বছর দু’য়েক আগেও দিল্লির বিধানসভা ভোটে লড়েছিলেন তিনি। জিততে পারেননি। কিন্তু তিনিও যে দমবার পাত্রী নন। তাই এ বছরও আসন্ন বিধানসভা ভোটে প্রার্থী হওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন রমেশ কুমার লিলি। বাহান্ন বছরের লিলি এক জন রূপান্তরকামী। পরে অবশ্য লিঙ্গ পাল্টে মহিলা হয়েছেন। আর তাঁর দিকেই এখন তাকিয়ে দিল্লির সুলতানপুর মাঝরা এলাকার প্রায় আড়াইশো রূপান্তরকামী।
৫২ বছরের লিলি এ বার ভোটে দাঁড়াচ্ছেন নির্দল প্রার্থী হয়ে। কেন্দ্রের নাম মঙ্গলপুরী। ২০১৩ সালের বিধানসভা ভোটেও এই কেন্দ্র থেকেই দাঁড়িয়েছিলেন তিনি। দিল্লির ভোটে মোট ৬৭৩ জন প্রার্থীর মধ্যে লিলিই একমাত্র রূপান্তরকামী। তাঁর বিরুদ্ধে লড়ছেন বিজেপির প্রভু দয়াল, কংগ্রেসের জয়কৃষ্ণ এবং আপের সন্দীপ কুমার। জেতা যে সহজ নয়, তা ভাল করেই জানেন লিলি। হাড্ডাহাড্ডি লড়াইয়ের আগে হাল ছাড়তে নারাজ তিনি।
তাই সকালবেলা ঘুম থেকে উঠেই নির্বাচনী প্রচারে নেমে পড়ছেন লিলি। হাতিয়ার বলতে একটা টেম্পো। আর মুখে স্লোগান। টেম্পো চড়েই চলছে নির্বাচনী কেন্দ্রের বিভিন্ন এলাকায় ঘোরার পালা। টেম্পোতে রয়েছে লিলির একটা বড় জোড় হাত করা ছবি। তলায় লেখা ‘ইন্ডিয়ান সমাজবাদী শক্তি পার্টি’। আপাতত ওই দলের হয়েই তিনি যাবতীয় কাজ করছেন। গোটা কর্মকাণ্ডে সঙ্গে থাকছেন তাঁর কিছু অনুগামীও। টেম্পো চড়ে ঘোরার সঙ্গে সঙ্গেই চলছে বাড়ি বাড়ি কড়া নেড়ে লোকের সঙ্গের কথা বলাও। কোনও এলাকায় তাঁর উপস্থিতি এলাকাবাসীকে জানাতে লাউড স্পিকারের সাহায্যও নিচ্ছেন লিলি।
ভোট প্রচারে সকলকে একটা কথাই বলছেন লিলি। “অনেক নেতাকেই তো দেখলেন। নেত্রীকেও। এ বার আমায় ভোট দিয়ে দেখুন। এক জন কিন্নরকে ভোট দিয়ে দেখুন। তফাতটা বুঝতে পারবেন”, বলছেন লিলি। নিজের লক্ষ্যটাও ভাল করে জানেন লিলি। দারিদ্র দূরীকরণ, মূল্যবৃদ্ধিতে রাশ টানা, বেকারত্ব ঘোচানো নির্বাচনী প্রচারে আপাতত এই দিকগুলোই তুলে ধরছেন লিলি। সেই সঙ্গে একটা বড় অংশ জুড়ে থাকবে নিজের সম্প্রদায় নিয়ে যত কুসংস্কার রয়েছে, সেগুলি মুক্ত করা। তিনি বলছেন, “এখনকার রাজনীতিকদের তো ভোটে জেতার পরে ব্যক্তিগত স্বার্থ চরিতার্থ করার একটা প্রবণতা দেখা যায়। কিন্তু আমি বিয়ে করিনি। সন্তানও নেই। যাদের জন্য আমি সম্পত্তি বাড়াবো। তাই গরিবদের জন্য কাজ করতে চাই। আর চাই নিজের সম্প্রদায়ের জন্য কিছু করতে।” নারী এবং পুরুষের বাইরেও সমাজে যে একটা লিঙ্গ রয়েছে, সেটাই সকলকে বোঝাতে চান লিলি। পাল্টাতে চান তাঁদের সম্প্রদায়ের প্রতি সাধারণ মানুষের মনোভাবও।
জয় নিয়ে কতটা আশাবাদী? লিলির ঝটপট জবাব, “জিতি বা হারি, তা নিয়ে খুব একটা চিন্তিত নই। আমি যে নিজের সম্প্রদায়ের জন্য একটা জায়গা তৈরি করতে পারছি, সেটাই হল আসল কথা।”