চাষাবাদ করে। মরসুমি সব্জিই একমাত্র ভরসা।
ছয় ভাইবোন। বাবা-মায়ের মৃত্যুর পর দাদারা সকলে আলাদা হয়ে গেলেন। একা হয়ে গেলেন তরুণী পবিত্রা। কিছু দিন শাকসব্জি ফলিয়ে সংসার চালালেন বটে, কিন্তু বুঝতে পারছিলেন, সকলের বেঁচে থাকাটা ঠিকঠাক না হলে, তাঁর একলা সংসারেরও ভাল হবে না। এ রকম একটা সময়ে বন দফতরের এক কর্তা পরামর্শ দিলেন, চুইখিমে থাকার জায়গা তৈরি হলে হয়তো পর্যটকদের কেউ কেউ এখানে এসে থাকতে পারেন। তাতে গ্রামের সকলের ভাল হতে পারে। পবিত্রা ছাড়া আর কেউই সেই পরামর্শ শুনতে রাজি হননি। তখন ত্রিশ ছুঁইছুঁই পবিত্রা ঠিক করে ফেললেন, নিজের বাড়িতেই পর্যটকদের রাখবেন। ঘুরতে আসা পর্যটকদের হোটেল নয়, বাড়িতে থাকার অনুভূতি দেবেন। ‘হোমস্টে’ তখনও খুব বেশি চালু শব্দবন্ধ হয়ে ওঠেনি।
এখান থেকে না দেখা যায় কাঞ্চনজঙ্ঘা, না আছে কোনও পাহাড়ি নদী। কিন্তু এই পাহাড়ি গ্রামের প্রাকৃতিক দৃশ্যপট অনবদ্য। নিজস্ব চিত্র।
পবিত্রা যে বাড়িতে থাকতেন, সেই ঘর পর্যটকদের না-ও পছন্দ হতে পারে! তাই মাটির দুটো ঘর বানানোর পরিকল্পনা করলেন তিনি। কথায় কথায় বললেন, ‘‘তখন আমার সঞ্চয় বলতে মাত্র ৫০০ টাকা। সেই টাকা নিয়ে কাজে নামলাম। এক দিনেই ফুরিয়ে গেল! তার পর সকলের কাছ থেকে চেয়েচিন্তে, দুটো ছাগল বিক্রি করে কোনও মতে দুটো মাটির ঘর খাড়া করলাম। কিন্তু তা সাজানোর কোনও ক্ষমতা ছিল না তখন আর। এক দিন বিকেলে চার পর্যটক এলেন গ্রামে। আমি তাঁদের অনুরোধ করলাম থাকতে। ওঁরা থেকেও গেলেন।’’ সেই শুরু।
ধীরে ধীরে পর্যটকেরা থাকতে শুরু করলেন চুইখিমে। পাহাড়ি পরিবারে আতিথেয়তা পাওয়ার আগ্রহটা পর্যটকদের মধ্যে দেখতে পেলেন পবিত্রা। গ্রামের মেয়েদের নিয়ে নিজের বাড়িতে বসতে শুরু করলেন। বোঝাতে লাগলেন, একসঙ্গে মিললে কী ভাবে চুইখিমকে নতুন ভাবে গড়ে তোলা যায়। কী ভাবে পবিত্রার মতো তাঁরাও আর্থিক স্বাধীনতা পেতে পারেন! কী ভাবে পাল্টে যেতে পারে গ্রাম!
একটা সময় পর্যন্ত এই প্রান্তিক গ্রামগুলোর রোজগারের মূল ‘ভরসা’ ছিল পাহাড়ের কয়লা, চুন-সহ বিভিন্ন খনিজ পদার্থের সঙ্গে কাঠ পাচার করা। বাগরাকোট, চুইখিম, ইয়ালবং আর শেরওয়ানি— চার গ্রামের লোকজন সাধারণত এই সব পাচারের কাজই করতেন। ‘অসামাজিক’ কাজ হত বলে বাইরের দুনিয়ার কাছে গ্রামগুলি কিছুটা ব্রাত্যই ছিল। তার পর সরকার আর প্রশাসনের তরফ থেকে কড়াকড়ি শুরু হল। অসহায় হয়ে পড়ল চুইখিম, ইয়ালবঙের মতো গ্রাম। এ সবই জানতেন নেপালি মেয়ে পবিত্রা। তাই গ্রামের আর্থিক এবং সামাজিক অবস্থা বদলের জন্য পরিকল্পনা করতে শুরু করেন। নিজের ‘হোমস্টে’কে আরও কিছুটা উন্নত করলেন। নিজের রোজগারের টাকা থেকে অন্যদেরও সাহায্য করতে থাকলেন।
প্রায় দু’দশকের চেষ্টায়, পবিত্রার অনুপ্রেরণা এবং উৎসাহে গ্রামে এখন ১৩টি ‘হোমস্টে’। বাইরে যাঁরা কাজ করতেন, তাঁদের একটা অংশ ফিরে এসেছেন। মরসুমে প্রতিটা ‘হোমস্টে’তেই পর্যটক ভর্তি থাকে। পবিত্রা বলছিলেন, ‘‘আমি যখন শুরু করি, তখন গ্রামেরই কিছু মানুষ এটা ভাল ভাবে নেয়নি। কটূক্তি, বদনাম শুনতে হয়েছে। এমনও শুনেছি, একা মেয়ে হয়ে কেন বাড়িতে বাইরের লোককে রাতে থাকতে দিচ্ছি! জেদ করেছিলাম, করে দেখাবই। সেই জেদই হয়তো কিছুটা সাফল্য এনে দিয়েছে। যাঁরা আমাকে নিয়ে কটূক্তি করতেন, তাঁরাও আজ আমার দেখানো পথে পেট চালাচ্ছেন। সবচেয়ে ভাল লাগে, এখন কেউ আর গ্রাম ছেড়ে বাইরে যায় না।’’
নিজের তৈরি অতিথিশালা (হোমস্টে)-র সামনে পবিত্রা। নিজস্ব চিত্র।
‘অ্যাসোসিয়েশন ফর কনজ়ার্ভেশন অ্যান্ড ট্যুরিজ়ম’-এর আহ্বায়ক রাজ বসুও চুইখিমের এই পরিবর্তনের জন্য পবিত্রার ভূমিকাকেই কৃতিত্ব দিচ্ছেন। তাঁর কথায়, ‘‘বন দফতরের এক রেঞ্জার সেই সময়ে চুইখিমে পর্যটকদের জন্য থাকা-খাওয়ার ব্যবস্থা করার পরামর্শ দিয়েছিলেন। কিন্তু গ্রামবাসীদের কেউই রাজি হননি একমাত্র পবিত্রা ছাড়া। উনি এগিয়ে এসে নিজের বাড়িতে পর্যটকদের থাকার ব্যবস্থা করার কথা বললেন। করলেনও। চুইখিমের পাল্টে যাওয়ার সেই শুরু। পবিত্রার হাত ধরেই। সেটা ২০০৫ সাল হবে।’’
চুইখিম এখন ‘ভলিন ট্যুরিজ়ম’-এর অন্যতম কেন্দ্র। ভলিন ট্যুরিজ়ম কী? রাজ জানাচ্ছেন, এই ভাবনাটা নতুন। বিভিন্ন জায়গা থেকে পর্যটকেরা এসে কোনও একটি বিশেষ অঞ্চলের আর্থিক, সামাজিক এবং প্রাকৃতিক উন্নয়ন ও সংরক্ষণে কাজ করবেন। এবং সেই জায়গাটি সব অর্থেই স্বাবলম্বী হয়ে উঠবে সামগ্রিক ভাবে, সেটাই ভলিন ট্যুরিজ়ম।শুধু চুইখিম নয়, তার সঙ্গে আরও তিনটি গ্রাম— বাগরাকোট, ইয়ালবং এবং শেরওয়ানি এই ট্যুরিজ়মের অংশ বলেই রাজ জানালেন। এই গ্রামগুলিতে এখন সিঙ্গাপুর, জার্মানি এবং অস্ট্রেলিয়া-সহ বিভিন্ন দেশ থেকেও পর্যটকেরা আসেন। থাকেন। কাজ করেন এলাকার উন্নয়ন নিয়ে।
শুধু অর্থনীতি নয়, পবিত্রার হাত ধরে চুইখিমে সামাজিক বদলও হয়েছে। যে গ্রামে প্রাথমিক স্কুল ছাড়া শিক্ষার আর কোনও ব্যবস্থা ছিল না, সেখানেই এখন তৈরি হয়েছে উচ্চ বিদ্যালয়। তিনি নিজে পঞ্চম শ্রেণির পর আর স্কুলে যেতে পারেননি। যাবেন কী করে! গ্রামে তো প্রাইমারি ছাড়া আর কোনও স্কুল ছিলই না। চতুর্থ শ্রেণির পর কিছু দিন ঘণ্টা দুয়েকের পাহাড়ি হাঁটাপথ পেরিয়ে বরবটের স্কুলে গিয়েছিলেন। কিন্তু টানতে পারেনি নাবালিকা পবিত্রা। ওখানেই ইতি। পবিত্রার ভাবনায় স্কুলও ছিল। তাঁর আতিথেয়তায় মুগ্ধ হয়েছিলেন অনেক পর্যটকই। তাঁদেরই কারও কারও কাছে পবিত্রা বলেছিলেন, গ্রামে একটা স্কুল বড্ড দরকার। তাঁর আগ্রহেই এগিয়ে এসেছিলেন যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাক্তন শিক্ষক দেবাশিস ভট্টাচার্য। তিনি তাঁর পরিচিত কয়েক জনের সহায়তা নিয়ে পবিত্রাদের পাশে দাঁড়ান। ছিলেন আরও কয়েক জন পর্যটক। গ্রামেরও অনেকে সাহায্য করেন। জমি দিলেন এক জন। সঙ্গে ছোট একটা ঘরও। শুরু হল স্কুল। প্রথমে পঞ্চম থেকে অষ্টম শ্রেণি। তার পর সেটাই এখন দশম শ্রেণিতে উন্নীত। গোটা প্রক্রিয়ায় রাজও ছিলেন। তাঁর কথায়, ‘‘এটাই তো ভলিন ট্যুরিজ়ম। পর্যটকেরাই এগিয়ে আসবেন। তবে পবিত্রা যে ভাবে স্থানীয় অর্থনীতি থেকে চুইখিমের মতো একটা প্রান্তিক গ্রামে সামাজিক পালাবদল ঘটিয়েছেন, তা কুর্নিশ করার মতো।’’
একটা সময় দেবাশিস ওই স্কুলের টানেই নিয়মিত চুইখিম যেতেন। কোনও মাসে দু-তিন বারও। কলকাতার বাসিন্দা দেবাশিস বলছেন, ‘‘একটি মেয়ে একক উদ্যোগে যে ভাবে সেই সময় চুইখিমকে এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার ভাবনা ভেবেছিল, তা অভাবনীয়। অখ্যাত গ্রাম চুইখিম এখন যে পরিচিতি পেয়েছে, তা পবিত্রার জন্যই। আমি তো আগে মাসে দু-তিন বার যেতাম। প্রথম যখন গিয়েছি, পবিত্রার বাড়ি ছাড়া গোটা গ্রামে আর কোথাও থাকার ব্যবস্থা ছিল না। হোটেল তো অনেক দূরের ব্যাপার। সেই চুইখিম এখন কত পাল্টে গিয়েছে। অন্তত ১৩টা হোম স্টে এখন সেখানে।’’ একটা অসরকারি সংস্থা ওই স্কুলের দায়িত্ব নিয়েছিল। কিন্তু কিছু দিনের মধ্যেই তারা ছেড়ে চলে যায়। দেবাশিসের কথায়, ‘‘শিক্ষকদের বেতন দিতেই অনেক টাকা লাগে। তার উপরে স্কুলের দেখভাল। সব মিলিয়ে খরচের অঙ্কটা ভালই। ওই সংস্থা দিচ্ছিল। কিন্তু কোথাও একটা তাল কেটেছিল। তাই ওরা চলে যায়। এখন গ্রামবাসীদের চাঁদা, পড়ুয়াদের মাইনে আর শুভাকাঙ্ক্ষীরা যে অর্থসাহায্য করেন তাতেই চলে স্কুল। আমরাও দিই।’’
রাত নামলেই রূপ বদলায় অপরূপ চুইখিম। নিজস্ব চিত্র।
স্কুলে এখন জনা পঁচাত্তর পড়ুয়া। বাগরাকোটের একটি সরকারি স্কুলের সহায়তায় এখানকার পড়ুয়ারা পরীক্ষা দেয়। গ্রামের সব ছাত্রছাত্রীই এখন এই স্কুলে পড়ে। কেউ আর পাহাড় ঠেঙিয়ে বরবট বা সমতলের বাগরাকোটে যায় না। এটাও তো চেয়েছিলেন পবিত্রা। ওই স্কুলের ষষ্ঠ শ্রেণির ছাত্রী দেবিকা ছেত্রীকে যখন জিজ্ঞেস করা হয়, বড় হয়ে সে কী হতে চায়, মুহূর্তেই জবাব আসে, ‘‘নার্স হব।’’
দেবিকার মতো আরও কয়েক জন নার্স হতে চায়। কেউ বা ডাক্তার। কেউ বা শিক্ষক। এই চাওয়াও তো পবিত্রারই। আগামী প্রজন্মের মনে এই ভাবনাটা চারিয়ে দেওয়াই তাঁর চ্যালেঞ্জ। যাতে ঠিকঠাক একটা পেশায় সকলে নিজেকে জুতে নিতে পারে। তাঁর কথায়, ‘‘আমি তো ক্লাস ফাইভেই সব ছেড়ে দিতে বাধ্য হয়েছিলাম। বড়দের অনেককে দেখতাম, হেঁটে হেঁটে সেই বরবট, না হয় বাগরাকোটের স্কুলে যেত। বেশির ভাগই তো পড়াশোনা ছেড়ে দিয়েছিল আমার মতো। এখনকার বাচ্চাদের আর সেটা করতে হয় না। এর থেকে শান্তির আর কী-ই বা হতে পারে।’’ সম্প্রতি স্কুলের নিজস্ব এক তলা বাড়ি হয়েছে। পবিত্রা বললেন, ‘‘ন্যাশনাল হাইওয়ে অথরিটি রাস্তা বানাচ্ছে ওদলাবড়ি থেকে নাথুলা পর্যন্ত। আমাদের গ্রামের পাশ দিয়েই গিয়েছে সেই রাস্তা। যে ঠিকাদার সংস্থা ওই রাস্তার কাজ করছে, তাদের কাছে অনুরোধ করেছিলাম। ওরা আমাদের স্কুলবাড়ি বানিয়ে দিয়েছে।’’
পবিত্রার মতে, অনেকটা এগোনো গিয়েছে। গ্রামের সকলকে নিয়ে বাকি পথটাও এগোতে চান তিনি। যেমন এখনও চুইখিমে স্বাস্থ্য পরিষেবা বলতে প্রায় কিছুই নেই। নেই কোনও প্রাথমিক স্বাস্থ্যকেন্দ্র। নেই কোনও চিকিৎসকও। পবিত্রা মাঝেমাঝে পর্যটক ও পরিচিতদের সাহায্য নিয়ে গ্রামে স্বাস্থ্যশিবিরের আয়োজন করেন। বছরে বেশ কয়েক বার হয় ওই শিবির। কিন্তু একটা পাকাপাকি বিহিত চান তিনি। সরকারের কাছে দরবারও করেছেন একাধিক বার।
এ ভাবেই ধাপে ধাপে এগোচ্ছেন পবিত্রা। এগোচ্ছে চুইখিম। এক দিন একা একা লড়াই শুরু করেছিলেন। তার পর ‘আমি’ থেকে গোটা গ্রামকে সঙ্গে নিয়ে ‘আমরা’য় উত্তরণ। এই ‘বড় আমরা’র দায়িত্বের চাপেই কি কখনও ‘ছোট আমরা’ নিয়ে ভেবে ওঠার সুযোগ হয়নি? প্রৌঢ়ত্ব ছুঁইছুঁই পবিত্রা প্রশ্ন শুনে খুব সহজ হাসি হাসলেন। জানালেন, বিয়ের সুতোয় বাঁধা পড়েছিলেন এক বার। কিন্তু তা টেকেনি। ছোট সংসারে আর আগ্রহ নেই। গোটা চুইখিম নিয়েই যে তাঁর অ-সাধারণ পরিবার! সেই পরিবারে থেকেই অদ্বিতীয় এক একলা মেয়ের এক অ-সাধারণ যাত্রা।