কে বেশি ফাঁকিবাজ? ইনি না উনি?
আজ এই অভূতপূর্ব চাপানউতোরের সাক্ষী রইল সংসদ। শীতকালীন অধিবেশনে দু’দিন ধরেই রাজ্যসভায় তৃণমূল-সহ বিরোধীরা সরব রয়েছেন প্রধানমন্ত্রীর অনুপস্থিতি নিয়ে। প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর বিরুদ্ধে একযোগে আক্রমণ শানিয়েছেন সিপিএম, কংগ্রেস, তৃণমূলের নেতারা। সিপিএম সাংসদ সীতারাম ইয়েচুরির কটাক্ষ, “কালো টাকা বিদেশ থেকে ফেরানোর বিষয়টি ভুলে যান, আগে প্রধানমন্ত্রীকে বিদেশ থেকে ফিরিয়ে আনুন।” আর তৃণমূলের রাজ্যসভা সাংসদ ডেরেক ও’ব্রায়েনের মন্তব্য, “প্রধানমন্ত্রীকে রাজ্যসভায় আসার জন্য ভিসা মঞ্জুর করা হোক।” সংসদে প্রধানমন্ত্রী কেন নেই, তা নিয়ে একটানা সরব ছিলেন বিরোধীরা।
ঐক্যবদ্ধ এই আক্রমণের জবাব দিতে আজ আসরে নামলেন সংসদীয় মন্ত্রী বেঙ্কাইয়া নায়ডু। আর এ জন্য বেছে নিলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের উদাহরণ। পাল্টা প্রশ্নে বেঙ্কাইয়া জানতে চান, “কোথায় অনুপস্থিতি? মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় কি সকাল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত বিধানসভায় বসে থাকেন? কেউ কেউ বলছেন, তিনি (প্রধানমন্ত্রী) সব সময় বিদেশে থাকেন। কখন ফিরবেন বলে প্রশ্ন করা হচ্ছে। এটা কি মস্করা হচ্ছে!”
নায়ডু এই যুক্তি দিলেও কংগ্রেসের পাল্টা অভিযোগ, প্রধানমন্ত্রী সংসদীয় প্রথা মানছেন না। যখন সংসদ চলছে তখন তিনি বিদেশ সফরে ব্যস্ত। এমনকী সংসদ ভবনে উপস্থিত থাকলেও উভয় কক্ষে আসছেন না। মন্ত্রিসভার নতুন সদস্যদেরও তিনি পরিচয় পর্যন্ত করাননি। অথচ এটাই সংসদীয় রীতি। বিজেপির পাল্টা যুক্তি, প্রধানমন্ত্রী আসিয়ান ও জি-২০-র মতো গুরুত্বপূর্ণ বৈঠকে যোগ দিতেই বিদেশ গিয়েছিলেন। কোনও প্রমোদ সফরে যাননি। তবে শাসক দলের যুক্তি খারিজ করে কংগ্রেস নেতা আনন্দ শর্মার বক্তব্য, “তা হলে বৈঠকের দিনগুলি এড়িয়ে সংসদ অধিবেশন ডাকা উচিত ছিল সরকারের।”
বিরোধী দলগুলির যৌথ আক্রমণের জবাব দিতে মোদী সরকারের পক্ষে যে ভাবে তৃণমূল নেত্রীকে আক্রমণ করা হয়েছে, খোদ মুখ্যমন্ত্রী তার জন্য দায়ী বলেই মনে করছেন অনেকে। বিরোধী নেতারা বলছেন, তিন বছরে বিধানসভার অধিবেশন চলাকালীন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় অধিকাংশ সময়েই অনুপস্থিত ছিলেন। দফতরের প্রশ্ন থাকলেও উত্তর দিতে পাওয়া যায় না তাঁকে। আর ইতিহাস ঘাঁটলে দেখা যাবে মমতার এই ব্যামো নতুন নয়। কেন্দ্রীয় মন্ত্রী হিসেবেও অধিকাংশ সময়েই দিল্লিতে মন্ত্রকের কাজে অনুপস্থিত থাকতেন তিনি।
বিশেষ করে ইউপিএ জমানায় রেলমন্ত্রী হিসেবে মন্ত্রকে তাঁর অনুপস্থিতি নিয়ে প্রশ্ন ওঠে একাধিক বার। অভিযোগ ছিল, তিনি দিল্লিতে কম, বেশি থাকেন পশ্চিমবঙ্গে। কারণ তখন তাঁর লক্ষ্য ক্ষমতা থেকে বামেদের সরানো। বিজেপির মুখপাত্র সম্বিত পাত্র বলেন, “সে সময় ব্যক্তিগত রাজনৈতিক স্বার্থে দিনের পর দিন দিল্লির পরিবর্তে কলকাতায় পড়ে থাকতেন রেলমন্ত্রী মমতা। এমনকী গুরুত্বপূর্ণ ফাইল সই করানোর জন্য সপ্তাহান্তে কলকাতা উড়িয়ে নিয়ে যাওয়া হতো বলেও শুনেছি।” যদিও এ বিষয়ে মমতার যুক্তি ছিল, রেল মন্ত্রক চালাতে মন্ত্রীকে দিল্লিতেই থাকতে হবে, এমন কোনও বাধ্যবাধকতা নেই। কারণ, মন্ত্রী নীতি তৈরি করেন। রেল চালান না। তা ছাড়া কলকাতায় রেলের দু’টি জোনের সদর দফতর রয়েছে। সেখান থেকেও মন্ত্রক সামলানো যায়।
সে যাই হোক, সংসদে টানাপড়েনের ভিতরে রাজ্য বিধানসভার স্পিকার বিমান বন্দ্যোপাধ্যায় বুধবার জানান, বিধানসভায় মুখ্যমন্ত্রীর হাজিরা নিয়ে আলাদা কোনও রেকর্ড রাখা হয় না। তবে তাঁর কথায়, বিধানসভার প্রতিটি অধিবেশনেই মুখ্যমন্ত্রী একাধিক দিন হাজির থাকেন। সরকার পক্ষের মুখ্য সচেতক শোভনদেব চট্টোপাধ্যায়ও দাবি করেছেন, প্রতিটি অধিবেশনেই মুখ্যমন্ত্রী বেশ কয়েক দিন উপস্থিত থাকেন। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক কংগ্রেসের এক বিধায়কের মন্তব্য, “মুখ্যমন্ত্রী বিধানসভায় খুব কম দিন থাকেন। এই নিয়ে বিধায়করা সভায় একাধিক বার উষ্মা প্রকাশ করেছেন।”