মনমোহন সিংহ করেননি। আকাশছোঁয়া দ্রব্যমূল্যে লাগাম পড়াতে নিজের সুপারিশ তাই নিজেই রূপায়ণ করতে চান নরেন্দ্র মোদী।
চার বছর আগে মূল্যবৃদ্ধিতে রাশ টানতে মুখ্যমন্ত্রীদের নিয়ে তিনটি কমিটি তৈরি করেছিলেন মনমোহন সিংহ। যার মধ্যে একটি কমিটির প্রধান ছিলেন নরেন্দ্র মোদী। মোদী কমিটি ৮৪ দফা সুপারিশ সংবলিত রিপোর্ট পেশ করেছিল মনমোহন সিংহের টেবিলে। কিন্তু কোনও সুপারিশই মানা হয়নি। প্রধানমন্ত্রীর সচিবালয় হোক বা যোজনা কমিশন কোনও পদক্ষেপই করেনি কেউ। হিমঘরে পড়ে থাকা মোদী-কমিটির সেই সুপারিশ মেনেই এ বার মূল্যবৃদ্ধিতে রাশ টানার নীল নকশা তৈরি করছে মোদী-সরকার।
কী সেই নীল নকশা?
মোদী সরকারের প্রথম লক্ষ্য, খাদ্যপণ্যের দাম কমানো। গত এপ্রিলে মূল্যবৃদ্ধির হার ছিল সাড়ে ৮ শতাংশেরও উপরে। যার প্রধান কারণ শাকসব্জি, ফল ও দুধের দাম। চাল-গম, শাকসব্জির মতো সমস্ত খাদ্যপণ্যের জোগান বাড়িয়ে দাম কমাতে চায় মোদী সরকার। যার জন্য আধ ডজন পরিকল্পনা নেওয়া হচ্ছে। সেই মোদী কমিটির সুপারিশ মেনেই এখন পরিকল্পনা তৈরি হচ্ছে। মোদী সরকারের প্রধান ও দীর্ঘমেয়াদি লক্ষ্য, কৃষিতে উৎপাদন বাড়ানো। আজ লোকসভায় রাষ্ট্রপতির বক্তৃতা নিয়ে বিতর্কের শেষে জবাব দিতে গিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, “চাষবাসের ধরনের আধুনিকীকরণ প্রয়োজন। যতখানি সম্ভব আধুনিক প্রযুক্তি, গবেষণাকে কাজে লাগাতে হবে। জমির উৎপাদনশীলতা বাড়াতে হবে।”
মূল্যবৃদ্ধিতে রাশ টানতেও রাজ্যগুলির সঙ্গে কাঁধে কাঁধ মিলিয়েই কাজ করতে চাইছে মোদী সরকার। পরিকল্পনা অনুযায়ী, কালোবাজারি ও ফাটকাবাজি রুখতে কড়া আইন ও বিশেষ আদালত চালু করা হবে। কালোবাজারি বা খারাপ আবহাওয়ায় ফলন মার খেলে অনেক সময় কোনও খাদ্যপণ্যের দাম হঠাৎ করে বেড়ে যায়। রাজ্য সরকারের তরফে কম দামে ওই খাদ্যপণ্য বিক্রি করে পরিস্থিতি সামাল দেওয়ার চেষ্টা হয়। মোদীর পরিকল্পনা হল, এ জন্য রাজ্যগুলিকে সাহায্য করতে তৈরি হবে পৃথক তহবিল। খাদ্যশস্য কোথায় কী পরিমাণ উৎপাদন হচ্ছে, কত দাম থাকছে, কতখানি আমদানি বা রফতানি হচ্ছে, তথ্যপ্রযুক্তির সাহায্যে তার হাতে গরম তথ্য পাওয়ার ব্যবস্থা তৈরি হবে। মোদী বলেন, “এই তথ্য হাতে থাকলে কোথাও কোনও খাদ্যপণ্যের অভাব দেখা দিলে দ্রুত তা পাঠানোর বন্দোবস্ত করা যাবে।” খাদ্য নিগম বা এফসিআই এখন একইসঙ্গে খাদ্যশস্য সংগ্রহ, মজুত ও বন্টনের কাজ করে। মোদীর মতে, তিনটি কাজ একসঙ্গে করতে গিয়ে কোনওটাই ঠিক ভাবে হয় না। তিনটি পৃথক সংস্থার মধ্যে এই তিনটি দায়িত্ব ভাগ করে দেওয়া প্রয়োজন। গোটা দেশে কৃষিপণ্যের আদানপ্রদানের উপর যাবতীয় বিধিনিষেধ তুলে দেওয়ার চেষ্টা হচ্ছে। এ জন্য কৃষি পণ্য বিপণন আইনেও সংশোধন হবে। ইউপিএ-জমানার শেষ পর্বে রাহুল গাঁধী কংগ্রেস শাসিত রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রীদের সঙ্গে বৈঠক করে এই চেষ্টা করেছিলেন। কিন্তু তার লাভ বেশি দূর যায়নি। এ বার মোদী সার্বিক ভাবে তা করতে চাইছেন। স্থানীয় মানুষের খাদ্যাভ্যাস অনুযায়ী খাদ্যশস্য ও শাকসব্জি চাষে উৎসাহ দেওয়ারও নীতি তৈরি হবে।
বিজেপি নেতৃত্বের মতে, জিনিসপত্রের দাম মধ্যবিত্তের নাগালে রাখতে ব্যর্থ হয়েছিল ইউপিএ সরকার। লোকসভা নির্বাচনে তারই মাসুল গুনতে হয়েছে কংগ্রেসকে। এ বিষয়ে বিজেপি কোনও ভুল করতে চায় না। কিন্তু মোদী সরকারের চিন্তা বাড়িয়েছে আবহাওয়া দফতরের পূর্বাভাস। কৃষি মন্ত্রক সূত্রের বক্তব্য, পূর্বাভাস অনুযায়ী চলতি বছরে স্বাভাবিকের তুলনায় অনেক কম বৃষ্টিপাত হবে। ফলে খাদ্যপণ্যে মূল্যবৃদ্ধি নতুন করে কেন্দ্রীয় সরকারের সামনে চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়াবে। শুধু রিজার্ভ ব্যাঙ্কের সুদের হার বাড়িয়ে, কেনাকাটায় রাশ টেনে বাজারের দাম নিয়ন্ত্রণে রাখা যাবে না। খাদ্যপণ্যের জোগান ও সরবরাহ ব্যবস্থার উন্নতি না করে উপায় নেই।