পালাবদলের পরেই জঙ্গি হানা, হত ২ জওয়ান

নয়াদিল্লিতে পালাবদলের তিন দিনের মধ্যেই জম্মু-কাশ্মীরে হামলা চালাল পাকিস্তান। প্রচারে সন্ত্রাস সম্পর্কে কড়া মনোভাব নেওয়ার কথা বলেছিলেন ভাবী প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী। তাই নয়া সরকারের মনোভাব বুঝতে পাক মদতপুষ্ট জঙ্গিরা হামলা চালাতে পারে বলে সতর্ক করেছিলেন গোয়েন্দারা। এখনও প্রধানমন্ত্রী হিসেবে দায়িত্ব নেননি মোদী। কিন্তু জম্মু-কাশ্মীরে এ দিনের হামলা দিয়ে পাক সেনা ও জঙ্গিরা জল মাপার কাজ শুরু করে দিল বলে মনে করা হচ্ছে।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

নয়াদিল্লি ও শ্রীনগর শেষ আপডেট: ২০ মে ২০১৪ ০৩:২৩
Share:

তৎপর ভারতীয় সেনারা। সোমবার বদগাম জেলার চাদুরায়। ছবি: এএফপি

নয়াদিল্লিতে পালাবদলের তিন দিনের মধ্যেই জম্মু-কাশ্মীরে হামলা চালাল পাকিস্তান। প্রচারে সন্ত্রাস সম্পর্কে কড়া মনোভাব নেওয়ার কথা বলেছিলেন ভাবী প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী। তাই নয়া সরকারের মনোভাব বুঝতে পাক মদতপুষ্ট জঙ্গিরা হামলা চালাতে পারে বলে সতর্ক করেছিলেন গোয়েন্দারা।

Advertisement

এখনও প্রধানমন্ত্রী হিসেবে দায়িত্ব নেননি মোদী। কিন্তু জম্মু-কাশ্মীরে এ দিনের হামলা দিয়ে পাক সেনা ও জঙ্গিরা জল মাপার কাজ শুরু করে দিল বলে মনে করা হচ্ছে।

গত কাল আখনুরে নিয়ন্ত্রণরেখার কাছে টহল দিচ্ছিল সেনার একটি দল। হঠাৎ মাইন বিস্ফোরণের মুখে পড়ে তারা। শুরু হয় গুলিবর্ষণও। ভারতীয় জওয়ানরা পাল্টা গুলিবর্ষণ শুরু করলে হামলাকারীরা পালায় বলে জানিয়েছেন সেনা মুখপাত্র। তাঁর দাবি, পাক সেনার বর্ডার অ্যাকশন টিমই (ব্যাট) এই হামলা চালিয়েছে। এই ধরনের দলে পাক জওয়ানদের পাশাপাশি থাকে জঙ্গিরা। গত বছর এই ধরনের একটি দল এসেই এক ভারতীয় জওয়ানের মুণ্ড কেটে নিয়ে যায়।

Advertisement

সেনার দাবি, আখনুরে একটি ব্যাট দল নিয়ন্ত্রণরেখা পেরিয়ে হামলা চালিয়েছে। ওই ঘটনায় মরাঠা লাইট ইনফ্যান্ট্রি রেজিমেন্টের ভিখালে উত্তম বালু নামে এক জওয়ান নিহত হয়েছেন। আহত হয়েছেন ৪ ও ২ নং ইঞ্জিনিয়ার্স রেজিমেন্টের বিনোদ কুমার ও আমূল কুমার। তাঁদের উধমপুরের সামরিক হাসপাতালে নিয়ে আসা হয়েছে। পরে নাথু টিব্বা এলাকাতেও সংঘর্ষবিরতি ভেঙে গুলিবর্ষণ করে পাক সেনা।

বরফ গলে যাওয়ায় এই সময়েই নিয়ন্ত্রণরেখা পেরোনোর বেশি চেষ্টা করে পাক মদতপুষ্ট জঙ্গিরা। তাদের সাহায্য করতেই পাকিস্তান হামলা চালাচ্ছে বলে দাবি সেনার। গত কালের ঘটনার পরে আরও সতর্ক হয়ে যায় নিরাপত্তাবাহিনী। আজ বদগাম জেলায় চাদুরা এলাকার কাইজারমূলায় দু’তিন জন জঙ্গি আত্মগোপন করে থাকার খবর পায় তারা। দুপুরে ওই এলাকার একটি বাড়ি ঘিরে ফেলে রাষ্ট্রীয় রাইফেলস ও জম্মু-কাশ্মীর পুলিশ। সঙ্গে সঙ্গে গুলি চালায় জঙ্গিরা। তাতে মুস্তাক আহমেদ মির নামে টেরিটোরিয়াল আর্মির এক জওয়ান নিহত হন। আহত হন এস জোগর, সন্দীপ কুমার ও তিরথ কুমার নামে তিন জওয়ান। জওয়ানরা পাল্টা গুলি চালালেও জঙ্গিরা পালিয়েছে বলে পুলিশ সূত্রে খবর।

সম্প্রতি সম্ভাব্য জঙ্গি হানা নিয়ে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রককে সতর্ক করেছিল মার্কিন গোয়েন্দা সংস্থা এফবিআই। স্বরাষ্ট্র মন্ত্রক সূত্রে খবর, মোদী প্রধানমন্ত্রীর গদিতে বসার আগেই সন্ত্রাসবাদীদের খতম তালিকায় উঠে এসেছেন। প্রধানমন্ত্রী হওয়ার পরে স্বাভাবিক ভাবেই তাঁকে ও তাঁর সরকারকে যতটা সম্ভব বিপাকে ফেলার চেষ্টা চলবে। তিনি প্রচারে সন্ত্রাসবাদের বিরুদ্ধে কঠোর নীতির কথা বলেছিলেন। পাক গুপ্তচর সংস্থা আইএসআই ও তার মদতপুষ্ট জঙ্গি সংগঠনগুলি তাই প্রথমে জল মাপতে চাইবে। নাশকতার ক্ষেত্রে নতুন সরকার কতখানি কড়া হতে পারে, তা বুঝতে চাইবে তারা।

স্বরাষ্ট্র মন্ত্রকের কর্তারা জানিয়েছেন, এখন ভারতে প্রশিক্ষিত জঙ্গিদের দিয়েই নাশকতার কাজ করাতে চায় আইএসআই। তাতে পাকিস্তানি মদত চাপা দেওয়ার কাজটি সহজ হয়। সেই কারণেই তৈরি হয়েছিল ইন্ডিয়ান মুজাহিদিন। কিন্তু, নাশকতার ছক তৈরির কাজটি করে পাকিস্তান থেকে এসে গা ঢাকা দিয়ে থাকা জঙ্গি নেতারাই। গোয়েন্দারা জানিয়েছিলেন, দিল্লি, মুম্বই বা দক্ষিণ ভারতের কোনও শহরে হামলা হতে পারে। কেবল পাকিস্তানি নয়, তাইল্যান্ডের জঙ্গি সংগঠনও মোদী জমানায় নাশকতা করতে পারে বলে জানতে পেরেছে কেন্দ্রীয় গোয়েন্দা সংস্থা। তারা মুজাহিদিন বা দক্ষিণ ভারতের জঙ্গি সংগঠন আল-উম্মাহের সাহায্য নিতে পারে।

পাশাপাশি দেশের নানা অংশে সাম্প্রদায়িক উত্তেজনা তৈরির চেষ্টা হতে পারে বলেও সতর্ক করেছিল এফবিআই। সম্প্রতি অসমের বড়োভূমিতে গোষ্ঠী সংঘর্ষ হয়। পরে উত্তরপ্রদেশের মেরঠ ও অন্ধ্রের হায়দরাবাদেও তার পুনরাবৃত্তি হয়েছে। রাজ্যগুলিকেও এই বিষয়ে সতর্ক করেছিল স্বরাষ্ট্র মন্ত্রক।

আজ ভাবী প্রধানমন্ত্রী মোদীর সঙ্গে দেখা করেন স্বরাষ্ট্রসচিব অনিল গোস্বামী। তিনি জম্মু-কাশ্মীর ও মাওবাদী উপদ্রুত রাজ্যগুলির পরিস্থিতি নিয়ে মোদীর সঙ্গে কথা বলেছেন বলে মন্ত্রক সূত্রে খবর।

আজ কূটনৈতিক স্তরেও কাশ্মীর প্রসঙ্গ তুলেছে পাকিস্তান। দিল্লিতে পাক হাইকমিশনার আব্দুল বাসিতের কথায়, “নয়া সরকার প্রথম ৪-৫ মাস কী ভাবে চলে তা গুরুত্বপূর্ণ। তাতেই দ্বিপাক্ষিক সম্পর্কের দিশা পাওয়া যাবে। কাশ্মীরের মতো বিষয় নিয়ে আলোচনা এড়িয়ে যাওয়া উচিত নয়।”

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement