বার্তা পাঠাচ্ছে কংগ্রেস, ভাবছেন না বুদ্ধ-ইয়েচুরি

আগে ছিল কেবল কটাক্ষ! কিন্তু ভোট যত গড়াচ্ছে, নরেন্দ্র মোদী নামক ‘বিপদ’কে ঠেকানোর জন্য কংগ্রেসের তরফে একের পর এক বার্তা আসছে তথাকথিত তৃতীয় ফ্রন্টের জন্য! যাকে বামপন্থীরা বলছে বিকল্প শক্তি। তবে কংগ্রেসের বার্তা শুনে আমোদিত হলেও আপাতত তাতে সাড়া দেওয়া নিয়ে ভাবতেই রাজি নয় সিপিএম।

Advertisement

সন্দীপন চক্রবর্তী

কলকাতা শেষ আপডেট: ২৮ এপ্রিল ২০১৪ ০৩:০৬
Share:

গরমে ভরসা হাতপাখা। রবিবার কৃষ্ণনগরে সভা শুরুর আগে প্রার্থী শান্তনু ঝা-র সঙ্গে আলোচনা বুদ্ধদেব ভট্টাচার্যের। ছবি: সুদীপ ভট্টাচার্য।

আগে ছিল কেবল কটাক্ষ! কিন্তু ভোট যত গড়াচ্ছে, নরেন্দ্র মোদী নামক ‘বিপদ’কে ঠেকানোর জন্য কংগ্রেসের তরফে একের পর এক বার্তা আসছে তথাকথিত তৃতীয় ফ্রন্টের জন্য! যাকে বামপন্থীরা বলছে বিকল্প শক্তি। তবে কংগ্রেসের বার্তা শুনে আমোদিত হলেও আপাতত তাতে সাড়া দেওয়া নিয়ে ভাবতেই রাজি নয় সিপিএম।

Advertisement

শুরু করেছিলেন বিদায়ী প্রতিরক্ষামন্ত্রী এ কে অ্যান্টনি। ভোটের আগে নিজের রাজ্য কেরলে অ্যান্টনি বলেছিলেন, লোকসভা ভোটের পরে বামেদের সঙ্গে মিলে কেন্দ্রে সরকার গড়া যেতে পারে। কেরলে যে হেতু কংগ্রেসই তাঁদের মূল প্রতিপক্ষ, অ্যান্টনির এই প্রস্তাব শোনা মাত্র তা খারিজ করে দিয়েছিলেন প্রকাশ কারাটেরা। কিন্তু কংগ্রেস তাতে থামেনি। মুম্বইয়ে বসে মহারাষ্ট্রের মুখ্যমন্ত্রী পৃথ্বীরাজ চহ্বাণ, কলকাতায় এসে দলের আইনজীবী নেতা অভিষেক মনু সিঙ্ঘভি বা ফারুখাবাদে বিদায়ী বিদেশমন্ত্রী সলমন খুরশিদ ঘুরিয়ে ফিরিয়ে সবাই একই কথা বলেছেন গত কয়েক দিনে। বিজেপি-কে দূরে রেখে ধর্মনিরপেক্ষ সরকার গড়ার স্বার্থে বাম-সহ অন্যান্য শক্তির সঙ্গে একজোট হতে তাঁদের কোনও আপত্তি নেই, কংগ্রেসের এমন বার্তা ছড়িয়ে যাচ্ছে সোশ্যাল মিডিয়াতেও।

এঁদের মধ্যে খুরশিদ আবার এক ধাপ এগিয়ে দু’দিকের দরজাই খুলে দিয়েছেন। বলেছেন, “ভোটের পরে তথাকথিত তৃতীয় শক্তির সমর্থন নিয়ে কংগ্রেস সরকার গড়তে পারে। আবার তৃতীয় শক্তির সরকারে কংগ্রেসের সমর্থনও থাকতে পারে।” কংগ্রেসের একটি সূত্রের ব্যাখ্যা, দেশে ৬ দফায় এখনও পর্যন্ত ৩৪৯টি লোকসভা আসনের ভোট হয়েছে। বাকি আর তিন দফা। প্রচারের ঘনঘটায় মনে হচ্ছে, মোদী-লহরে ভেসে বিজেপি-ই ক্ষমতা দখল করবে! দিল্লিতে সরকার গঠনে কংগ্রেসের ভূমিকা থাকবে না, এমন ধারণা মানুষের মনে চেপে বসলে তাদের ফল আরও খারাপ হতে পারে বুঝেই আপাতত তৃতীয় শক্তির চাল চেলেছে সনিয়া গাঁধীর দল। যাতে বুঝিয়ে দেওয়া যায়, ইউপিএ-র মডেলে না-হলেও বহুদলীয় জোট সরকারে কংগেসের ভূমিকা গুরুত্বপূর্ণ হবে।

Advertisement

এ নিয়ে অবস্থান ঠিক করতে গিয়ে সিপিএমের অন্দরে বিতর্ক হয়েছে। কিন্তু এখন সিপিএম নেতৃত্ব বুঝতে পারছেন, কংগ্রেসের পরোক্ষ বার্তায় ইতিবাচক সাড়া দিতে গেলে হিতে বিপরীতই হবে। তাই সিপিএমের মধ্যে কংগ্রেসের সঙ্গে ভাল সম্পর্ক রাখার পক্ষপাতী যে অংশ, সেই অংশের নেতারাও সুর নরম করতে চাইছেন না। দলের পলিটব্যুরো সদস্য সীতারাম ইয়েচুরি যেমন বলছেন, “আমরা চিরকালই বিকল্প শক্তির সরকার নিয়ে সিরিয়াস ছিলাম। এই বিকল্প সরকারের ভাবনা আরও গতি পাবে ভোটের পরে। কিন্তু কংগ্রেসের এখন কেন এটা মনে হল, জানি না!”

মুখ্যমন্ত্রী বুদ্ধদেব ভট্টাচার্যের বক্তব্য, “মনমোহন সিংহ ১০ বছরের রাজত্বে যে দেশ রেখে যাচ্ছেন, সেখানে বহু মানুষ এখনও খিদে নিয়ে শুতে যায়। এত বছর ধরে যে উদারনীতির বিরুদ্ধে লড়াই করলাম, তাকে ফের ফিরিয়ে আনা যায় না!” সিপিএমের এই পলিটব্যুরো সদস্যের মতে, কংগ্রেস এবং বিজেপি-র বাইরে ১১টি দলকে একজোট করাই তাঁদের কাছে এখন অগ্রাধিকার।

বেশ কিছু মানুষ অবশ্য সিপিএমের কাছে প্রশ্ন রেখেছেন, কোনও অবস্থায় কেন্দ্রে বামেদের অংশগ্রহণের সম্ভাবনা আছে কি? ভোটের আগে এই ব্যাপারে অবস্থান স্পষ্ট করে দিলে জনতার পক্ষে সিদ্ধান্ত নিতে সুবিধা হয়। তাতে ইয়েচুরি বলছেন, “আমরা বিকল্প শক্তি এবং বিকল্প নীতির কথাই বলছি। দেখাই যাক না, কী হয়!”

সিপিএমেরই একাংশের বক্তব্য, ভোটের পরে কোনও ভাবে যদি সুযোগ আসে, তা হলেও শুধু মোদীকে ঠেকানোর নাম করে কংগ্রেসের ভরসায় পাঁচমিশালি সরকার গড়তে যাওয়া উচিত হবে না। সেই সরকারের স্থায়িত্ব নিয়ে ঘোর সংশয় থাকবে, বামেদের ভাবমূর্তিরও ক্ষতি হবে। তার চেয়ে কেন্দ্রের ভুল অর্থনীতির বিরোধিতা করে রাজ্যে রাজ্যে দলের কাজে মন দেওয়া ভাল।

ভোটের পরে অবস্থা বুঝে ব্যবস্থা, সেই ভাবনা সকলেরই মনে আছে। তবে এখন সেই সম্ভাবনার জল বেশি না ঘেঁটে আপাতত মোদী-হাওয়া খণ্ডন করতেই নজর দিচ্ছেন সিপিএম নেতৃত্ব। ইয়েচুরির কটাক্ষ, “এতই যদি নমো-হাওয়া, তা হলে বারাণসীর পরে আবার বঢোদরায় দাঁড়াতে হল কেন?” ঘটনাচক্রে, একই প্রশ্ন তুলেছেন তৃণমূল নেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ও!

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement