প্রত্যাশার চাপে ফেলতে বিদ্রুপ মোদীকে, মন্দির বানিয়ে দেখান

হারের ধাক্কায় গত ক’দিন রা কাড়তে পারেনি কংগ্রেস। আর আজ গুজরাত বিধানসভা থেকে নরেন্দ্র মোদীর বিদায়ের দিনে তাঁকে তীব্র ভাবে বিঁধলেন রাজ্যের বিরোধী দলনেতা, তথা কংগ্রেসের শঙ্কর সিন বাঘেলা। বললেন “সরকারের শরিক-নির্ভরতার কারণে অটলবিহারী বাজপেয়ীকে রাম মন্দির গড়ার প্রশ্নে আপস করতে হয়েছিল।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

নয়াদিল্লি শেষ আপডেট: ২২ মে ২০১৪ ০৩:৩২
Share:

সৌজন্যের আলিঙ্গন। এর পরেই মোদীকে বিঁধতে শুরু করেন কংগ্রসের শঙ্করসিন বাঘেলা। ছবি: পিটিআই।

হারের ধাক্কায় গত ক’দিন রা কাড়তে পারেনি কংগ্রেস। আর আজ গুজরাত বিধানসভা থেকে নরেন্দ্র মোদীর বিদায়ের দিনে তাঁকে তীব্র ভাবে বিঁধলেন রাজ্যের বিরোধী দলনেতা, তথা কংগ্রেসের শঙ্কর সিন বাঘেলা। বললেন “সরকারের শরিক-নির্ভরতার কারণে অটলবিহারী বাজপেয়ীকে রাম মন্দির গড়ার প্রশ্নে আপস করতে হয়েছিল। এখন তো লোকসভায় বিজেপির একক গরিষ্ঠতা রয়েছে। এ বার আপনি রাম মন্দির নির্মাণ করুন।” এ ছাড়া কাশ্মীরি পণ্ডিতদের ভূস্বর্গে ফেরানো, দাউদ ইব্রাহিমকে ভারতে আনা ও অভিন্ন দেওয়ানি বিধি রূপায়ণের মতো কাজগুলিও এ বার যে তাঁকে করে দেখাতে হবে, সে কথাও মনে করিয়ে দেন বাঘেলা।

Advertisement

প্রশ্ন উঠেছে, সৌজন্য দেখানোর দিনে কেন এমন ছন্দপতন? বাঘেলা নিজেও এক সময় ছিলেন বিজেপিতে এবং মুখ্যমন্ত্রী পদে মোদীর পূর্বসূরি। তাঁর শিকড় ছিল আরএসএসে। পরে মতান্তরের কারণে, নব্বইয়ের দশকের শেষ দিকে কংগ্রেসে যোগ দেন। তাই এত দিন চেপে রাখা ব্যক্তিগত তিক্ততাই কি শেষ দিনে উগরে দিলেন তিনি? নাকি কংগ্রেসের ভয়াবহ হারের জ্বালা মেটাতেই এমন বিদ্রুপ-কটাক্ষ? বিজেপি-কংগ্রেস উভয় শিবিরের একাংশ নেতা কিন্তু একে নিছক জ্বালা মেটানো বলে মানতে নারাজ। এর পিছনে সুনির্দিষ্ট রাজনৈতিক লক্ষ্য রয়েছে বলে মনে করছেন তাঁরা।

এটা লক্ষণীয় যে গোহারা কংগ্রেসের জাতীয় স্তরের কোনও নেতার কাছ থেকে নয়, মোদীর বিরুদ্ধে এই প্রথম তীর্যক মন্তব্য উড়ে এল রাজ্য স্তরের এক নেতার কাছ থেকে। বিধানসভা থেকে বিদায়ের দিনে মোদী কিন্তু সৌজন্য দেখিয়ে বাঘেলাকে জড়িয়েও ধরেন। কিন্তু তার পরই তারিয়ে-তারিয়ে মোদীকে কটাক্ষ করতে শুরু করেন শঙ্কর বাপু।

Advertisement

রাজনৈতিক পর্যবেক্ষকদের মতে, বিজেপির বিপুল সাফল্যের নেপথ্যে এ বার সঙ্ঘ পরিবার ও বিশ্ব হিন্দু পরিষদের বড় ভূমিকা রয়েছে। বিজেপির মধ্যে কট্টরপন্থীদের একটা বড় অংশের আশা রয়েছে, এ বার রাম মন্দির নির্মাণ করবেন মোদী। কৌশলে সেই আবেগ উস্কে মোদীকে বিপাকে ফেলতে চাইছেন বাঘেলা। কারণ, কট্টরপন্থীরা মন্দির নিয়ে চাপ বাড়ালে সমস্যায় পড়বেন মোদী।

কংগ্রেস কেন এ ভাবে মন্দির আবেগ উস্কে দিচ্ছে এই প্রশ্নের মুখে দলের কেন্দ্রীয় নেতৃত্ব কিন্তু বাঘেলার মন্তব্য থেকে নিজেদের দূরে রাখতে চেয়েছে। দলের মুখপাত্র অভিষেক মনু সিঙ্ঘভি বলেন, “বাঘেলা কী বলেছেন জানি না। তবে বাবরি মসজিদ প্রসঙ্গে কংগ্রেস ওয়ার্কিং কমিটির অবস্থান বদলায়নি। আদালতের মাধ্যমেই নিষ্পত্তির পক্ষে কংগ্রেস।” বিজেপির সন্দেহ, এটাও কংগ্রেস কৌশল। দলীয় ভাবে মন্দির প্রসঙ্গে মন্তব্য না করে বাঘেলার মতো রাজ্য স্তরের নেতাদের দিয়ে মোদীর অস্বস্তি বাড়ানোর চেষ্টা চালানো। এবং সে কারণেই মোদীর সম্মানে আয়োজিত বক্তৃতা দিতে গিয়ে গোধরা-প্রসঙ্গও টেনে আনেন বাঘেলা। বলেন, “দেশের প্রধানমন্ত্রী হয়েছেন এমন দু’জন গুজরাতির জীবনে গোধরার বড় ভূমিকা রয়েছে। এক, মোরারজি দেশাই। গোধরার ডেপুটি কালেক্টর ছিলেন তিনি। দাঙ্গা সামলাতে গিয়ে পক্ষপাত করেছিলেন বলে অভিযোগ ওঠার পরে তিনি চাকরি ছেড়ে রাজনীতিতে যোগ দেন।” এর পরেই মোদীর দিকে তাকিয়ে বাঘেলার মন্তব্য, “আপনিও গোধরায় আরএসএসের প্রচারক ছিলেন। তার পর ২০০২ সালে কী হয়েছিল, তা আর আজ বলছি না।” মোদীকে ঘিরে প্রত্যাশার চাপ বাড়াতেই ভোট-প্রচারে তিনি যে সব প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন, সেগুলি করে দেখানোর চ্যালেঞ্জ ছোড়েন বাঘেলা। মোদী বলেছিলেন, ক্ষমতায় এলে ৬০ দিনে মূল্যবৃদ্ধি পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনবেন। ২৫ শতাংশ কমিয়ে দেবেন দাম। তা মনে করিয়ে দিয়ে বাঘেলা বলেন, “এক বছর পর এ বিষয়ে আপনাকে প্রশ্ন করব।” রামদেবের বিরুদ্ধে আর্থিক অনিয়ম নিয়ে গুচ্ছের অভিযোগ রয়েছে। তা খুঁচিয়ে তুলে বাঘেলার পরামর্শ, “কালো টাকা উদ্ধারে যোগগুরু রামদেবের নেতৃত্বে একটি কমিটি গড়তে পারেন। কারণ এ বিষয়টা উনি ভাল বোঝেন।” বাঘেলার যাবতীয় শ্লেষ গায়ে না মাখলেও তাঁর একটি দাবির আজ জবাব দেন মোদী। দিল্লিতে গিয়ে গুজরাতিদের যাতে অসুবিধেয় পড়তে না হয়, সে জন্য গুজরাত ভবনে একটি কাউন্টার করার কথা বলেছিলেন বাঘেলা। মোদীর জবাব, “আলাদা কাউন্টার লাগবে না। গুজরাতিদের জন্য আমার মনেই সেটা রয়েছে।”

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement