সমর্থনের আশায় কমিটি বণ্টনে দরাজ বিজেপি

এক দিকে বিরোধীদের মধ্যে বিভাজন। অন্য দিকে রাজ্যসভায় আঞ্চলিক দলগুলির সমর্থন প্রত্যাশা। এই দুই লক্ষ্য নিয়ে সংসদীয় কমিটি বণ্টনে উদার মনোভাব দেখানোর হওয়ার রণকৌশল নিল বিজেপি নেতৃত্ব। এবং সেই কৌশলের অঙ্গ হিসেবে লোকসভায় তৃতীয় ও চতুর্থ বৃহত্তম দল এডিএমকে ও তৃণমূলকে যথাক্রমে ডেপুটি স্পিকার ও পাবলিক অ্যাকাউন্টস কমিটির (পিএসি) চেয়ারম্যানের পদটি তৃণমূলকে দেওয়ার কথা ভাবছে বিজেপি শীর্ষ নেতৃত্ব।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

নয়াদিল্লি শেষ আপডেট: ০৮ জুন ২০১৪ ০৩:১৬
Share:

এক দিকে বিরোধীদের মধ্যে বিভাজন। অন্য দিকে রাজ্যসভায় আঞ্চলিক দলগুলির সমর্থন প্রত্যাশা। এই দুই লক্ষ্য নিয়ে সংসদীয় কমিটি বণ্টনে উদার মনোভাব দেখানোর হওয়ার রণকৌশল নিল বিজেপি নেতৃত্ব। এবং সেই কৌশলের অঙ্গ হিসেবে লোকসভায় তৃতীয় ও চতুর্থ বৃহত্তম দল এডিএমকে ও তৃণমূলকে যথাক্রমে ডেপুটি স্পিকার ও পাবলিক অ্যাকাউন্টস কমিটির (পিএসি) চেয়ারম্যানের পদটি তৃণমূলকে দেওয়ার কথা ভাবছে বিজেপি শীর্ষ নেতৃত্ব। তৃণমূলেরও তাতে আপত্তি নেই বলে দলীয় সূত্রের খবর।

Advertisement

একই ভাবে অর্থ সংক্রান্ত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির শীর্ষ পদটি দেওয়ার কথা ভাবা হয়েছে নবীন পট্টনায়কের দল বিজেডিকে।

প্রশ্ন হচ্ছে, কেন আঞ্চলিক দলগুলির প্রতি এতটা দরাজহস্ত হচ্ছে বিজেপি? শাসক শিবির বলছে, এর পিছনে রয়েছে মূলত দু’টি কারণ।

Advertisement

এক, সংসদে বিরোধী অক্ষ তৈরি করতে না দেওয়া। লোকসভায় এনডিএর যা সার্বিক শক্তি তাতে বিরোধী দলগুলির কাছ থেকে খুব জোরদার বিরোধিতার আশঙ্কা তারা করছে না। তবু ঝুঁকি নিতে চাইছে না বিজেপি। কারণ তাদের আশঙ্কা, যত দিন গড়াবে, বিভিন্ন প্রসঙ্গে আঞ্চলিক দলগুলির সঙ্গে হাত মিলিয়ে সংসদে এনডিএ-বিরোধিতার পথে হাঁটবে কংগ্রেস। সে ক্ষেত্রে তারা বেশি জোর দেবে রাজ্যসভার উপরেই। এই অবস্থায় কংগ্রেসের সঙ্গে আঞ্চলিক দলগুলির যে কোনও ধাঁচের জোট-সম্ভাবনা শুরুতেই থামিয়ে দেওয়ার কৌশল নিয়েছেন বিজেপি নেতৃত্ব। শুরুতেই পাইয়ে দেওয়ার নীতি নিয়ে আঞ্চলিক দলগুলি ও কংগ্রেসের মধ্যে দূরত্ব তৈরি করতে চাইছেন তাঁরা।

দুই, লোকসভায় বিপুল শক্তি নিয়ে ক্ষমতায় এলেও রাজ্যসভায় গরিষ্ঠতা নেই বিজেপির। কংগ্রেসের সঙ্গে অন্য আঞ্চলিক দলগুলি এককাট্টা হলে বিল পাশ করাতে সমস্যা হতে পারে। লোকসভায় পাশ হওয়া বিল রাজ্যসভায় আটকে যেতে পারে। আঞ্চলিক দলগুলির সমর্থন পাওয়াটা তাই বিজেপির পক্ষে খুবই জরুরি। প্রথম থেকেই আঞ্চলিক দলগুলির সুসম্পর্ক রেখে চলতে চাইছে তারা। গোড়া থেকেই কংগ্রেসকে একঘরে করে দিতে সংসদীয় কমিটির শীর্ষ পদগুলি আঞ্চলিক দলগুলিকে দেওয়ার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।

বিজেপির সুমিত্রা মহাজন কাল সর্বসম্মতিতে লোকসভার স্পিকার নির্বাচিত হয়েছেন। কিন্তু ডেপুটি স্পিকারের পদটি প্রধান বিরোধী দলকে দেওয়ার সৌজন্য দেখানো বা রীতি মানার দায় নেই বিজেপির। কারণ প্রধান বিরোধী দলের স্বীকৃতি পেতে অন্তত ১০ শতাংশ আসনে জেতাটা জরুরি। বিজেপি বাদে কোনও কোনও দলই তা পারেনি এ বার। ফলে প্রধান বিরোধী দল বলে সরকারি ভাবে কেউ নেই। লোকসভায় ৪৪ সাংসদের দল কংগ্রেস দ্বিতীয় বৃহত্তম। সংসদীয় সচিবালয়ে সূত্রে বলা হয়েছে, তাদের প্রধান বিরোধী দলের মর্যাদা দেওয়ার বিষয়টি স্পিকারের উপর নির্ভর করছে। বিজেপিও কংগ্রেসকেই প্রধান বিরোধী দলের মর্যাদা দেওয়ার পক্ষে। তবে ডেপুটি স্পিকার, পিএসি ও অর্থ বিষয়ক সংসদীয় স্থায়ী কমিটির চেয়ারম্যানের পদ কংগ্রেসকে দিতে রাজি নয় তারা।

প্রধান বিরোধী দল হিসেবে গত লোকসভায় ৩টি কমিটির শীর্ষেই ছিলেন বিজেপির সাংসদরা। কিন্তু এখনকার শাসক দল হিসেবে তাদের যুক্তি, কংগ্রেসকে প্রধান বিরোধী দলের মর্যাদা দেওয়ার কথা ভাবা হলেও নিয়মানুযায়ী তারা প্রধান বিরোধী দল নয়। তাই অন্যান্য দলের সাংসদদের বিভিন্ন সংসদীয় কমিটির শীর্ষ পদ দেওয়ার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।

তবে বিজেপি চাইলেও পাবলিক অ্যাকাউন্টস কমিটির চেয়ারম্যান পদটি তৃণমূল নিতে রাজি হবে কি না তা নিয়ে সংশয়ও রয়েছে শাসক শিবিরে। তৃণমূল সূত্রে আজ বলা হয়েছে, পিএসি একটি সংসদীয় কমিটি। তার চেয়ারম্যানের পদটি নিতে দলের কোনও আপত্তি নেই। দুই কক্ষ মিলিয়ে সাংসদের সার্বিক সংখ্যার নিরিখে আরও দু’-তিনটি সংসদীয় কমিটির শীর্ষ পদও তাদের হাতে আসবে বলে আশা করছেন তৃণমূল নেতৃত্ব। একই ভাবে ডেপুটি স্পিকারের পদটি জয়ললিতার দলকে দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে বিজেপি। এডিএমকে রাজি হলে থাম্বিদুরাইয়ের মতো কোনও বর্ষীয়ান নেতাকে ওই পদে বসাতে আপত্তি নেই বিজেপির।

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement