ক’দিন ধরেই জেভিয়ার মরোর লেখা ‘দ্য রেড শাড়ি’ পড়ছেন বিজেপির প্রবীণ নেতা লালকৃষ্ণ আডবাণী। সনিয়া গাঁধীর উপরে লেখা বইটি পেয়ে মন দিয়েছেন তাতে। দেখেন, তাঁর ও সনিয়া-রাজীবের বিবাহ-বার্ষিকী একই দিনে। এ মাসের ২৫ তারিখ আডবাণী-কন্যা প্রতিভা এমনিতেই তোড়জোড় শুরু করে দিয়েছিলেন ঘটা করে বাবা-মায়ের বিবাহবার্ষিকী পালনের। এ সব নিয়েই মেতে ছিল আডবাণী পরিবার। কিন্তু দিল্লি ভোটের ফল আসার পর হঠাৎই বদলে গিয়েছে ছবিটা।
পরিবারের বৃত্তে নিজেকে আটকে না রেখে ফের সক্রিয় হয়েছেন আডবাণী। সাক্ষাৎকার দিচ্ছেন না, প্রকাশ্যে কথাও বলছেন না। কিন্তু জনে-জনে নেতাদের ফোন করছেন । সে বিজেপির নেতাই হোন বা ভিন্ দলের। এনডিএর শরিক শিবসেনার নেতা উদ্ধব ঠাকরেই হোন বা ঘোরতর মোদী-বিরোধী নেতা নীতীশ কুমারআডবাণীর সঙ্গে সুসম্পর্ক সকলেরই। বিজেপির সংসদীয় বোর্ড থেকে সরানোর পর দলের বিষয়ে বিশেষ মত দেন না এই প্রবীণ নেতা। তবে এখন প্রশ্ন তুলছেন, কেন দল নরেন্দ্র মোদী ও অমিত শাহে কেন্দ্রীভূত হবে? কেন দিল্লি-বিপর্যয়ের দায় নেবেন না তাঁরা?
দিল্লির ভোটের ফল প্রকাশের পর থেকেই একেবারে চুপ মোদী ও শাহ। গত কাল ছেলের বিয়েতে ব্যস্ত ছিলেন অমিত শাহ। সকালে দিল্লির বেহাল দশা স্পষ্ট হতেই আয়োজন ফিকে হতে শুরু করে। উপস্থিত এক নেতার মতে, তবে পরাজয়ের পরে ব্যান্ড-পার্টিকে ধীরে বাজাতে বলা হয়। আতসবাজিও ফাটেনি। গুজরাতে না গিয়ে সন্ধ্যায় মোদী মন্ত্রিসভার বৈঠক ডেকে দেন।
দিল্লির বিপর্যয়ের পর মোদী-শাহের নীরবতা নিয়ে প্রশ্ন তুলতে শুরু করেছেন অনেকে। তালিকায় একা আডবাণী নন, মন্ত্রিসভার অনেকে এতে সামিল। কিন্তু মোদী-শাহের বিরুদ্ধে প্রকাশ্যে মুখ খোলার সাহস কেউই দেখাতে পারেননি। এক মন্ত্রী বলেন, “জিতলে মোদীর জয়ধ্বনি হতো, হারলে চুপ হবে?” যদিও পর ক্ষণেই তাঁর মন্তব্য, “আমাদেরও তো দলে থাকতে হবে! কী করে এখনই সরব হব, যত ক্ষণ না অনেকে প্রশ্ন তুলছেন।” বিজেপির ভিতরে অসন্তোষ এখনও বিদ্রোহের পরিস্থিতিতে আসেনি। অসন্তুষ্টরা মোদী-শাহের ‘অতি-কেন্দ্রীভূত ক্ষমতা’-র বিরুদ্ধে দলভারী করার প্রক্রিয়া শুরু করেছেন। তাঁদের মতে, এখনই হারের দায় নেওয়া উচিত দু’জনের।
বিজেপির এক শীর্ষ নেতার ক্ষোভ, “দলের যাবতীয় সিদ্ধান্ত শুধু অমিত শাহ নিচ্ছেন, এমন নয়। সরকারের রাশ গোটাটাই মোদীর হাতে। মন্ত্রীদের কারও হাতে কোনও ক্ষমতা নেই।” তাঁর ব্যাখ্যা, “ক’দিন আগে জমি বিলের মতো এত গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ে অর্ডিন্যান্স জারি হল, অথচ গ্রামোন্নয়ন মন্ত্রী কিছু জানতেই পারলেন না।” প্রশ্ন হল, তা হলে কি নীরবেই শেষ হবে চাপা অসন্তোষ?
এক ক্ষুব্ধ নেতার মতে, ফেসবুক, টুইটারে মোদীকে নিশানা করে হারের দায় নেওয়ার পক্ষে সওয়াল শুরু হয়েছে। ‘এক বিজেপি কর্মী’র নামে প্রধানমন্ত্রীর উদ্দেশে খোলা চিঠি লেখা হচ্ছে। কীর্তি আজাদ, দিল্লি বিজেপির দু’-একজন নেতাও অল্পবিস্তর বলছেন। পাশাপাশি, অমিত শাহ বিভিন্ন নেতার সঙ্গে আলোচনা করে অসন্তোষ ধামাচাপা দিতে দলের শীর্ষস্থানীয় রামলালকে দায়িত্ব দিয়েছেন। বিজেপির যে তিনজন বিধায়ক জিতে এসেছেন, তার মধ্যে নেতা কে হবেন, তা নিয়েও বিস্তর গোলমাল শুরু হয়েছে।