ভোটের ঠিক এক দিন আগে মেরুকরণের রাজনীতি নিয়ে সরগরম হল রাজধানী। ‘সাম্প্রদায়িক শক্তি’কে ঠেকাতে আম আদমি পার্টিকে ভোট দেওয়ার জন্য সংখ্যালঘুদের আহ্বান জানালেন দিল্লির জামা মসজিদের শাহি ইমাম সৈয়দ আহমেদ বুখারি। ‘সাহায্যের’ সেই হাত পত্রপাঠ প্রত্যাখান করেছেন আপ নেতৃত্ব। তবে শাহি ইমামের এই মন্তব্যকে অস্ত্র করে আপ-কে বিপাকে ফেলতে তৎপর হয়েছে বিজেপি। বুখারির মতে, দিল্লিতে ‘সৎ ও ধর্মনিরপেক্ষ’ সরকার গঠনের জন্য আপ-কে সমর্থন করা দরকার। তিনি বলেন, “দেশের সামনে ঘোর বিপদ হয়ে দাঁড়িয়েছে সাম্প্রদায়িকতা। সংখ্যালঘুদের নিশানা করছে সাম্প্রদায়িক শক্তি।” সমাজে যারা বিভাজন সৃষ্টি করতে চাইছে, বিজেপি তাদের সমর্থন করছে বলেও অভিযোগ করেন তিনি।
বুখারির মন্তব্যের পরেই আসরে নেমে পড়ে বিজেপি। অরুণ জেটলি বলেন, “এই ধরনের ফতোয়ার মোক্ষম জবাব হল ব্যালট।” অতীতে ভোটের আগে কংগ্রেস নেতৃত্বের সঙ্গে শাহি ইমামের বৈঠক হতে দেখা গিয়েছে। কিন্তু রাজধানীর এ বারের ভোটের প্রচারের সময়ে কোনও দলই তেমন মেরুকরণের রাজনীতি করেনি। এই অবস্থায় হঠাৎ করে শাহি ইমামের এই আবেদন ও তার পর বিজেপির তৎপরতা দেখে প্রমাদ গোনেন আপ নেতারা। তাঁরা আশঙ্কা করেন, হাওয়া এ বার মেরুকরণের দিকে যেতে পারে। সে ক্ষেত্রে হিন্দুদের মধ্যেও অরবিন্দ কেজরীবালের যে গ্রহণযোগ্যতা তৈরি হয়েছে, তাতেও ভাটা পড়তে পারে। তড়িঘড়ি আপ নেতারা সাংবাদিক সম্মেলন করে বলেন, “বিজেপির সঙ্গে যোগসাজশ করে শাহি ইমাম এমন মন্তব্য করেছেন। আমরা তাঁর আবেদন প্রত্যাখ্যান করছি।” আপ নেতা সঞ্জয় সিংহ জানান, বুখারির আদর্শ সমর্থন করে না তাঁদের দল।
বিজেপি অবশ্য চাইছে ভোটের আগের মুহূর্ত পর্যন্ত বিষয়টিকে জিইয়ে রাখতে। সেই লক্ষ্যে মোদী সরকারের মন্ত্রী নির্মলা সীতারমনকে দিয়ে আজ সাংবাদিক বৈঠক করানো হয়। তিনি বলেন, “কেজরীবাল বরাবর এই কৌশল নিয়ে চলেন। কংগ্রেসের সমর্থন নেব না বলেও পরে নিয়েছেন। বলেছেন, কংগ্রেস সমর্থন করলে কী করব? কালো টাকা সাদা করে ধরা পড়েও বলেছেন, কেউ টাকা দিলে দলের কী করার আছে? এ বার ফতোয়া দেওয়ার জন্য নিজেরাই অনুরোধ করে এখন পিছু হটছেন। বলছেন, শাহি ইমাম নিজে সমর্থন দিলে তাঁদের কী করণীয়? অথচ বাস্তব ঘটনা হল, কোনও দলের অনুরোধ ছাড়া শাহি ইমাম আবেদন করেন না।” বস্তুত, শাহি ইমামের ভাই তারিক বুখারিও আজ দাবি করেন, আপ-এর সঙ্গে আলোচনা করেই সংখ্যালঘুদের উদ্দেশে ওই আহ্বান জানানো হয়েছে। ফলে নেপথ্যের কাহিনি ঘিরে ধোঁয়াশা থাকছে।
কংগ্রেস নেতা অজয় মাকেন দু’পক্ষকেই বিঁধেছেন। তাঁর কথায়, “বিজেপি নিচ্ছে ডেরা সাচা সৌদার সমর্থন, আর আপ নিচ্ছে শাহি ইমামের। একে তো এটা ধর্মের ভিত্তিতে ভোট টানার চেষ্টা। উপরন্তু এখন প্রচারের সময় পার হয়ে আদর্শ আচরণবিধি জারি হয়েছে। আমরা এর তীব্র নিন্দা করছি।”