আর্থিক সংস্কারের সাহস দেখাতে পারলে তবেই বিদেশি বিনিয়োগকারীদের আস্থা ফিরতে পারে কিছুটা। ভারতমুখী হতে পারে বিদেশি লগ্নি। বিমায় বিদেশি লগ্নি বা পণ্য-পরিষেবা কর (জিএসটি) সংক্রান্ত বিলগুলি নিয়ে তাই যথাসম্ভব দ্রুত এগোতে চাইছেন নরেন্দ্র মোদী, অরুণ জেটলিরা।
সংসদীয় কমিটি আজ বিমায় ৪৯ শতাংশ বিদেশি লগ্নিতে ছাড়পত্র দেওয়ার সুপারিশ করে রাজ্যসভায় রিপোর্ট পেশ করেছে। এর পরে আর দেরি না করে রাতেই ওই বিলে সিলমোহর বসিয়েছে কেন্দ্রীয় মন্ত্রিসভা। লোকসভায় পাশ হয়েও সংসদীয় কমিটিতে আটকে থাকা বিলটি আগামী সোমবার রাজ্যসভায় আনতে চায় সরকার। মন্ত্রিসভার বৈঠকে আজ রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাঙ্কিং শিল্পেও বিলগ্নিকরণের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। অর্থমন্ত্রী জেটলি-সহ কেন্দ্রীয় মন্ত্রীরা মনে করছেন, বিমা বিল পাশ করানো গেলে এর পরে শ্রম আইন বদলের মতো আরও কঠিন সংস্কারের কাজও সহজ হয়ে যাবে।
তবে সংসদে বিল পাশেই সব মিটছে না। শিল্প মহলের দীর্ঘদিনের দাবি মেনে যাতে ২০১৬ সালের ১ এপ্রিল থেকে পণ্য-পরিষেবা কর (জিএসটি) চালু করা যায়, সেই ব্যবস্থাও করে ফেলতে চাইছে সরকার। আগামী কালই বিষয়টি নিয়ে সব রাজ্যের অর্থমন্ত্রীদের সঙ্গে বৈঠকে বসবেন জেটলি। কারণ, গোটা দেশে ওই কর চালু করতে হলে রাজ্যগুলিকেও পাশে পেতে হবে। এবং সেই লক্ষ্যে তিন বছর ধরে আটকে রাখা ক্ষতিপূরণের টাকা রাজ্যগুলিকে কিস্তিতে মিটিয়ে দিতে চায় কেন্দ্র। কেন্দ্রীয় অর্থ মন্ত্রক সূত্রের খবর, প্রথম কিস্তিতেই রাজ্যগুলিকে ১২ হাজার কোটি টাকা দিয়ে দেওয়া হবে। পণ্য-পরিষেবা কর চালুর ক্ষেত্রে কেন্দ্র-রাজ্য মতবিরোধের সব থেকে বড় বিষয় হল ওই ক্ষতিপূরণই। জিএসটি চালু করার লক্ষ্যে কয়েক বছর আগেই কেন্দ্রীয় বিক্রয় করের হার কমিয়ে আনা হয়েছে। এর জন্য রাজ্যগুলির রাজস্ব-ক্ষতি পূরণ করে দেওয়ার প্রতিশ্রুতি দিয়েছিল কেন্দ্র। কিন্তু নির্দিষ্ট সময়ে জিএসটি চালু না হওয়ায় কেন্দ্র গত তিন বছর ধরে ওই ক্ষতিপূরণ দিতে রাজি হয়নি। রাজ্যগুলির প্রাপ্য বকেয়ার পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ৩৩ হাজার কোটি টাকা।
তবে সংসদের চলতি অধিবেশনে জিএসটি বিল পেশ করা যাবে কি না, তা নিয়ে সংশয় রয়েছে। ব্যবসার অঙ্ক কত হলে তা জিএসটি-র আওতায় আসবে, পেট্রোলিয়াম পণ্যে এই কর বসবে কি না তা নিয়েও কেন্দ্র-রাজ্য মতবিরোধ রয়েছে। অর্থ মন্ত্রকের নতুন প্রতিমন্ত্রী জয়ন্ত সিন্হা বলেন, “রাজ্যগুলির সঙ্গে আলোচনা
চলছে। জিএসটি চালু করার আইনি প্রক্রিয়া বেশ জটিল। সংবিধান সংশোধনের পরে রাজ্যগুলির অনুমোদন লাগবে।”
বিমা বিল নিয়েও জট পুরো কেটেছে, এমন নয়। কংগ্রেস নেতা অভিষেক মনু সিঙ্ঘভি আজ বলেছেন, “সিলেক্ট কমিটিতে সমর্থন কোনও ব্ল্যাঙ্ক চেক নয়। বিমা বিলের চূড়ান্ত চেহারা দেখেই কংগ্রেস সিদ্ধান্ত নেবে রাজ্যসভায় সেটিকে সমর্থন করা হবে কি না।”
এই অনিশ্চতা উজিয়েই চলতি অধিবেশনে বিমা বিল পাশ করাতে বদ্ধপরিকর মোদী-জেটলি। উপদেষ্টা সংস্থা কেপিএমজি-র হিসেব, বিমায় বিদেশি লগ্নির সীমা ২৬% থেকে ৪৯% হলে জীবনবিমা, স্বাস্থ্যবিমা ও সাধারণ বিমা ক্ষেত্রে ২০-২৫ হাজার কোটি টাকার বিদেশি পুঁজি আসতে পারে। শুধু জীবনবিমাতেই অঙ্কটা হতে পারে প্রায় ৮ হাজার কোটি টাকা। যদিও এক কেন্দ্রীয় মন্ত্রীর কথায়, “কত মিলিয়ন ডলার আসবে, তার থেকেও গুরুত্বপূর্ণ হল মোদী সরকার যে শুধুই কথা বলে না, সংস্কারের কাজ করে দেখাতে পারে, সেটাই প্রমাণ হবে।”
ব্যাঙ্কে আরও বেসরকারিকরণে সায়
ব্যাঙ্কিং শিল্পের সংস্কারে ঢালাও বিলগ্নিকরণের পক্ষে রায় দিল কেন্দ্রীয় মন্ত্রিসভা। লক্ষ্য রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাঙ্কের সামনে বাজার থেকে বাড়তি মূলধন সংগ্রহের পথ খুলে দেওয়া। ফলে রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাঙ্কগুলিতে ৫২% শেয়ার সরকারের হাতে থাকলেই চলবে, বাকি তারা দফায় দফায় বাজারে বিক্রি করতে পারবে বলে আজ মন্ত্রিসভার বৈঠকে সিদ্ধান্ত হয়েছে। বৈঠকের পরে সরকারি বিবৃতিতে জানানো হয়, রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাঙ্কগুলির বিপুল পরিমাণ মূলধন প্রয়োজন। বাজেট বরাদ্দ থেকে তা জোগানো সম্ভব নয়। তহবিল সংগ্রহের জন্যই শেয়ার বিক্রির পথে হাঁটতে হবে রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যঙ্ককে।” এই সিদ্ধান্তের সূত্রে ১.৬০ লক্ষ কোটি টাকা পর্যন্ত হাতে আসতে পারে ব্যাঙ্কগুলির। এই মুহূর্তে ২২টি রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাঙ্কের সিংহভাগ শেয়ার কেন্দ্রের হাতে আছে। বাকি ৫টি সরকারি ব্যাঙ্কের মালিকানা এসবিআই ও শাখাগুলির হাতে।