সেই দোতলা ট্রেন। ছবি: চন্দন পাল
লোকসানের ধাক্কায় বেসামাল তৎকালীন রেলমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের ‘পুজোর উপহার’ হাওড়া-ধানবাদ দোতলা ট্রেন।
পূর্ব রেল সূত্রে খবর, ২০১১ সালের ১ অক্টোবর ওই ট্রেনটি চালু হয়। কিন্তু প্রথম থেকেই শীতাতপনিয়ন্ত্রিত ‘ডবল-ডেকার’ ট্রেনে উঠতে অনীহা ছিল যাত্রীদের। রেল আধিকারিকরা জানিয়েছেন, প্রতি দিন ২০ শতাংশের মতো টিকিট বিক্রি হতো। ক্রমাগত লোকসান সামলানো আর সম্ভব হচ্ছিল না। গত এক মাসে দু’দফায় বিভিন্ন কারণ দেখিয়ে ট্রেনটির যাত্রা বাতিল করা হয়। ডিসেম্বরের শুরু থেকে ২৫ জানুয়ারি পর্যন্ত কুয়াশার জন্য দোতলা ট্রেনটি বাতিল করা হয়েছিল। রেল সূত্রে খবর, ২৬ জানুয়ারি থেকে আগামী মার্চ পর্যন্ত পরিকাঠামোগত সমস্যার কারণ দেখিয়ে দ্বিতল ট্রেনটির পরিষেবা বন্ধ রাখার ঘোষণা করা হয়েছে।
পূর্ব রেলের মুখপাত্র আর এন মহাপাত্র অবশ্য লোকসানের কথা সরাসরি স্বীকার করেননি। তিনি বলেন, “ওই ট্রেনের সময়সূচি পরিবর্তন করতে চেয়ে রেল বোর্ডের কাছে চিঠি পাঠানো হয়েছে। বোর্ডের সবুজ সঙ্কেত মিললে ফের পরিষেবা চালু করা হবে।” পূর্ব রেলের কয়েক জন আধিকারিক জানিয়েছেন, ওই ট্রেনের যাত্রীদের কাছে কখনওই স্বাচ্ছন্দ্যের বিষয়ে খোঁজখবর নেওয়া হয়নি। নেওয়া হয়নি সওয়ারিদের পরামর্শও।
ধানবাদ-হাওড়া নিত্যযাত্রীদের একাংশের বক্তব্য, ওই ট্রেনটি সুবিধাজনক সময়ে চলাচল করে না। সেটি হাওড়া থেকে ছাড়ে সকাল ৮টা ৩৫ মিনিটে। ধানবাদে পৌঁছয় বেলা ১২টা ৫০-এ। ফের ধানবাদ থেকে সন্ধে সাড়ে ছ’টায় ছেড়ে রাত ১০টা ৪০ মিনিটে হাওড়া পৌঁছয়। ওই রকম সময়সূচির জন্যই শতাব্দী এক্সপ্রেস, ব্ল্যাক ডায়মন্ড বা কোলফিল্ড এক্সপ্রেসের টিকিট কাটেন নিত্যযাত্রীরা। ভোরের দিকে গন্তব্যে রওনা দেওয়ায় বেশির ভাগ যাত্রী ওই ট্রেনগুলিতে যেতেই পছন্দ করেন।
ধানবাদ থেকে নিয়মিত কলকাতা যাতায়াত করেন সাহানা রায়। তাঁর কথায়, “আসনগুলি খুব ছোট। পুশব্যাকও কাজ করে না।” সুদীপ্ত সেনগুপ্ত নামে আর এক যাত্রীর মন্তব্য, “অনেক সময় শীতাতপনিয়ন্ত্রক যন্ত্র খারাপ থাকে।”
ট্রেনটির পরিষেবা শুরু করতে অনেক কসরত করতে হয়েছিল পূর্ব রেলকে। আধিকারিকরা জানান, হাওড়া থেকে ধানবাদের মধ্যে ছোট-বড় প্রায় ৩৩টি স্টেশন রয়েছে। অন্য ট্রেনগুলির তুলনায় দোতলা ট্রেনটির কামরা কিছুটা চওড়া। কোনও প্ল্যাটফর্মের সঙ্গে যাতে কামরাগুলির ঘষা না লাগে, সে জন্য কয়েকটি স্টেশনে প্ল্যাটফর্মের কিছুটা অংশ ভেঙে দেওয়া হয়েছিল।
রেল সূত্রের খবর, লোকসানের বোঝা কমাতে কয়েক মাস আগে দোতলা ট্রেনটির কামরার সংখ্যা ৯টির থেকে কমিয়ে পাঁচটি করে দেওয়া হয়। প্রতিটি কামরায় ১২৮টি আসন রয়েছে। কিন্তু তাতেও পরিস্থিতি বদলায়নি। পূর্ব রেল সূত্রে খবর, প্রতিদিন ওই ট্রেনে ৭০ জন যাত্রীও থাকেন না। রেলের এক কর্তার কথায়, “এক একটি কামরায় শীতাতপনিয়ন্ত্রক চালু রাখতেই ঘন্টায় ২ হাজার টাকা খরচ হয়। হাওড়া-ধানবাদের মধ্যে যাতায়াত করার খরচের সিকিভাগও টিকিটের দাম থেকে মেলে না।”