শুধু বাম নয় সঙ্কট তৃণমূলেও

একদা ফরওয়ার্ড ব্লক বিধায়ক মণিরুল ইসলাম আজ তৃণমূলের ‘সম্পদ’ বীরভূমের জেলা সভাপতি অণুব্রত মণ্ডলের ডান হাত। তৃণমূলের ছত্রচ্ছায়ায় থাকার কারণে বিরোধীদের ঘরবাড়ি জ্বালিয়ে দেওয়া, পুলিশকে বোমা মারার নির্দেশ দিলেও পুলিশ অণুব্রত-র টিকি ছুঁতে পারেনি। তাঁর বিরুদ্ধে খুনের উস্কানির অভিযোগ! তবু পার পেয়ে যাচ্ছেন! একই ভাবে সিপিআই কর্মী তিন ভাইকে পিটিয়ে মারার মূল অভিযুক্ত হলেও পুলিশ মণিরুল ইসলামের বিরুদ্ধে কোনও পদক্ষেপ নিতে পারেনি। শুধু বীরভূম নয়, মণিরুলরা রাজ্যের ২০টি জেলাতেই তৃণমূলের ছাতার তলায় রয়েছে। লাল থেকে সবুজে নৌকা ভেড়ানোর সংখ্যা মোটেই কম নয়। তৃণমূলে তো এখন গ্রিন টিএমসি বনাম রেড টিএমসি-র লড়াই। রাজ্য-রাজনীতি খতিয়ে দেখলেন শর্মিষ্ঠা দত্ত ভট্টাচার্য।’৯০-এর দশকের মাঝামাঝি সময় থেকে সিপিএমের পার্টি মিটিং-এ জ্যোতি বসু প্রায়ই বলতেন, দলে আর ‘পলিটিক্যাল ক্লাস’ নেওয়া হয় না। প্রবীণ নেতার প্রশ্ন ছিল, ‘পলিটিক্যাল ক্লাস’ না হলে ক্যাডাররা শিখবে কি? এর পর ২০০০ সালের গোড়ায় অনিল বিশ্বাস ঢাক ঢোল পিটিয়ে ‘পলিটিক্যাল ক্লাস’ চালু করেন। সিপিআইএম-এর কলকাতা জেলার পুরনো অফিসে খোলা হয় পার্টি স্কুল। দু’একদিন ক্লাসও হয়েছিল। ব্যাস, ওই পর্যন্ত।

Advertisement
শেষ আপডেট: ০৬ জুলাই ২০১৪ ০০:০০
Share:

’৯০-এর দশকের মাঝামাঝি সময় থেকে সিপিএমের পার্টি মিটিং-এ জ্যোতি বসু প্রায়ই বলতেন, দলে আর ‘পলিটিক্যাল ক্লাস’ নেওয়া হয় না। প্রবীণ নেতার প্রশ্ন ছিল, ‘পলিটিক্যাল ক্লাস’ না হলে ক্যাডাররা শিখবে কি? এর পর ২০০০ সালের গোড়ায় অনিল বিশ্বাস ঢাক ঢোল পিটিয়ে ‘পলিটিক্যাল ক্লাস’ চালু করেন। সিপিআইএম-এর কলকাতা জেলার পুরনো অফিসে খোলা হয় পার্টি স্কুল। দু’একদিন ক্লাসও হয়েছিল। ব্যাস, ওই পর্যন্ত।

Advertisement

রাজনীতির পাঠ বা চর্চা আর বেশি দূর এগোয়নি। দলের নেতা-ক্যাডাররা ক্ষমতা দেখাতে আর ভোটে জিতে সারা বছর এত ব্যস্ত যে তাদের পলিটিক্যাল ক্লাসে যাওয়া বা নেওয়ার সময় কোথায়? তার ফল যা হওয়ার তাই হয়েছে। সংকটে পড়তেই নেতা-কর্মীরা বামপন্থা ছেড়ে অন্য পন্থায় আশ্রয় নিতে শুরু করেছেন। সিপিআইএম এবং এবং বামফ্রন্টের অন্য শরিক দলগুলির অস্তিত্ব নিয়েই প্রশ্ন দেখা দিয়েছে।

এই অবস্থাতেও এই লোকসভা নির্বাচনে ২৯ শতাংশ ভোট তারা পেয়েছে। বড় শরিক সিপিআইএম-এর ভোট স্বাভাবিক ভাবেই বেশি। তবে এই ভোট আগামী পুরসভা নির্বাচনগুলিতে তারা কতটা ধরে রাখতে পারবে তা নিয়ে সন্দেহ আছে। বিশেষ করে লোকসভা নির্বাচনের পরে যে ভাবে সিপিআইএম-এর নিচু তলার কর্মী ও মাঝারি স্তরের নেতারা পদ্মবনে ভিড় জমাচ্ছেন তাতে দলের অবস্থা আরও সঙ্গিন হচ্ছে। ২০১১ সালে রাজ্যে পট পরিবর্তনের আগে তৃণমূল নেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বলতেন, বদলা নয়, বদল চাই। কিন্তু, এই শ্লোগান বাস্তবায়িত হয়নি।

Advertisement

দলের মধ্যে যারা সরাসরি শক্তির আরাধনা করত, তাদের বড় অংশই আজ তৃণমূলে। পাশাপাশি ক্ষমতা ব্যবহার করে যারা প্রোমোটারি অথবা ভেড়ির ব্যবসায় দু’পয়সা আয় করেছিল, তারাও আজ লাল পার্টি ছেড়ে সবুজে। এই অবস্থায় বদলার মুখে যারা পড়ে আছেন তাদের পাশে কেউই নেই। কারণ দলের দিক্ভ্রান্ত নেতারা এখন ঘুরে দাঁড়ানোর তত্ত্ব খুঁজতে ব্যস্ত। আক্রান্ত কর্মীদের পাশে দাঁড়ানোর সময় নেই। দু’একবার বিমান বসু, সূর্যকান্ত মিশ্ররা যে যাননি তা নয়, তাতে ফল হয়েছে উল্টো। আক্রান্তদের সঙ্গে দেখা করে এসে তাঁরা নাটুকে সংলাপ আউড়েছেন। তাতে নতুন করে আক্রমণের মুখে পড়েছেন আক্রান্তরা। এই অংশটাই মূলত বিজেপি-তে চলে যাচ্ছেন।

এই ভাবেই কলেবরে বেড়েছে তৃণমূল কংগ্রেস। বীরভূমের দিকে তাকালেই বিষয়টা স্পষ্ট হয়ে যাবে। স্বাধীনতার পর থেকে ধীরে ধীরে বীরভূম বামপন্থীদের শক্ত ঘাঁটি হয়ে উঠেছিল। বামফ্রন্ট ক্ষমতায় আসার পরে বীরভূমে সিপিআইএম-এর পাশাপাশি আরএসপি ও ফরওয়ার্ড ব্লকেরও শক্ত জমি ছিল। সময়ের সঙ্গে সঙ্গে জমি কেনাবেচা, বেআইনি অস্ত্রের ব্যবসা-সহ বিভিন্ন অন্ধকার ব্যবসার সঙ্গে জড়িয়ে পড়ে তিন বাম দলেরই একটি অংশ। বামফ্রন্টের বড় শরিক সিপিআইএম এই ক্ষেত্রে কোনও শরিক রাখতে চায়নি। তাই আরএসপি ও ফরওয়ার্ড ব্লকের জমি কাড়া শুরু হয়। ছোট শরিকের নেতা-কর্মীরা উপরতলায় বার বার জানিয়েও রক্ষা পায়নি। এই কারণেই ২০০৮-এর পঞ্চায়েত নির্বাচনের পর তৃণমূলের উত্থানে এরা রং বদল করে।

যার পরিণতি স্পষ্ট-- একদা ফরওয়ার্ড ব্লক বিধায়ক মণিরুল ইসলাম আজ তৃণমূলের ‘সম্পদ’ বীরভূমের জেলা সভাপতি অণুব্রত মণ্ডলের ডান হাত। তৃণমূলের ছত্রচ্ছায়ায় থাকার কারণে বিরোধীদের ঘরবাড়ি জ্বালিয়ে দেওয়া, পুলিশকে বোমা মারার নির্দেশ দিলেও পুলিশ তার টিকি ছুঁতে পারেনি। তাঁর বিরুদ্ধে খুনের উস্কানির অভিযোগ! তবু পার পেয়ে যাচ্ছেন! একই ভাবে সিপিআই কর্মী তিন ভাইকে পিটিয়ে মারার মূল অভিযুক্ত হলেও পুলিশ মণিরুল ইসলামের বিরুদ্ধে কোনও পদক্ষেপ নিতে পারেনি। শুধু বীরভূম নয়, মণিরুলরা রাজ্যের ২০টি জেলাতেই তৃণমূলের ছাতার তলায় রয়েছে। লাল থেকে সবুজে নৌকা ভেড়ানোর সংখ্যা মোটেই কম নয়। তৃণমূলে তো এখন গ্রিন টিএমসি বনাম রেড টিএমসি-র লড়াই। অর্থাৎ লড়াই পুরনো তৃণমূল আর নব্য তৃণমূলের মধ্যে। এই কারণে জেলায় জেলায় গোষ্ঠীদ্বন্দ্ব তীব্র হয়ে উঠেছে তৃণমূলে। নদীর শাখা-উপশাখার মতো তৃণমূলের মধ্যে উপদলের সংখ্যা বাড়ছে।

পরিবর্তনের ভেলায় চেপে ক্ষমতায় এসেছে তৃণমূল। ক্ষমতায় আসার এক বছরের মধ্যে তৃণমূলের অন্দরে পরিবর্তন শুরু হয়েছে। যার জেরে তৃণমূলের সাংগঠনিক কাঠামোটাই বদলে গিয়েছে। কংগ্রেস ভেঙে দল তৈরির সময় থেকে যাঁরা রয়েছেন, তাঁদের অনেকেই আজ অপাংক্তেয়। ক্ষমতার স্বাদ থেকে অনেকটাই দূরে। দলনেত্রীর সঙ্গে দীর্ঘ দিন ধরে সিপিআইএম-এর বিরুদ্ধে লড়াইয়ের স্মৃতি নিয়েই তাঁদের সন্তুষ্ট থাকতে হচ্ছে। তাঁদের কপালে না জুটেছে সরকারি ক্ষমতার বখরা, না জুটেছে সাংগঠনিক পদাধিকার বলে কাপ্তানির সুযোগ। সিপিআইএম-এর বিরুদ্ধে লড়তে এরা ভালবেসেই দলে ছিলেন। সিপিআইএম-এর বিরোধিতা করতে গিয়ে শারীরিক ভাবে আক্রান্ত হয়েও তাঁরা দলনেত্রীকে ছেড়ে চলে যাননি। কিন্তু দল ক্ষমতায় আসার পরে জেলায় জেলায় এদের একটি বড় অংশে কল্কে না পেয়ে অবাঞ্ছিত হয়ে রয়ে গিয়েছেন।

দলের অন্দরে আজ এদের পরিচিতি হল গ্রিন টিএমসি। অন্য দিকে, শাসক দলের সংগঠনে এখন ভিড় করেছেন ক্ষমতার লোভে ভিড়ে পড়া নব্য টিএমসিরা। মন্ত্রিসভা থেকে প্রশাসন, দলের প্রতিটি শাখায় প্রভাবে প্রভাবে ঠাঁই করে নিয়েছেন এই হালে আসারা। এঁদের অধিকাংশই সিপিআইএম আমলে প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষ ভাবে ক্ষমতার সুখ ভোগ করেছেন ষোলো আনা। এঁদের অধিকাংশই ২০০৮-এর পঞ্চায়েত নির্বাচনের পর থেকেই তাল ঠুকছিলেন। ২০০৯-এর লোকসভা নির্বাচনের পরেই সিপিআইএম-এর প্রসাদভোগী কিছু নেতা, হাফ-নেতা আর বুদ্ধিজীবী ভেকধারীদের দূরদৃষ্টি তাঁদের তৃণমূল কংগ্রেসের দিকে চালিত করে।

সেই সময়েই তাঁরা বুঝে গিয়েছিলেন পালা বদলের সময় আসন্ন। সিপিআইএম-এর আর ভবিষ্যৎ নেই। অতএব তরী ভেড়াও তৃণমূলে। এমনকী বর্তমান শাসক দলের অনেক নেতা-মন্ত্রীর নির্বাচনী তহবিলে তাঁরা কিছু অবদানও রেখেছিলেন। কর্মজীবনে সরকারি অফিসারের আত্মমর্যাদা সরিয়ে রেখে শুধুমাত্র সিপিআইএম-এর হুকুম মেনে চলা অনেক অফিসার এখন সাংসদ, বিধায়ক ও মন্ত্রীর তালিকায় জায়গা করে নিয়েছেন। আবার প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রীর চোখে উদীয়মান তরুণ বাঙালি শিল্পপতির তকমা এবং অনুগ্রহ পাওয়া ব্যবসায়ীকে বর্তমান মুখ্যমন্ত্রীর অতি অনুগত সহচর হিসেবে দেখা যাচ্ছে। জার্সি পাল্টানোর এই খেলায় আর এক উজ্জ্বল নাম মণিরুল ইসলাম। ফরওয়ার্ড ব্লক ছেড়ে তৃণমূলে যোগ দিয়ে লাভপুরের বিধায়ক হয়ে তিনি দলের সুনাম বাড়াচ্ছেন। যার ইশারায় সিপিআইএম সমর্থক তিন ভাই প্রাণ হারিয়েছেন বলে অভিযোগ। তাঁর দাপটে মৃতদের সম্পন্ন পরিবার আজ ভিটে-মাটি খুঁইয়ে এখানে ওখানে পালিয়ে বেড়াচ্ছেন।

দলীয় চালচিত্রে এই সব ‘বিগ্রহের’ নাম হয়েছে রেড টিএমসি। ক্ষমতাসীন তৃণমূলে রেড টিএমসি-র আধিপত্যে এখন গ্রিন টিএমসি অনেকটাই কোণঠাসা। সোজা কথায় জন্মলগ্নে আসা প্রকৃত টিএমসি হয়েও হালে পানি না পাওয়া টিএমসি বনাম সদ্য জুড়ে যাওয়া সুবিধাবাদীও সুবিধাভোগী টিএমসি। যত দিন যাচ্ছে এই সব সংঘাত বাড়ছে। এই রেড টিএমসি-রা জাত খুইয়েছেন। কিন্তু, ঐতিহ্য হারাননি। বাম আমলের প্রোমোটার রাজ, ভেড়ি ব্যবসা, তোলাবাজি, সিন্ডিকেট রাজ সবই সঙ্গে ধরে নিয়ে এসেছেন। এর মধ্যে সিন্ডিকেট রাজ বাম আমলে চারাগাছ ছিল। এখন তা মহীরুহে পরিণত হয়েছে।

কী এই সিন্ডিকেট রাজ? সিন্ডিকেট রাজ হল আপনি বাড়ি কেনা-বেচা করবেন অথবা জমি কেনাবেচা করবেন? আপনাকে সিন্ডিকেটের মাধ্যমে করতে হবে। এদের প্রণামী দিতে হবে। আপনি বাড়ি বা আবাসন তুলবেন? আপনার এদের থেকে সিমেন্ট, বালি, ইট, লোহা নিতে হবে। না নিলে ইষ্ট নাম জপতে হবে। পাড়ায় পাড়ায় এখন এই সিন্ডিকেট রাজের দৌরাত্ম্য। এক একজন নেতার ছাতার তলায় আবার একাধিক সিন্ডিকেট। সিন্ডিকেট বনাম সিন্ডিকেট সংঘর্ষও বাঁধছে। এদের সুবাদে কলকাতা ও সংলগ্ন নিউটাউনে এখন ’৭০-এর দশক ফিরে এসেছে। দিনে-রাতে বোমাবাজি। একে অপরের উপর ছুরি-পিস্তল নিয়ে ঝাঁপিয়ে পড়া। পুলিশ এখানে নীরব দর্শক। সবই তো চলছে শাসক দলের ছত্রচ্ছয়ায়। ফলে পুলিশের সাধ্য কি এদের গায়ে হাত ঠেকায়।

দলের মধ্যে এই টানাপড়েনের কথা তৃণমূল সুপ্রিমো মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় জানেন না তা নয়। জানেন মুকুল রায়, সুব্রত বক্সির মতো নেতারাও। দলের এক কর্মী-সভায় বিষয়টি উত্থাপন করেছিলেন প্রবীণ নেতা ও সাংসদ সৌগত রায়। তাঁর বক্তব্য ছিল, দলে নতুন যাঁরা এসেছেন, তাঁরা অনেক ক্ষেত্রেই দলীয় অনুশাসন মানছেন না। এই নতুনদের জন্য পুরনোরা দলে যথার্থ মর্যাদাও পাচ্ছেন না। কিন্তু, মঞ্চে উপস্থিত মুকুল রায় প্রকাশ্যেই সৌগত রায়কে নস্যাৎ করে দেন। নিজের বক্তব্য বলার সময় তিনি বলেন, দল আগে ছোট ছিল, এখন বড় হয়েছে। নতুন নতুন মানুষ আসছেন বলেই বড় হয়েছে। তাই এই ভাবে নতুন-পুরনোদের বিভাজন করাটা ঠিক নয়। সবাইকে নিয়েই চলতে হবে।

তৃণমূলের সভায় মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় প্রায়শই বলে থাকেন, কর্মীদের মানুষের সমীহ ও শ্রদ্ধা আদায় করে নিতে হবে। নেত্রী যাই বলুন, জেলায় জেলায় দলীয় নেতা কর্মীদের কানে সে কথা পৌঁছচ্ছে বলে তো মনে হয় না। কোচবিহার, বীরভূম, বর্ধমান, উত্তর ২৪ পরগনাায় নানা রকম কাজের বখরা নিয়ে গোষ্ঠীদ্বন্দ্ব চরমে উঠেছে। কোচবিহারে রেড টিএমসি-র নেতৃত্বে আছেন ফরওয়ার্ড ব্লক থেকে তৃণমূলে মন্ত্রী হওয়া হিতেন বর্মন। অন্য দিকে গ্রিন টিএমসি-র নেতৃত্বে দলের পুরনো নেতা রবীন্দ্রনাথ ঘোষ। মন্ত্রী হওয়ার সুবাদে ক্ষমতা ভাগ ও ক্ষমতা ভোগ দুইয়েরই সুযোগ হিতেন বর্মনের রয়েছে। আর রবীন্দ্রনাথ ঘোষ পেয়েছেন ভরতুকি দিয়ে চালানো রক্তাল্পতায় ভোগা উত্তরবঙ্গ পরিবহণের ভার। ঝকঝকে পরিবহণ মন্ত্রীর কাছে ধরনা দিয়েই তাঁর দিন কাটে। এই পরিস্থিতিতে হিতেন বর্মনের দাক্ষিণ্যে ফরওয়ার্ড ব্লক থেকে চলে আসারা জেলায় দলীয় সংগঠনেরও দখল নিয়েছেন। কোচবিহার জুড়েই এখন তৃণমূলে নতুন-পুরনোর লড়াই চলছে।

এ বারে আসা যাক বীরভূমের লাভপুর এবং নানুরে। বাম আমলে অন্তত পাঁচ জন মন্ত্রীর আপ্তসহায়ক ছিলেন এলাকায় ‘বাহুবলী’ বলে এক নেতা এখন তৃণমূলে। ক্ষমতায় এসে বীরভূমের জেলা সভাপতি দলের ‘সম্পদ’ অণুব্রত মণ্ডল তাঁকে নানুরে দলের ভার দিয়েছেন। স্বাভাবিক ভাবেই দলের পুরনো কর্মীরা এত দিন যার বিরুদ্ধে লড়াই করে এসেছেন সেই এখন নেতা হয়ে বসায় হতবাক। নানুরের দলীয় বিধায়ক গদাধর হাজরা এখানে পুরনোদের নেতৃত্ব দিচ্ছেন।

তবে, রেড টিএমসি-র দখলেই এখন নানুরের অধিকাংশ এলাকা। ফরওয়ার্ড ব্লকের মাঝারি নেতা আব্দুল মান্নানকে দলে এনে লাভপুরের দায়িত্ব দিয়েছেন অণুব্রত মণ্ডল। মান্নানের মাথার উপর রয়েছেন বিধায়ক মণিরুল ইসলাম। একেবারে রাজযোটক। একই ছবি বর্ধমানের মঙ্গলকোটে। সেখানেও রেড টিএমসি-র দখলে ঘাসফুল। তাদের প্রতাপে মঙ্গলকোট এখন বিরোধী শূন্য। বিরোধী ঘর-বাড়ি, মাঠের ধান এখন রেড টিএমসি-র দখলে।

নতুন-পুরনোর সংঘাত শুধু দলেই নয়, সুনামির মতো ধাক্কা দিয়েছে শাখা সংগঠনেও। দলীয় শ্রমিক সংগঠনের রাশ এখন রেড টিএমসি নেত্রীর হাতে। মানে দোলা সেনের হাতে। ফলে পুরনো শ্রমিক সংগঠনের নেতারা এখন কোণঠাসা। এই নেত্রীর দাপটে জন্মলগ্ন থেকে দলে রয়েছেন যিনি, সেই শ্রমিক নেতা শোভনদেব চট্টোপাধ্যায় এখন সংগঠনে ব্রাত্য। সম্প্রতি বিভিন্ন দল ছেড়ে বিজেপি-তে ভিড় জমানোর প্রবণতা বাড়ছে। তৃণমূল কংগ্রেসের আভ্যন্তরীণ সংকট থেকে এ রাজ্যের বিজেপি নেতাদের শিক্ষা নিতে হবে। এখন থেকে সতর্ক না হলে শরীরে বিষ ছড়িয়ে গেলে আর কিছু করার থাকবে না। বেনোজল একবার ঢুকতে শুরু করলে পায়ের তলার মাটি উর্বরতা হারাবে। শীর্ষ নেতাদের খুশি করতে রাহুল সিংহরা যদি যে কোনও ভাবে দলের কলেবর বাড়াতে চান তা হলে সেই মেদে কিন্তু অনেক রোগের লক্ষণও মিশে থাকবে। অনুকূল পরিস্থিতি পেলে যা প্রস্ফুটিত পদ্মফুলকে কীটদংশ কুঁড়িতে বদলে দেবে।

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement